ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

‘সাংবাদিকতায় সাহসী ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত এবিএম মূসা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৩৫, ৪ মার্চ ২০১৮

এবিএম মূসা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে সহসী ও মানবিকতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত। এ পেশায় সত্য কথা বলতে অনেকেই ভয় পান, কিন্তু তিনি ভয় পাননি। সাহসিকতার পাশাপাশি তার কথা, কাজ ও লেখনীতে মানবিক দিকও ফুটে উঠেছিল। তাই তিনি আমাদের চোখে এক অনুকরণীয় সাংবাদিক।

আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্চে এবিএম মূসার ৮৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আজীবন সম্মাননা ও স্মারক বক্তৃতা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এবিএম মূসা সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানীকে আজীবন সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, মূসা ভাই একজন অনুকরণীয় সাংবাদিক। তিনি সাংবাদিকতায় যে সাহস ও মানবিকতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই অনন্য। তিনি বলেন, দেশে গুম খুবই উদ্বেগজনক। এটা সভ্যতা পরিপন্থী। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা কাজ করছেন, আরো কাজ করার আছে। এতে দেশ উপকৃত হবে, দেশের গণতন্ত্র শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াবে।

সমকাল সম্পাদক গোলাম সরোয়ার বলেন, মূসা ভাই, মূসা ভাই-ই। দ্বিতীয় মূসা ভাই আর হবে না। পত্রিকার কাজ শুধু নিছক খবর প্রকাশই নয়, সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার যে বিষয়, এর অঙ্গসজ্জা, মুসা ভাই সে কাজটা করেছেন। মূসা ভাই আমাকে নানা পরামর্শ দিতেন।

গোলাম সরোয়ার বলেন, আমি হাতে কলমে লোহানী ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আপনারা আমাদের পথিকৃৎ।

প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, সাংবাদিকতা যে শুধু পেশা তা নয়, এর একটি মানবিক গুণ আছে; মূসা ভাইয়ের সাংবাদিকতায় তা ফুটে উঠেছিল। মূসা ভাই সাংবাদিক ইউনিয়নকে এক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ মূসা ভাইয়ের ঐক্যবদ্ধ করার যে চেষ্টা তা ব্যর্থ হয়েছে। ইউনিয়ন ভাঙ্গার জন্য আইয়ুব খান চেষ্টা করেছিল, মূসা ভাই তা প্রতিহত করেছিলেন।

বাংলাদেশ অবজারভারের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল রহিম বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে সাংবাদিকদের যে ভূমিকা ছিল, সেখানে মূসা ভাইয়ের কি অবদান তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। আমার মতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ ভাগ কাজ করেছিলেন সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, মূসা ভাইকে আমরা হয়তো ভুলে যাবো, যেমন ভুলে গেছি আকরাম খান ও মানিক মিয়াকে। তাই মূসা ভাইকে যেন না ভুলি সে জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু করা দরকার। তার স্মরণীয় বিশেষ পুরস্কার ও সম্মানোনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, সত্যিই কি আমরা মূসা ভাইয়ের প্রতি সেই সম্মান জানাতে পেরেছি? এই ছোট্ট পরিসরে। তিনি বলেন, সত্য এখন নিখোঁজ হয়ে গেছে। সত্য বলার সাহস সমাজ হারিয়ে ফেলছে। আমরা ভয়ের সংস্কৃতিতে বাস করছি। আমাদের এ ভয় থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ।

রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মূসা ভাইয়ের মতো বলিষ্ঠ ও পরিশ্রমী মানুষ আমি খুবই কম দেখেছি। আমি তার জীবনে সাহসী ভূমিকাটা বেশি দেখেছি। আজ সত্য তুলে ধরার সাহসটা সমাজের জন্য খুবই প্রয়োজন।

সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, তেজোদীপ্ত ও সাহসের সঙ্গে যিনি কথা বলতে পারতেন তিনি এবিএম মূসা। মূসা ভাই শুধু সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন ব্যক্তিও ছিলেন। আমার ও তার বাড়ী একই এলাকায় হওয়ায় তিনি এলাকায় একটি ব্রিজ করার জন্য আমাকে তার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সেদিন আমি বলেছিলাম আমিও চেষ্টা করে দেখবো। তার এ ইচ্ছা থেকে বুঝা যায় তিনি কতটা মানবিক।

অনুষ্ঠানে `নিখোঁজ সংস্কৃতি ও সংবাদ মাধ্যমের সংবেদনশীলতা` শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ পাঠ করেন সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। তিনি বিলেন, ক্রসফায়ারের পর সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে গুম কার্যক্রম। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচিত হওয়ার পর গুম পদ্ধতি চালু হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। দুটিই মানবাধিকারের লঙ্গন, আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মূসা স্মরণে তার বাড়ীতে আগামীতে একটি আইক্যাম্প, বৃদ্ধাশ্রম, পথে পথিকদের জন্য পানির ব্যবস্থা, দুস্থ্য পরিবার ও নির্যাতিত সাংবাদিক ও নারীদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া মূসার স্মরণে প্রতিবছর ২৫ হাজার টাকা করে বৃত্তির ব্যবস্থা করা যায় কীনা তাও ভেবে দেখা হচ্ছে।

প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার সহধর্মিণী সেতারা মূসা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সাংবাদিক কামাল লোহানীর হাতে স্মারক তুলে দেন। এসময় তার দুই মেয়ে মরিয়ম মূসা ও পারভীন সুলতানা ঝুমাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি