সীমান্তে স্থল মাইন পেতেছে মিয়ানমার : অ্যামনেস্টি
প্রকাশিত : ১৮:২০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:০৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
মিয়ানমার দেশের ভেতর বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে স্থল মাইন পেতেছে বলে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এসব মাইন সেনা অভিযানের কারণে প্রাণভয়ে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি। শনিবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি এ উদ্বেগ জানায়।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলছে, সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ ভূমি মাইনে রাখাইন সীমান্তে গত সপ্তাহে দুই শিশুসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন, মারাও গেছেন একজন। এসব মাইন যে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরাই পেতেছে, তা প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাক্ষাৎকার এবং নিজেদের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ থেকে সিদ্ধান্তে আসার কথা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেন, রাখাইন রাজ্যের অবস্থা ইতোমধ্যে এত ভয়ানক যে, এর মধ্যে এটি (ভূমি মাইন পাতা) পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে।
যেখানে প্রাণভয়ে সীমান্ত দিয়ে ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ পালাচ্ছে, সেখানে এসব পথের যত্রতত্র অমানবিকভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মারণাস্ত্রের ব্যবহার সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিরানা হাসান বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, সীমান্তের কাছের রাখাইনের তুং পায়ো লেট ওয়াল (তুমরো হিসেবে পরিচিত) এলাকায় কিছু মাইন পাওয়া যায়।
রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের ভেতরের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে পালিয়ে এলেও প্রয়োজনীয় কিছু আনা ও অন্যদের সীমান্ত পার হতে সাহায্য করতে মাঝে মাঝে সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে তুং পায়ো লেট ওয়ালে গিয়ে ফিরে আসার সময় এমনই এক পঞ্চাশোর্ধ নারীর পা মাইনের উপর পড়ে বলে অ্যামনেস্টি জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, হাঁটুর নিচ থেকে তার পা উড়ে যাওয়ার পর এখন বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিস্ফোরণের পর পরই মোবাইল ফোনে ওই নারীর ক্ষত-বিক্ষত ফোলা পায়ের তোলা ছবির সত্যতা যাচাইয়ের কথা জানিয়ে তারা বলছে, ক্ষতের ধরন থেকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে- এটা বিস্ফোরক কোনো কিছুর কারণেই ঘটেছে, যা শক্তিশালী ও ভূমি থেকে উপরের দিকে বিস্ফোরিত হয়েছে। যার সব কিছু ভূমি মাইনেই হয়ে থাকে।
গ্রামবাসীদের আরও অনেকে তাদের এ ধরনের বেশকিছু ছবি দেখিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত একটি সত্যতা অ্যামনেস্টি নিশ্চিত করেছে, যা ওই একই এলাকায় পুঁতে রাথা ভূমি মাইনের কারণে হয়েছে। তারা বলছে, এ সপ্তাহে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ভেতরের একটি গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়া রাস্তায় সন্দেহভাজন আরও চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সী দুই কিশোর আহত হওয়ার পাশাপাশি একজন মারা গেছে বলে স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
অ্যামনেস্টির অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, এসব ঘটনায় ব্যবহার করা অন্তত একটি মাইন পিএমএন-১ স্থলমাইন বলে চিহ্নিত হয়েছে, যা সাধারণ জখম করার জন্যই তৈরি করা হয়।
আরকে/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন