সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও’র সয়লাব
প্রকাশিত : ১৯:৩৫, ২৭ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ২১:৫০, ২৭ আগস্ট ২০১৯
সোশ্যাল মিডিয়াকে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে ব্যবসায়ীক আলাপও সারেন এর মাধ্যমে। কিন্তু এখন সেই জায়গাটা স্বল্প সময়ে দখল করছে পর্ন বা অশ্লীল ভিডিওতে। কাজের চেয়ে এসবে মগ্ন হয়ে পড়ছে তরুণ-তরুণী থেকে সব বয়সীরা। দেশে প্রায় ৯ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো বা হোয়াটস অ্যাপে সহজেই পেয়ে যাচ্ছে যে কোন ভিডিও। অনেকে পাড়ামহল্লার কম্পিউটার দোকান থেকে মেমোরি কার্ডে লোড করে দেখছেন ডিসির অপকর্মের ভিডিও।
ছোট বড় যুব বৃদ্ধ সবার হাতেই এখন স্মার্ট ফোন। সেই ফোনেই অনায়াসে পেয়ে যাচ্ছে এমন আরও অসংখ্যা ভিডিও। এতে করে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষই অশ্লীল বা পর্নতে আসক্ত হয়ে উঠছেন। বাড়ছে ধর্ষণের মতো ঘটনা।
সম্প্রতি জামালপুরের ডিসির ভিডিওটি শহর নগর বন্দর সর্বত্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই পর্নটি ছোট বড় সবার মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর আরও কয়েকটি ভিডিও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবাই খুব সহজে যে কোনো মুহুর্তে চাইলে একটি পর্ন হাতের কাছেই পেয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট মানুষের জীবনকে সহজ করে দিলেও এর অপব্যবহার সমাজকে ভাঙ্গনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে গড়ে উঠছে অসুস্থ প্রজন্ম।
এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই মুহুর্তে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে জামালপুরের ডিসি। সরকার দেশে ২২ হাজার পর্নো সাইট বন্ধ করলেও এই ভিডিও গত তিন-চারদিনেও সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের দেশে পর্নোগ্রাফি আইন-২০১২ রয়েছে, যার মাধ্যমে এই কাজে লিপ্ত ব্যক্তির সাত বছরের জেল ও ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ তে ১ কোটি টাকা জরিমানা ও ১৪ বছরের জেলের বিধান থাকলেও জেলা প্রশাসক ও তার সহকর্মীকে এ আইনের আওতায় কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না প্রশ্ন তার।
তিনি বলেন, সেই সঙ্গে যারা এই অশ্লীল ভিডিও প্রসার ও প্রচার ঘটিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে একই শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকা। তারা যদি নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে এসব বন্ধ করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আমাদের হাতে না থাকায় আমরা সব কিছু বন্ধ করতে পারি না। আমাদের যতটুকু সম্ভব সেটুকু করার চেষ্টা করছি। এসব নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি আসলেই ব্যবস্থা নেব।’
‘সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ নিয়ে আসে আমরা তখন ব্যবস্থা নিতে পারি। এছাড়া কেউ যদি রাষ্ট্র বিরোধী, সরকার বিরোধী বা কোনো ভিডিও কনটেন্ট দিয়ে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে তখন পদক্ষেপ নিই। আর ক্ষতিগ্রস্ত কেউ জিডি করলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি।’ বললেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে অশ্লীল ভিডিওর প্রসার ঘটছে এটা রোধ করার কোন উপায় আছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান পিপিএম একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি বিষয় যে, এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। চাইলেই সহজে এর সব কিছু রোধ করা যায় না। দেখা যায় কোন ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে, অনেকে ডাউনলোড করে ফেলে। বিদেশ থেকে বসে ভিডিও ছেড়ে দেয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে আমরা তখন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু এর বাইরে অসংখ্যা ভিডিও থাকে যা কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। বর্তমানে যেসব ঘটনাগুলো আলোচনায়, এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। অশ্লীল ভিডিও রোধে আমরা মনিটরিং করছি।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বিটিআরসি’র হাইকোর্টে দেওয়া একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার তিনটি অপারেটর ফেসবুক, ইউটিউব এবং গুগল দেশে বিগত তিন বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো ব্যয় করছে এই অপারেটরগুলো।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এত টাকা ব্যয় করা সত্ত্বেও গুগল, ইউটিউব এবং ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের কেন এ ধরনের চুক্তি করা হচ্ছে না। সরকারকে দ্রুত এ বিষয়গুলো দেখার আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে।
এসি