ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পর্ব-২

সরকারি খরচে অধিক বেতনে কর্মী নিচ্ছে জর্ডান

প্রকাশিত : ১৮:২৩, ৮ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৫০, ১৯ মার্চ ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

দেখতে দেখতে তিন বছর; আলদুলেল থেকে ইরবিদ হয়ে আল-হাসানে এসেছিলেন গলাচিপার জোবেদা আক্তার। পটুয়াখালির মাঝেরচর গলিয়ে জর্ডান যাওয়া জোবেদা এখন দিনবদলের স্বপ্নে বিভোর। সবমিলে মাসে আয় ৫৮ হাজার। আল হাসান ইপিজেডের অতিব্যস্ত মেয়েটিকে এলাকার লোকজন ডাকেন জর্ডানি জোবেদা নামে। কষ্টের টাকায় এলাকায় কিনেছেন জমি, গড়েছেন বাড়ি। বাবা-মা’কে উপহার দিয়েছেন স্বপ্নের ঠিকানা।

জর্ডানের পোষাকশিল্পের জন্য বিখ্যাত আল-হাসান। সেখানকার ইপিজেড এলাকা। ২০০৩ সালে এখানেই ক্লাসিক ফ্যাশনস এন্ড এ্যাপারেলসের যাত্রা শুরু। প্রথমে ৬শ’ কর্মী নিয়ে ক্লাসিক-১ এর পথচলা। সেই অভিযাত্রায় বাঙালি ছেলে-মেয়েরাই ছিল প্রথম ও প্রধান। আসে সাফল্য, বাড়ে রফতানি। সেই থেকে বাঙালিদের কদরও চড়া হতে থাকে প্রতিষ্ঠানের মালিক স্যানাল কুমারের কাছে। ভারতের কেরালার নাগরিক স্যানালের বাংলাদেশের প্রতি রয়েছে প্রবলতর আবেগ আর ভালোবাসা। ক্লাসিকের করপোরেট হাউজে অনেক বায়ারের ভিঁড়ে স্যানাল কথা বলেন একুশে টিভির সঙ্গে।

তার ভাষায়, বাঙালি কর্মীরাই আমার ইশ্বর। ওরাই আমার সন্তান। ওরাই শ্রদ্ধার সঙ্গে কাজ করে আমার ভবিষ্যত বাতলে দিয়েছে। ক্লাসিকের এখন ইউনিটের সংখ্যা ১১টি। এর নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশি পোষাককর্মীদের নিপূণ হাতের ছোঁয়া-বললেন ৬৩ বছরে পা দেয়া তারুণ্যদীপ্ত স্যানাল কুমার।

শুরুতে বাংলাদেশি ওয়ার্কারের সংখ্যা ছিল ৯০%। এখন ৯৩ শতাংশ। শুধু আল হাসান নয়। জর্ডানের আকাবা, দোসাইদা, বসিলা, আজলোনের বিশাল ইউনিটেও বাংলাদেশিদের জয়জয়কার। শীঘ্রই নতুন ইউনিট হবে মাফরাক আর ইতিহাস ঐতিহ্যের পেট্রা এলাকায়। সেখানেও উচ্চ থেকে অপারেটর পদে পাধান্য পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

বৃহত্তর বরিশাল থেকে যেসব মেয়েরা জোবেদার সঙ্গে এসেছিলেন তাদের অনেকেই অপারেটর পদের ঝক্কি পেরিয়ে সুপারভাইজার পদে উন্নিত। এখন ক্লাসিকে সুপারভাইজারের সংখ্যা ১৩৭৬ জন। ফ্লোর ইনচার্জ আছে বেশ ক’জন। ইউনিট ম্যানেজার কিংবা গ্রূপ ম্যানেজারও আছেন বাংলাদেশি।

কোম্পানির কর্তাব্যক্তি আর বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সেখানকার বেতনকাঠামো। থাকা-খাওয়া, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া-আসার বিমান ভাড়া সবই বহন করে নির্দিষ্ট কোম্পানি। শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। বাংলাদেশে ফিরে নির্দ্বিধায় পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে বেশ ক’জনা। রেজাল্টও আশাতীত। আবার ফিরে গেছেন আল-হাসানের ছাওয়ায়। কর্মীদের যারা গান শিখতে চান তাদের জন্য আছেন বাঙালি শিক্ষক-শিক্ষিকা। আবার মুম্বাই থেকে আসা বিশিষ্ট আর্টিস্টরাও আছেন নাচ শেখানোর জন্য। বছরজুড়েই নানান ফেস্টিভ্যাল, আনন্দবিনোদন।

হেলপারদের প্রাথমিক বেতন সেখানে ২২হাজার ৭ শত। সঙ্গে ইনসেনটিভ এবং প্রোডাকসন বোনাস। তবে প্রতিদিনই দু’ঘন্টা করে ওভারটাইম আছে। তিন বছর শেষ হলে দক্ষ কর্মীদের জন্য রয়েছে স্যোশাল সিকিউরিটি। যাতে দক্ষদের জন্য যুক্ত হবে ১ লাখ ২৮হাজার ৪শ’ টাকা। জর্ডান সরকার আর সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এটি বহন করবে। তবে যারা বাংলাদেশ থেকে অতিদক্ষ হয়ে সেখানে যান তাদের কথা অবশ্য একেবারেই আলাদা।

অপারেটর পাচ্ছেন ২৪/২৫ হাজার টাকা-এমনও ক’জনকে পাওয়া গেল ক্লাসিকের ৮ নম্বর ইউনিটে। ৩ বছর পর হবে ৩০ হাজার। সুপারভাইজার প্রাথমিকে পাচ্ছেন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার। আর তিন বছর পার হলেই ৪৪/৪৫ হাজার টাকা। ক্লাসিক ফ্যাশনসের ওয়েলফেয়ার সেকশনের ডেপুটি হেড সালমা আক্তার নিপা অবশ্য কাগজপত্র ঘেঁটে এমন তথ্যই দিলেন। ফ্লোর ইনচার্জ শুরুতে ৩৯/৪০ হাজার পান। তিন বছর অতিক্রান্ত হলেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ এর কাছাকাছি। কর্তৃপক্ষ খুশি হলে অনায়াসেই লাখ ছাড়িয়ে যায় ৪/৫ বছরের মাথায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শুধু ক্লাসিক ফ্যাশনসেই বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে ২২ হাজারের অধিক। কেউ দেশে ফিরছে, আবার কেউ জয়েন করছে-বছর জুড়েই এমন এলাহি কাণ্ড। ক্লাসিকের ওয়েলফেয়ারের কর্তাব্যক্তি সালমা নিপা বলেন, যারা এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে জর্ডানে যেতে চান তাদেরকে শ্রীজিৎ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই হবে। তাছাড়া ওয়েবসাইটে ঢুকেও বিস্তারিত জানতে পারবে যেকোন বাংলাদেশি। গ্যাপ, নাইকি, ওয়ালমার্ট, এডিডাস, এইচ এন্ড এম কিংবা বিখ্যাত আর সব জায়ান্টদের কাজের চাপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতোটাই বেশি যে, ক্লাসিকের ১১টি ইউনিট আর সামাল দিতে পারছে না। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কিংবা অদক্ষ দুই ক্যাটাগরির কর্মী নিতে মরিয়া জর্ডানি কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অদক্ষ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি বিভাগ করেছে ক্লাসিক গ্রুপ। যেখানে একেবারেই কোন কাজ না পারাদের ট্রেনিং দেয়া হয়। শুধু বোয়েসেলের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি হলেই সেখানে যাবার বাকি ব্যবস্থা।

(চলমান)

এসি

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি