সাবধান হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে আগুন!
প্রকাশিত : ১০:৪২, ২৫ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১০:৪৮, ২৫ জুলাই ২০২০
হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ছবি রয়টার্স
বর্তমানে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নিজেকে সুরক্ষা রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। ভাল থাকার জন্য মানুষ কত কিছুই না করছে। এই সুরক্ষা থাকার অন্যতম উপকরণ হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার আবার ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে একটু অসতর্ক হলেই ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
করোনাভাইরাস ধ্বংসে করতে হলে অবশ্যই ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি অ্যালকোহল থাকতে হবে ব্যবহৃত ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ কিংবা ‘হ্যান্ড রাব’য়ে। অ্যালকোহল তীব্র দাহ্য পদার্থ, তাই রান্নাঘরে জলন্ত চুলার আশপাশে তা ব্যবহার করা স্বভাবতেই বিপদজনক।
এক্ষেত্রে এই জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের কিছু নিয়ম আগেই জেনে নিতে হবে। এটি মেখে আগুনের কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সম্প্রতি তেমনই এক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন চিকিৎসক দম্পতি রাজীব ভট্টাচার্য ও অনুসূয়া ভট্টাচার্য। রাজধানীর হাতিরপুলে স্যানিটাইজার ঢালতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন তারা।
জানা যায়, নিজ বাসায় স্যানিটাইজারের একটি বোতল থেকে অন্য বোতলে কিছুটা ঢেলে নিচ্ছিলেন ডা. রাজীব। তখন হঠাৎ বোতল থেকে পড়ে যাওয়া স্যানিটাইজার আগুনের সংস্পর্শে আসে। মুহূর্তে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এতে মারাত্মক দগ্ধ হন রাজীব। তাকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রী অনুসূয়াও দগ্ধ হন।
এরপর তাদের দুজনকেই উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সঙ্কটাপন্ন রাজীবকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তাদের মধ্যে রাজিবের শরীরের ৮৭ শতাংশ ও তার স্ত্রীর ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়।
রাজীবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুদীপ দে জানান, বাসায় ব্যবহারের জন্য একটি বড় বোতলে স্যানিটাইজার রাখা ছিল। সেটি থেকে ছোট বোতলে খানিকটা জীবাণুনাশক ঢালছিলেন রাজীব। ওই সময় বোতল থেকে স্যানিটাইজার পড়ে যায়। তখন রাজীব ধূমপান করছিলেন। তার সিগারেট থেকে স্যানিটাইজারে আগুন ধরে যায়।
এছাড়া এ রকম আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি তেমনই এক দুর্ঘটনার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন জনৈক নারী। তিনি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে রান্না করতে গিয়েছিলেন। এতে মুহূর্তেই তাঁর হাতে আগুন লেগে ঝলসে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হ্যান্ড রাব/হ্যান্ড স্যানিটাইজিং/হ্যাক্সাসল জাতীয় লোশন ইত্যাদিতে এলকোহল বিদ্যমান, যা কিনা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এই এলকোহল-ই কিন্তু প্রচন্ড দাহ্য, অর্থাৎ আগুনের হালকা আঁচ থেকেই আগুন ধরে যায়।
এ কারণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে তার রেশ না যাওয়া পর্যন্ত আগুন স্পর্শ করা যাবে না।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের বেশিরভাগ মানুষই এখন জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার এখন মানুষের পকেট পকেট থাকে। কিন্তু জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অ্যালকোহল থাকে। এগুলো হচ্ছে দাহ পদার্থ, আগুনের সংস্পর্শে এলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরামর্শ মোতাবেক সাবধানে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ব্যবহার করতে হবে।
এসময় তিনি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারকারীদের সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
এছাড়া একই কথা বলেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার আগুনের সংস্পর্শে এলে আর রক্ষা নেই। ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই সতর্কভাবে এগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে ভারতের স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের ‘প্লাস্টিক অ্যান্ড কসমেটিক সার্জারি’ বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মহেশ মঙ্গল বলেন, ‘অধিকাংশ ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’য়ে থাকে ৬২ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহল, যা আগুনের আশপাশে যথেষ্ট বিপদজনক একটি দ্রবণ। তাই আগুনের আশপাশে তা ব্যবহার কিংবা সংরক্ষণ করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’
এমবি//