ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

সাদুল্যাপুরে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হাত পাখায় (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের জামালপুর ও রসুলপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে অভাব লেগেই থাকতো। লবণ আনতে যেন পান্তা ফুরায় এমন অবস্থা ছিল এই গ্রামগুলির। ভাগ্য পরিবর্তনে নেমে পড়েছেন তারা হাত পাখা তৈরিতে। হাত পাখা তৈরি করেই ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছেন তারা। এখন অভাবকে বিদায় জানিয়েচেন গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুরের এসব গ্রামের বাসিন্দারা। নারী পুরুষ পাশাপাশি বসে দিনরাত নিপুন হাতের কারুকাজ আর সুই-সুতা দিয়ে তরি করছেন হাত পাখা। বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েক গ্রামের অনেকেই। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে এখানকার মানুষ পাখা তৈরি শুরু করলেও সেখানে রয়েছে বর্ণালী শিল্পকর্মের ছোঁয়া। গ্রামের অনেক পরিবার এখনও হাত পাখার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। আর সেই চাহিদার অনেকটাই পূরণ করছে এ পাখার গ্রাম।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে অন্তত ১১ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে উপজেলার নাম সাদুল্যাপুর। সাদুল্যাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে জামালপুর ইউনিয়নের বুজরুক গ্রাম। পাশে রসুলপুর ইউনিয়নের খামারিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামেও তৈরি হচ্ছে হাত পাখা। সে কারণে মানুষের মুখে মুখে এই গ্রামগুলোর নামের পাশে পরিচিত লাভ করেছে পাখার গ্রাম নামে।

পাখা তৈরিতে পারদর্শী খামারীপাড়া গ্রামের আয়নাল হক, মতিন মিয়া, সালেহা, নয়নতারা, মর্জিনা বেগম, খুশি আকতারসহ অর্ধশত নারী পুরুষ। সবাই পাখা তৈরি করে সংসার চালান ও পাশাপাশি নিজের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ যোগার করেন। পাখার কারিগর নয়নতারা বলেন, হামরা (আমরা) সংসারের সব কাজ করেও পাখা বানাই। পাখা তৈরির পর মহাজনের হাতে তুলে দিয়ে নগদ ট্যাকা নেই। হাত খরচ করি, ট্যাকা জমাই এবং যখন খুশি নিজের মতো খরচ করি। দিনভর পাখা তৈরি করে বিক্রি করে। হাতে সময় থাকে না। সংসারের কাজের সঙ্গেও আমরা পাখা তৈরি করে বাড়তি আয় করছি সংসারে। ভালো চলছে সংসারে।

জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মন্ডল জানান, অভাবের ক্লান্তি ভুলে হাসিমুখে সমান তালে পাখা তৈরি করছেন এ গ্রামের নারী-পুরুষরা। সারাদিন বাঁশকাটা, চাক তৈরি, সুতা  গোছানো, কাপড় কাটা, আবার কেউ সুই দিয়ে সেলাই করে রং বে-রংয়ের ডিজাইন তৈরি করছেন। 

উত্তপ্ত আবহাওয়া ও অতিরিক্ত গরমে বৃদ্ধির কারণে হাত পাখার চাহিদা বেড়েছে। সে অবস্থায় সমানতালে পাখা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

নারী-পুরুষ মিলে প্রতিদিন ১২শ’ থেকে ১৫শ’ পর্যন্ত হাত পাখা তৈরি হয় এ গ্রামে। প্রতিটি পাখা তৈরি করতে সুতা, বাঁশের হাতল, কাপড় ও পারিশ্রমিকসহ প্রায় ১৭ থেকে ১৮ টাকা খরচ হয়। এ পাখা পাইকারি এবং বিভিন্ন হাট-বাজারে, দোকানে এবং মেলায় বিক্রি করা হয় ২৩ টাকা থেকে ২৫ টাকায়। আগে এ গ্রামে অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও পাখা বিক্রির টাকায় ফিরেছে সচ্ছলতা। সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ অন্য সব খরচ আসে এ পাখা বিক্রির আয় থেকেই।

পাখা তৈরির গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেলেও কারিগরদের তৈরি পাকার ভালো দাম না পাওয়ায় তারা অনেকটা হতাশ। কারিগরদের অনেকেই বলেন, তাদের তৈরি পাখা সারাদেশে বাজারজাত করার ব্যবস্থা থাকলে সহজেই ভালো দাম মিলতো। এ শিল্পকে ধরে রাখতে হলে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ, কাচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।

গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. নুরুল  ইসলাম বলেন, এদিকে হাত পাখা তৈরি ও বাজারজাতকরণের বিপপণ ব্যবস্থা তৈরি, প্রশিক্ষণ ও সহজে ঋণ প্রদানের ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।

 

এসএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি