সাধক মালেক চাঁন দেওয়ানের ৩৬ তম প্রয়াণ দিবসে বাউল উৎসব ও পালা গান অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত : ২০:১৬, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
আধ্যাত্মিক সাধক মালেক চাঁন দেওয়ানের ৩৬ তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে কেরাণীগঞ্জের বামনশুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাউল উৎসব ও পালা গান। ঐতিহ্যবাহী দেওয়ান বাড়িতে অনুষ্ঠিত পালাগান শুনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হন হাজার হাজার ভক্ত-শ্রোতা।
উপমহাদেশে পালা গানের রূপকার হিসেবে পরিচিত আলেফ দেওয়ান ওরফে আলফু দেওয়ানের উত্তরপূরুষ বিখ্যাত বাউল শিল্পী আরিফ দেওয়ান ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে প্রতি বছর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মঙ্গলবার রাতভর অনুষ্ঠিত পালাগানে অংশ নেন কাজল দেওয়ান, মুক্তা সরকার, আরিফ দেওয়ানসহ অন্যরা। আজাদ দেওয়ান মুক্তির পরিবেশনায় শামা কাওয়ালির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ আনুষ্ঠানিকতা চলে বুধবার বিকেল অব্দি। উপমহাদেশে সুফি ও মানবতাবাদের সিদ্ধ পুরুষ আলেপ চাঁন দেওয়ানের সঙ্গীত ও জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনা করেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ড. অখিল পোদ্দার, শিক্ষাবিদ আব্দুর রাজ্জাক, রতন আহমেদ, শাকির দেওয়ান, ফারুক আহমেদসহ অন্যরা। নাসির উদ্দিন দেওয়ানের সঞ্চালনায় বিচ্ছেদ গান পরিবেশন করেন আরিফ দেওয়ান, শাফিনা দেওয়ান মাহিমা, মাহিরা দেওয়ানসহ অন্যরা।
মানবতাবাদী সংগীত সাধক আলেপ চাঁন ১২৯২ সনের এগার মাঘ ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার বামনশুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সংগীত রচনার পাশাপাশি সুকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন তিনি। আত্মপ্রচারবিমুখ এই মনীষী জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন আধ্যাত্মিক সাধনায়। তাঁর গানে ব্যক্ত হয়েছে স্রষ্ঠার মহিমা আর মানুষকে ভালবাসার বহুমাত্রিকতা। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ নাই। তাঁর গানে বিধৃত হয়েছে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ খৃষ্টানের ঐক্যবদ্ধ প্রেমের অমিয়ধারা। ফলে, এদেশের প্রধান চারটি ধর্মের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সমভাবে সমাদৃত। রেডিও-টিভির জন্মলগ্ন হতেই এই সাধকের রচিত গান গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হয়ে আসছে। তিনি রচনা করেছেন মুর্শিদি, মারফতি, ভক্তিমূলক, কীর্তন, বিচ্ছেদসহ আরও হরেক সুরের সঙ্গীত। মহান এই সাধক ১৩৯৫ সনের ২রা বৈশাখ ইহলোক ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের পালা গানের অন্যতম দ্রষ্টা আরিফ দেওয়ান বলেন, লাহোরের দরবেশ লঙ্কর শাহ্- এর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে এক পোয়া চাল আর ডাল দিয়ে শুরু করেছিলেন ওরশ মোবারক। সেটি প্রায় নব্বই বছর আগের কথা। এখন বামনশুরে ভিঁড় করেন হাজার হাজার ভক্ত ও ভালোবাসার মানুষ। সুফি-সাধক আলেপ চান শাহ ওরফে আলফু দেওয়ানের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখতে তাঁর উত্তরপুরুষ দেওয়ান পরিবারের সদস্যরা বছরের এ সময়টিতে বেশ ঘটা করে পালা গানের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করেন। বহু ভাষার সমন্বয় ঘটিয়ে এ অঞ্চলে আধ্যাত্মিক গান জনপ্রিয় করতে বিশেষ অবদান রাখায় দেওয়ান পরিবারের শিল্পী সাধকদের লেখা কবিতা, গান ও শের সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানো হচ্ছে। শত বছর আগে রচিত আলফু দেওয়ানের অসংখ্য আধ্যাত্মিক-মুর্শিদি গান নিয়েই বাংলায় চলছে শুদ্ধ সঙ্গীত সাধন। রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের বামনশুরে থিতু হলেও মহান এই সাধকের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দুই বাংলায়। বংশ পরম্পরায় আধ্যাত্মিক গানের মধ্য দিয়ে সুফিবাদের চর্চা অব্যাহত রেখেছে বামনশুরের দেওয়ান পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন