ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪

সাঁওতালপল্লীতে হামলার ঘটনায় ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৬, ২৮ জুলাই ২০১৯

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে লুটপাট,অগ্নিসংযোগ এবং হামলার ঘটনায় ৯০জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। অভিযোগদের মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, চিনিকলের কর্মকর্তাসহও রয়েছে।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্রের আদালতে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পিবিআইয়ের গাইবান্ধা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামির তালিকায় গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ, ইউপি সদস্য শাহ আলম ও আইয়ুব আলী এবং রংপুর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) নাজমুল হুদাসহ ৯০ জনের নাম রয়েছে বলে জানান আবদুল হাই।

তিনি বলেন, আসামিদের মধ্যে ২৫ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া সাঁওতাল পল্লী থেকে লুট হওয়া কিছু ঢেউটিন ও মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে।

কিন্তু ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গ করা হচ্ছে অভিযোগ করে দখল ফিরে পেতে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তারা সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে।

ওই বছর ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে চারজন সাঁওতাল তাতে আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদের ঘটনায় মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মরমুর ছেলে স্বপন মুরমু ওই বছর ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া ২৬ নভেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল টমাস হেমব্রম আরেকটি মামলা করেন, যেখানে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।

ফেইসবুকে আসা ভিডিওর স্ক্রিনশট ফেইসবুকে আসা ভিডিওর স্ক্রিনশট ওই দুই মামলার তদন্ত একসঙ্গে করে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হল।

সাঁওতালপল্লীতে তাণ্ডবের ওই ঘটনার প্রায় এক মাস পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা একটি ভিডিওর ভিত্তিতে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সাঁওতাল পল্লীর ভেতরে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়ছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ঘরে লাথি মারছেন এবং পরে এক পুলিশ সদস্য ওই ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ পোশাকে থাকা আরেকজন আগুন অন্য ঘরে ছড়িয়ে দিতেও সহায়তা করেন। ভিডিওর একটি অংশে আরও কয়েকটি ঘরে আগুন দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট, একজনের পোশাকের পিঠে ডিবি, আরেকজনের পুলিশ লেখা ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সাঁওতালদের যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে তা আইনি প্রক্রিয়ায় হয়নি। হাই কোর্টের আদেশে গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহিদুল্লাহ যে প্রতিবেদন দেন, সেখানে বলা হয়- “সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানোর ঘটনার জন্য স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি এবং ওই ঘটনার সময়ে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য দায়ী।”

পরে পুলিশের তদন্তে আগুন দেওয়ার জন্য গাইবান্ধার এসআই মাহবুব ও কনস্টেবল সাজ্জাদকে চিহ্নিত করা হলে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

টিআর/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি