ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিশ্ব সমুদ্র দিবসের আলোচনা

সাগরের অমূল্য সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজন মহাপরিকল্পনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩৭, ৮ জুন ২০২০ | আপডেট: ২০:৩৭, ৮ জুন ২০২০

Ekushey Television Ltd.

যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সাগরে থাকা অফুরাণ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সে সম্পদের পরিমাণ ও এর ব্যবহার সম্পর্কেও আমরা জানতে পারছি না। তাই আমাদের এসব অমূল্য সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজন মহাপরিকল্পনা।

৮ জুন (সোমবার) বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষে সাগর সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘সেভ আওয়ার সি’ আয়োজিত ভার্চুয়ার আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় বক্তারা বলেন, সাগরের সাথে সহবস্থান করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। এই সহবস্থানের জন্য প্রয়োজন উদ্ভাবন। উপকূলে দ্বীপ সুরক্ষায় বাঁধ দেয়া কার্যকর কোন সমাধান নয়। বরং ঐ সব অঞ্চলে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান, মাছ থেকে শুরু করে জীবন ধারণের অন্যান্য উপকরণ উদ্ভাবন করতে হবে। সমুদ্রকে ঠেকাতে বাঁধ তৈরিতে যত না অর্থ ব্যয় হয়ে, তার চেয়ে অনেক কম অর্থ ব্যয় হবে এসব উদ্ভাবনে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জীববৈচিত্র্য বিভাগের সদস্য ও সেভ আওয়ার সির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুজ্জামান খান বলেন, এসডিজির ১৪ নম্বর লক্ষ্যতে সাগর ও সমুদ্র অর্থনীতির কথা বলা আছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও সাগরতলে বহু সম্পদ আছে। তবে পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর, বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য, কক্সবাজার সৈকতের অপরিকল্পিত হোটেল মোটেল নির্মাণ করায় সমুদ্রের অভ্যন্তরণে ও সমুদ্র সংলগ্ন এলাকার জীব বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। 

সরকার বিভিন্ন এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করলেও এর দেখভাল হচ্ছে না। ২০২৫ সালের মধ্যে সাগর ও তৎসংলগ্ন ১০ শতাংশ এলাকাকে সংরক্ষিত অঞ্চল করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১ শতাংশ করা হয়েছে। তবে মাছের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ এলাকা সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মৎস অফিসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন। তিনি বলেন, সামুদ্রিক সম্পদ শুধু মাছ নয় এর বাইরেও আরো অনেক সম্পদ আছে।

এসব সম্পদ কোথায়, কী পরিমাণে আছে এবং এগুলোর ব্যবহারই বা কিভাবে হবে, সে লক্ষ্যে গবেষণার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ওসানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (কক্সবাজার) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. শরিফ। এই গবেষণা করতে পারলে সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে বলে তিনি জানান।  বলেন, সম্পদের সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনার বিকল্প নেই।

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, এসডিজিতে লাইফ বিলো ওয়াটারের কথা বলা হলেও আমরা জানি না সমুদ্রের নীচের পরিস্থিতি কী। এজন্য দরকার প্রয়োজনীয় জাহাজ, সরঞ্জাম, গবেষণা, দক্ষ লোকবল ও ডুবুরি। কিন্তু এসবের কিছুই এখনো করা হয়নি উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, সমুদ্রতলের পরিবেশ কতটা ভালো তা নিশ্চিত করে প্রবাল। ওশান এক্সপ্লোরার এসএম আতিকুর রহমান জানান, সেন্টামার্টিন ও তৎসংলগ্ন এলাকার প্রবালের অবস্থা ভালো নেই। অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপ, প্রতিদিন বড় বড় জাহার নোঙ্গর করায় এখনকার পরিবেশ, প্রতিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব) ফোরকান আহমদ বলেন, সেন্টামার্টিনকে সুরক্ষায় পর্যটক যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় অধিবাসীদের কাজে লাগাতে হবে। তবে ওখানকার পর্যটন ব্যবসা হুট করে বন্ধ করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন, জীববৈচিত্র্য গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আল মোজাদ্দেদি আল আফসানি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, সাগরতীরের হোটেল মোটেল থেকে এখন সরাসরি বর্জ্য সাগরে ফেলা হচ্ছে না। তবে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও মালিকরা কথা শুনছে না। স্থানীয় প্রশাসনও খুব একটা সহায়তা করছে বলে তার অভিযোগ। তিনি জানান, ২০১৬ সালের পর কক্সবাজারে নতুন কোন হোটেল মোটেল নির্মাণের অনুমোতি দেয়া হয়নি।

তিনি আরো জানান, সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজারের উন্নয়নে ৬৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে চিহ্নিত করে দিয়েছে সরকার। সাগরের কাছিম, লাল কাঁকড়া, সাগর লতা সংরক্ষণে চারটি জোন ভাগ করা হয়েছে। এসব জোনে বাঁশের বেড়া দেয়া হলেও সম্প্রতি আম্পানে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মেরিন ড্রাইভের পূর্বপাশ বরাবর ১ লাখ গাছ রোপণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান ফোরকান আহমদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক এস কে নাজমুল হুদা জানান, সেন্টমার্টিনের ছেড়া দ্বীপের পরিবেশ সুরক্ষায় তাদের দপ্তর একটি জোন চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে। পাহাড় কাটা বন্ধ ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলের দূষণ বন্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্লাস্টিকের দূষণ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে। এছাড়া জাহাজ গুলো থেকে দূষণ বন্ধে বড় অংকের জরিমানা করা হচ্ছে।

সমুদ্রের পরিবেশকে সুরক্ষা দিয়ে এর সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, অধিকহারে ও অপরিকল্পিত মাছ ধরার ফলে সমুদ্রের মৎস সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে। এটা রোধ করতে হবে। পাশাপাশি সমুদ্র তরঙ্গ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কৌশল রপ্ত করার উপর গুরুত্ব দেন তিনি। পরিবেশ সম্মত প্রযুক্তি বিকাশ প্রতিষ্ঠান গ্রিন টেক এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, পানিতে ভাসমান সৌর প্যানেল স্থাপনে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে তাদের প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর ৮ জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবস পালিত হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলনে দিবসটি পালনের প্রস্তাব করেছিল কানাডা। ২০০৪ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। এবারে দিবসের প্রতিপাদ্য,টেকসই সমুদ্রের জন্য উদ্ভাবন। অর্থাৎ উদ্ভাবনী কর্ম উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ করা।

টিআই/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি