ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সালাম কেন দিবেন?

প্রকাশিত : ১৯:০৪, ৮ মার্চ ২০১৯

(ফাইল ফটো)

(ফাইল ফটো)

‘সালাম’ আল্লাহ পাকের এক বিশেষ নেয়ামত, রহমত, বরকতময়পূর্ণ শব্দ। এটি একটি দোয়া। অর্থ হলো আপনার ওপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। জবাবে সালামের উত্তরদাতা বলেন, ওয়াআলাইকুমুস সালাম, অর্থাৎ সালাম দাতার ওপরও আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। ইসলামি সংকৃতিতে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন মেরাজে নবী করিম (স.) কে সর্ব প্রথম সালাম দিয়ে কথোপকথন শুরু করেছিলেন। অর্থাৎ স্রষ্টা তার সৃস্টিকে সাক্ষাতের শুরুতে সালাম দিয়েছেন, এ থেকে সালামের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

মানুষের জীবনে পরিবার হলো সর্ম্পকের মূল ভিত্তি। শান্তির জন্য পারিবারিক সুসর্ম্পক আবশ্যক। অবিদ্যাপ্রসূত দৃষ্টিভঙ্গি, ভায়োলেন্সপূর্ণ টিভি সিরিয়াল, অসুস্থ বিনোদন, ভার্চুয়াল ভাইরাস আর আর্থ-সামাজিক নানা কারণে আমাদের পরিবারগুলো একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিবর্তে ভিনদেশি ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি অনুকরণ প্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে সালাম-এর মতো সুন্দর সংস্কৃতিক চর্চা সমাজে কমে আসছে।

সামাজিক পরিমন্ডলে, কর্মক্ষেত্রে, রস্তাঘাটে কারো সঙ্গে দেখা হলে আমরা অনেকে হয়তো সালাম দেই। কুশল বিনিময় শুরু হয় সালামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পারিবারিক সুখ-শান্তি ও সাফল্য কামনায় এ শুভচর্চা আমাদের পরিবারগুলোতে কতটা হয়? অথচ সুখী মমতাময়পূর্ণ পারিবারিক আবহ সৃস্টির জন্য একটি অনবধ্য উপায় হতে পারে এই শুভ কামনাসূচক বাক্যটি। পারিবারিক বন্ধনকে অটুট রাখতে আমাদের প্রথম করণীয় পরিবারে সালাম চর্চার প্রসার ঘটানো। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সালাম বিনিময় হতে পারে সুন্দর পারিবারিক সংস্কৃতি।

সালামের কোনো শ্রেণি বিভাজন নেই। এটি সার্বজনীন বিষয়। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, উঁচু,-নীচু , সাদা-কালো, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই পরস্পরকে সালাম বিনিময় করতে পারে। এক মুসলমান অপর মুসলমানের সঙ্গে দেখা হলে সালাম দিয়ে অলাপচারিতা শুরু করা ইসলামের রেওয়াজ। সালাম দেওয়া সম্পর্কে নবীজীর হাদীস থেকে জানা যায়, কোন মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে একবার সালাম বিনিময়ের পর চোখের আড়াল হয়ে পুনরায় সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করতে পারে। অর্থাৎ এক মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তির সারাক্ষণই শান্তি ও কল্যাণ কমনা করবে। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সালামের উত্তর প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা নিসা’র ৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘‘আর কেউ যখন তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা কমপক্ষে সে-রকম অথবা তার চেয়েও বেশি সম্মানসহকারে সালামের জবাব দিবে’’। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ছোট বড় সবাইকে আগে সালাম দিতেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা ফোরকানের ৬৩ নং আয়াতে সালাম সর্ম্পকে বলা হয়েছে, দয়াময়ের দাস তারাই, যারা জমিনের ওপর নানাভাবে চলাফেরা করে। মুর্খরা তাদেরকে কথা বলে উত্ত্যক্ত বা বিতর্ক সৃস্টি করতে চাইলে তারা বলে, তোমাদের প্রতি ‘সালাম’। এ আয়াতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় কেউ রূঢ় আচরণ করলেও আল্লাহ সচেতনরা তাদের মঙ্গল কামনা করবে।

সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি ধারণা শুধু ছোটরাই বয়জ্যেষ্ঠদের সালাম দিবে। ইসলাম তা বলে না। সালাম সার্বজনীন। মানুষের ধন সম্পদ, ধর্ম, কর্ম ইহকলীন সবকিছু অর্জিত হওয়ার মূলে একটাই চাওয়া কাজ করে, তা হলো প্রশান্তি। পরকালীন অনন্ত জীবনের উদ্দেশ্যও তাই। সালাম হলো সে শান্তির দোয়া। সালামকারী ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সকাল-সন্ধ্যা, দিনে-রাতে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, রাষ্ট্রীয় জীবনসহ দৈহিক, মানসিক, ইহকলীন ও পরকালীন জীবনে অর্থাৎ সর্বাবস্থায় শান্তি কামনা করে।

শান্তি সমৃদ্ধির জন্য সমাজের সর্বস্তরে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা এখন সময়ের দাবি। বর্তমান প্রজন্মের বহুল চর্চিত হ্যায়, হ্যালো, গুডমনিং, গুডইভিনিং, গুড আফটারন্যূন, গুডনাইট, হ্যাভ এ নাইস ডে, এসব মুসলমান সংস্কৃতির অংশ নয়। তাছাড়া এ সব কল্যাণ সূচক শব্দ বা বাক্য কখনও অনন্ত ও সার্বিক কল্যাণ ও শান্তিকে নির্দেশ করে না। এসব আংশিক ও খণ্ডিত। এ জন্য নিজ পরিবার থেকে সালামের চর্চা শুরু করতে হবে। পরিবারের বড়রা ছোটদের আগে সালাম দেওয়া শুরু করলে শিশুর এ অভ্যাস সহজে রপ্ত হবে এবং জড়তা দূর হবে। কারণ শিশুদের উপদেশ দিয়ে নয়, শিশুরা চায় দৃষ্টান্ত বা অনুকরণ করতে। প্রতিদিন হাসিমুখে এই শুভকামনা চলতে থাকলে আমাদের পরিবারগুলোতে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। পরিবারই হবে আমাদের সুখের নীড়, শান্তির উৎস। তাই বড়-ছোট নির্বিশেষে সবাইকে আগে সালাম দেওয়া অভ্যাসে পরিণত করুন, সব সময় হাসিমুখে কথা বলুন। সালাম ও হাসিমুখে কথা বলা একটি উত্তম সাদাকা।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি