সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি, প্রার্থী হচ্ছেন যারা
প্রকাশিত : ১১:৫১, ১৭ আগস্ট ২০১৯
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একইদিনে ভোট হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেও। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ করতে হবে। সে হিসাবে আগামী বছরের শুরুতেই এ তিন সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, দলীয় প্রতিকেই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাহারা এ দলটি। এর মধ্যে ঐ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থেকে নানা সামাজিক কাজ করতেও দলীয় নীতি নির্ধারকরা নির্দেশও দিয়েছেন। এমন অবস্থায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে। এ প্রস্তুতিতে পবিত্র ঈদুল আজহাকেই কাজে লাগাচ্ছেন নির্বাচনে দলীয় টিকিট প্রত্যাশীরা।
গেল বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার কথা ঢাক ঢোল পিটিয়ে বারবার বললেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। কয়েকটি আসনে জয় পেয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এমন দাবি করেও শেষ পর্যন্ত সংসদেও যায় দলের নির্বাচিতরা। জানা গেছে, ডেঙ্গু ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেটও বিতরণ করছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা।
সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘আমরা সিটি নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করছি।’ ঢাকাসহ তিন সিটি নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি বলে মন্তব্য করেন দলের এ নেতা।
ঢাকা দক্ষিণ, উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে অনেক নেতাই দলীয় মনোনয়নের জন্য শুরু করেছেন দৌঁড়ঝাপ। এর মধ্যে লন্ডনে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলে কয়েকটি সূত্রে জানা যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে দুই প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরাই বিএনপির প্রার্থী হবেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে। ঐ দুই পরিবারই অবিভক্ত ঢাকার নগর পিতার পদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে প্রায় এক যুগ মেয়র ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।
দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও উত্তরে তাবিথ আউয়াল। ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষেও রয়েছে দলের মধ্যে বিভেদ। দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের বদলে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে দলের একটি অংশ। গেল নির্বাচনে মির্জা আব্বাস নির্বাচনী মাঠে অনুপস্থিত থাকলে তখন নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বামীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে মাঠ দখল করেছিলেন আফরোজা আব্বাস।
অন্যদিকে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী জলেও ঐক্যফ্রন্টের জন্য নির্বাচনে অংশ নেননি তিনি। ইশরাক হোসেন খোকা সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘আগামী সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই আমি দেখি না।’
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে দুজন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা এবং অন্যজন এলডিপির নেতা। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি উত্তরের ভোটে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, তিনি ২০-দলীয় জোট থেকে উত্তরে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। মেয়র পদে লড়তে চান যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলে জানা যায়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গেল নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হন। তবে নির্বাচনের দিন সকাল ১০টায় দলের নির্দেশে ভোট বর্জন নিয়ে তাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ থাকলেও তিনি দলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে তখন জানা গিয়েছিল। ফলে তিনি বিএনপির সকল পদ থেকে পদত্যাগও করেন।
এ সিটিতে নতুন প্রার্থী হিসেবে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন। এ ছাড়া মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর ও কারাগারে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর নামও আলোচনায় আছে।
এদিকে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা অথবা কিভাবে অংশ নেবে সে বিষয়ে এখন দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়নি। দলীয় নীতিনির্ধারকের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
এমএস/
আরও পড়ুন