সাবরিনা সুলতানার ক্যান্সার যুদ্ধের গল্প
প্রকাশিত : ১৩:৩৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী প্রায় এক বছর আগে গলায় অসুবিধা বোধ করায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
প্রথমে তিনি একজন নামী চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তেমন একটা গুরুত্ব দেননি তার সমস্যাটি সমাধানে। চিকিৎসক বলেছিলেন, এটি আসলে কোন সমস্যাই নয়।
এরই মধ্যে সময় কেটে গেল তিন মাস। অন্য আরেকটি শারীরিক সমস্যা নিয়ে তিনি যখন ভিন্ন এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তখন ওই চিকিৎসক তার ক্যান্সার হয়েছে বলে সন্দেহ করেন।
এরপর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর এই চিকিৎসা হচ্ছে দেশের বাইরে।
ক্যান্সার হলেই নিশ্চিত মৃত্যু এমন ধারণা এখনো অনেকের মাঝেই বদ্ধমূল। কিন্তু সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীর নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন, আশা করছেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন কিছুদিনের মধ্যেই।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এমন একটি পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, দেশটিতে চলতি বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
ক্যান্সার হওয়ার পর একজন আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের উপর তা কতটা মানসিক চাপ তৈরি করে, সেটি হয়তো বলে বোঝানো খুব কঠিন।
অনেকই হাল ছেড়ে দেন। আবার অনেকে লড়াই চালিয়ে যান - সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী সে রকমই একজন।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে প্রবল মনোবল নিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন এই শিক্ষক।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি বরং অন্যদেরকে সান্ত্বনা দিয়েছি। আমার মনোবলটা অটুট ছিল।’
সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘প্রথম বার্তাটি হচ্ছে, একেবারেই আতংকিত হওয়া যাবে না। আমরা প্রত্যেকে সবসময় নানা স্ট্রাগলের (সংগ্রাম) ভেতর দিয়ে যাই। সবকিছুর সাথে আমরা যেভাবে লড়াই করি, ক্যান্সারের সাথেও সেভাবে লড়াই করতে হবে।আমি বলবো যে দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে লড়াই করতে হবে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, সময় মতো ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করা গেলে নিরাময়ও সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা যা আছে, তা একদিকে যেমন অপ্রতুল, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে অনেক ব্যয়বহুল।
আক্রান্তদের অনেকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েও পড়ছেন।
তবে কেবল ওষুধপত্র নয়, ক্যান্সার নিরাময়ে সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীর মতো প্রবল ইচ্ছেশক্তি থাকাটাও দরকার বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশের একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আহমেদ সাঈদ বলছেন, এক্ষেত্রে চিকিৎসা এবং ঔষধ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর মনোবল।
ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে যারা বেঁচে আছেন, তাদের উদাহরণগুলো যদি অন্য ক্যান্সার রোগীদের সামনে তুলে ধরা হয়, তাহলে তাঁরা অনুপ্রাণিত হবেন বলে মনে করেন চিকিৎসক আহমেদ সাঈদ।
তিনি বলেন, ‘অনেক রোগী আছে যারা ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে ১৫-২০ বছর ভালো আছেন।’ চিকিৎসকরা বলছেন, সময় যেমন বদলেছে তেমনি ক্যান্সার চিকিৎসার নানা পদ্ধতিও আবিষ্কার হয়েছে।
সুতরাং ক্যান্সার হলেই নিশ্চিত মৃত্যু - অনেক ক্ষেত্রেই এ ধারণা এখন আর আগের মতো নেই।
তবে একই সাথে ক্যান্সার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ জরুরী বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণে সচেতনতার মাধ্যমে বেশ কয়েক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/