ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ডিসেম্বরের রণাঙ্গন

সাঁড়াশি আক্রমণে কোনঠাসা পাকিস্তানি বাহিনী

শেখ সাদী

প্রকাশিত : ০৮:২২, ২ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ০৯:২৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

২৫শে মার্চ রাত ১.৩০ মিনিট, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান নেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত

২৫শে মার্চ রাত ১.৩০ মিনিট, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান নেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত

দুই

বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায়ের খসড়া তৈরি করছে ইয়াহিয়া খান। খবরটি অত্যন্ত গোপনীয় হলেও ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে পৌঁছে যায় দিল্লী। ‘র’ কার্যালয়ে এখন চলছে সেটির যাচাই-বাছাই। দুই ডিসেম্বরের দুপুরে দিল্লীর কপালে ভাঁজ।

বছরটা ১৯৭১। শীত নেমেছে প্রকৃতির নিয়ম মেনে। তবে এই শীত কোন পাত্তাই পাচ্ছে না মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণে। বীরবিক্রমে লড়াই চলছে। এগিয়ে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর, প্রতিদিন মার খেয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে পাকিস্তানি সেনা। পাল্টে যাচ্ছে যুদ্ধের দৃশ্যপট।

নভেম্বর শুরু থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি সেনার লড়াইটা আরো তীব্রতর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী। পাকিস্তান অভিযোগ জানায়, ‘সীমান্তের সাতটি স্থানে যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলেছে ভারত, সেখান থেকে আঘাত করা হচ্ছে।’

যুদ্ধ চলছে সীমান্ত এলাকা নেত্রকোনা বিরিশিরি-র বিজয়পুর। গেরিলা আক্রমণে পাঁচজন পাকিস্তানি সেনা খতম। 

হঠাৎ হামলা চালানো হলো দিনাজপুরে। কোন প্রস্তুতি নিতেই পারেনি পাকিস্তানি সৈন্য। প্রবল আক্রমনে পঞ্চগড় মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যাচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে।

এদিকে ঘোড়াশালে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এসময় বেশ কিছু গোলাবারুদ কব্জা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। যা পকিস্তানি সেনা হত্যায় ব্যবহার হয়।  

আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও পাকবাহিনী তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে। আক্রমণ সামলে নিয়ে শত্রুশিবিরে প্রবল আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধা। দিশেহারা পাকিস্তানি সৈন্যদল আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়।
শত্রুমুক্তির যুদ্ধ চলছে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে। 

চলছে গেরিলা আক্রমণ।

ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার বেশ কিছু জায়গা আজ উড়লো স্বাধীন দেশের পতাকা। 

কাঁঠালি গ্রামে আক্রমণ করলে রুখে দেয় সেকশন কামান্ডার গিয়াসউদ্দিন এবং সেকশন কমান্ডার আবদুল ওয়াহেদসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। আক্রমণে তিনজন পাকিস্তানি সেনা এবং সাতজন রাজাকার খতম। 

গুলি চলছে আখাউড়ায়। রেল স্টেশনে সম্মুখযুদ্ধ। 

আজ ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনা। 

আক্রান্ত ঢাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় রামপুরা ও মালিবাগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন। রাজধানী ঢাকাকে দখলমুক্ত করতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা। 

ঢাকা থেকে বিবিসিতে প্রতিবেদন পাঠালেন সংবাদদাতা নিজামউদ্দিন আহমদ। জানালেন, ‘২৪ ঘণ্টায় ঢাকার পাঁচটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।’রামপুরা ও মালিবাগে বিস্ফোরণে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবরটিসহ নিজামউদ্দিন জানিয়ে রাখলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানে জাতীয় সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে দাবি করেছেন।

সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী, অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে মনোনীত করা হয়।’ তার মতে, তবেই নাকি প্রদেশের মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া যাবে।

শেখ সাদীঃ লেখক ও গবেষক


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি