ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সরকারি চাকরিতে ৯৬ শতাংশ পেশাখাত উপেক্ষিত

ফারজানা শোভা

প্রকাশিত : ১২:৩১, ৩ আগস্ট ২০২৪

আকর্ষণীয় বেতনভাতার পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি চাকরি। বাংলাদেশে প্রতিবছর যে সংখ্যক স্নাতক তৈরি হচ্ছেন সরকারি চাকরির পরিমাণ তার ৪ শতাংশেরও কম। বাকি ছিয়ানব্বই শতাংশ পেশাখাত উপেক্ষিত থাকার পেছনে সামাজিক শ্রেণিবিন্যাশ ও অনিয়মকে দায়ী করছেন গবেষকরা। 

সরকারি চাকরিকে কেন সোনার হরিণ ভাবা হয়? জানতে চাইলে তরুণরা বললেন, এ চাকরিতে সম্মান আর ক্ষমতার কথা। বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস চাকরি সর্বোচ্চ লোভনীয় হওয়ায় প্রতিযোগিতাও সর্বোচ্চ। 

সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার বিজ্ঞানের মত বিশেষায়িত বিষয় নিয়ে স্নাতোকোত্তর তরুণরাও আগ্রহী সরকারি কর্মকমিশনে! আক্ষেপ খোদ প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে। 

গবেষকরা বলছেন, জনগণের সেবক হওয়ার কথা থাকলেও ঔপনিবেশিক ধারার অনুকরণে প্রভাব ও ক্ষমতার চর্চায় সরকারি চাকরিই সবার আগে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, “ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি এনজয় এবং এই ধরনের চাকরি বা ক্যাডারগুলোতে তারা সরাসরি জনগণের সঙ্গে বিভিন্ন কাজে সম্পর্কিত থাকে, সেখানে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ থাকে। সুতরাং সেই অর্থে তারা এখানে আকৃষ্ট হয়। তখনই এই সার্ভিসটিকে অপব্যবহার করার সুযোগ থাকে। এই অপব্যবহারের ফলে অর্থনৈতিকভাবে ও অন্যান্য সব ক্ষেত্রে লাভবান হয়ে থাকেন। এ কারণে ৪-৫ বছর নষ্ট নয় তারা মনে করছে এটা বিনিয়োগ,  সুদে-আসলে উঠিয়ে নিতে পারবে।”

৬ষ্ঠ জনশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম মানুষ সরকারি চাকরির সুযোগ পায়। আর বাকি প্রত্যাশিরা অপেক্ষায় থেকে অপচয় করছেন মেধা, অর্থ ও কর্মশক্তি। 

অর্থনীতিবিদ ও পিকেএসএফ সাবেক সভাপতি ড. খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, “সরকারি চাকরি সেখানে চেয়ার আছে, সেই চেয়ারের সঙ্গে ক্ষমতা আছে, ক্ষমতার সঙ্গে আরও অন্যান্য প্রাপ্তি ঘটতে পারে। তাই চোখটা হচ্ছে ওখানে। তাই সবাই চেষ্টা করে ডাক্তার হয়ে প্রশাসনিক কাজে যেতে চায়, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যেতে চায়, অর্থনীতিবিদ হয়ে যেতে চায়। তবে অন্য যে পেশা সেই পেশায় আগ্রহ নেই।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকার এই ধারা বেসরকারি খাতের ব্যর্থতার প্রমাণ। এক দশক ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে থাকায় নতুন কর্মসংস্থানের গতি আসছে না।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. জুলফিকার আলী বলেন, “বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের চিন্তা করা দরকার। বিশেষজ্ঞেদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের জন্য এডুকেশন, জব ক্রিয়েশন বিষয়ে কি ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তরুণদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। উচ্চ শিক্ষিতদের কাজের সংস্থান করতে হলে গতি আনতে হবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি