ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সাবরিনাদের গল্প শুনিয়েই বড় করে তোলেন মা-বাবারা!

সাদিকুর রহমান খান

প্রকাশিত : ১৮:১১, ১৯ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৮:৪৬, ১৯ জুলাই ২০২০

ডাঃ সাবরিনা ও আরিফ

ডাঃ সাবরিনা ও আরিফ

একজন ডাঃ সাবরিনা। যিনি ছিলেন সমাজ এবং আমাদের মা-বাবাদের চোখে সফল একজন মানুষ। ছিলেন নামী প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী, একজন বিসিএস ক্যাডার। ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের মধ্যে একজন। যাদেরকে দেখিয়ে আমাদের মা-বাবা বলতেন, ওদের মতো হও। সফল হও, বড় হও, টাকা উপার্জন করো। বাড়ি, গাড়ির মালিক হও।

আমাদের মা-বাবারা আমাদেরকে ওই সাবরিনাদের গল্প শুনিয়েই বড় করে তোলেন। তাদের সাথে তুলনা করে, তাদের মতো সফল হতে বলেন। সাবরিনাদেরকে আমাদের চোখে আইডল বানিয়ে দেন।

অন্যদিকে, আমাদের কেউ যদি ডাঃ সাবরিনার মতো নামকরা হতে না পারতো, তাহলে আমাদের বাবা-মা, সমাজ তাকে ব্যর্থ বলে উপহাস করতো। মা বলতেন, তোকে পেটে ধরে আমি অন্যায় করেছি। বাবা বলতেন, তোর লেখাপড়ার পেছনে এত খরচ করেছি, এই দিন দেখার জন্য? পাশের বাসার সাবরিনাকে দ্যাখ.... ইত্যাদি, ইত্যাদি।

যে দেশে, যে সমাজে টাকা, যশ, খ্যাতিই জীবনের সবকিছু, সেখানে সাবরিনা আর শাহেদদের জন্মানোটাই কি স্বাভাবিক নয়? কয়টা মা-বাবা বুকে হাত দিয়ে অস্বীকার করতে পারবে এই কথা? কয়টা মা-বাবা তাদের সন্তানকে হাসান বসরীর গল্প শোনান? ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেঈ বা ইবনে তাইমিয়াদের (রহ.) গল্প শোনান ছোটবেলায়? কয়টা বাবা তার ছেলেকে আইয়ুবীর গল্প শুনিয়ে বড় করেছিলেন, বলুন তো? 

বরং উল্টো সাবরিনাদের দেখিয়ে সন্তানকে মানুষ করবেন ফেরাউনী স্টাইলে! আপনার সন্তানকে দিন রাত নমরুদের মতো ধন-সম্পদের পাহাড় বানিয়ে আবার ব্যবহার আশা করবেন মুসা নবীর মতো! হিপোক্রেসি হয়ে গেলো না ভাই? এজন্যই তো দেশে যুগে যুগে শাহেদ, আরিফ কিংবা সাবরিনারাই বার বার জন্মগ্রহণ করে, উঠে আসে।

অন্যদিকে, মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিজ দেশের পাশাপাশি নাইজেরিয়া, কলম্বিয়া আর আমেরিকার মতো দেশে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হবার দাপট দেখানো তরুণ ফাহিম সালেহকে হতে হয় হত্যার বলি। ম্যানহাটানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২২ লাখ ডলার দিয়ে কেনা অ্যাপার্টমেন্টে জীবন আর স্বপ্ন সাজাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণ। হতে পারতেন আরেক জাকারবার্গ, আরেক ইলন মাস্ক! কিন্তু ঘাতক তা হতে দেয়নি। তাকে শেষ করে দিয়েছে। 

কিন্ত হত্যাকারী শুধু একজন ফাহিমকেই খুন করেনি। বরং খুন করেছে ভবিষ্যতের হাজারো নতুন উদ্যোক্তাকে। পুরো বাংলাদেশের অদ্ভুত সম্ভাবনাকে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। যার মাধ্যমে শুধু ফাহিম সালেহকেই হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে অযুত সম্ভাবনার এক অদূর ভবিষ্যতের কাণ্ডারীকে। 

তবুও তরুণ প্রজন্মের কাছে ফাহিম থাকবেন চির স্মরণীয় হয়ে, অনুস্মরণীয় হয়ে, সম্মানের পাত্র হয়ে। সাবরিনা, সাহেদ, আরিফ চৌধুরী, পাপিয়া, ঐশীদের মতো ঘৃণার পাত্র হয়ে নয়। 

(লেখক- শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।)

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি