ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

সীমাবদ্ধতাই যখন শক্তি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৯, ৮ মার্চ ২০২১

এক জাপানি বালক। ১৩ বছর তার বয়স। একটা দুর্ঘটনায় বাম হাত হারিয়ে ফেলল। তার ছিল জুডো শেখার প্রচন্ড আগ্রহ। কিন্তু যেহেতু তার বাম হাত নেই, কোনো জুডো-গুরু তাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি হলেন না-বাম হাত নেই, একে কী শেখাবো? জুডো তো একটা সাংঘাতিক ব্যাপার! যেটার জন্যে দুটো হাতের প্রয়োজন।

ছেলেটি এই গুরুর কাছে যায়, ঐ গুরুর কাছে যায়। সবাই শুধু বলে যে, না, তুমি জুডো শিখতে পারবে না। তোমার জন্যে এগুলো নয়। তুমি বরং অন্য কিছু কর। কিন্তু বালক বিশ্বাসে অটল। বাম হাত নেই তাতে কী? জুডো সে শিখবেই। ঘোরাঘুরি করতে করতে শেষমেশ সে এক বয়োবৃদ্ধ গুরুর সন্ধান পেল। বালকের শেখার আকুতি দেখে গুরুর মায়া হল। তিনি তাকে বললেন যে, ঠিক আছে, আমি তোমাকে শেখাব। তবে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আমি যা বলব তা তুমি মানবে এবং লেগে থাকবে।

শুরু হল তার জুডো শেখা। দিন গেল, সপ্তাহ গেল, মাস গেল। বছর পার হল। একসময় ছেলেটি অবাক হয়ে লক্ষ করল-প্রতিদিন তার গুরু তাকে একটা কৌশলই, জুডোর একটি প্যাঁচই কেবল শেখাচ্ছেন। ডান-বাম, সামনে-পেছনে আর কিছুই না, শুধু একটাই কৌশল, একটাই প্যাঁচ।

একসময় তার মনে প্রশ্ন জাগল, দুঃখ হলো-জুডোর এত প্যাঁচ আছে, সব বাদ দিয়ে গুরু আমাকে শুধু একটি প্যাঁচ শেখাচ্ছেন! আবার সাহসও পায় না যে, গুরুর সামনে বললে আবার না বেয়াদবি হয়ে যায়।

একদিন সাহস করে বলেই ফেললো যে, সেনসেই! (জুডো-গুরুকে শিষ্যরা সম্মান করে ডাকে সেনসেই) আমি কি আর কোনো কৌশল শিখব না?-বলল খুব করুণ স্বরে। গুরু জবাব দিলেন, তুমি একটি কৌশল শিখছ আর এই একটি কৌশলই, একটি প্যাঁচই তোমার ভালোভাবে রপ্ত করা দরকার। অতএব একাগ্রচিত্তে অনুশীলন করে যাও।

গুরু বলে দিয়েছেন। তার কাছে এটুকুই যথেষ্ট। যেহেতু গুরু তাকে খুব স্নেহ করেন, একটা প্যাঁচই মমতার সাথে বার বার বার বার শেখাচ্ছেন-সে অনুশীলন করে চলল। পাঁচ বছর পার হয়ে গেল এই একটা প্যাঁচ শিখতে। দীর্ঘ অনুশীলনে এই প্যাঁচের সবকিছু দারুণভাবে রপ্ত করলো সে।

এবার গুরু সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে প্রতিযোগিতায় নামানোর। প্রতিযোগিতা শুরু হলো। প্রথম দুই ম্যাচে খুব অনায়াসে সে ঐ এক প্যাঁচ দিয়েই দুজনকে হারিয়ে দিল। এবার ফাইনাল। ফাইনাল ম্যাচে সে সত্যি সত্যি বেশ বেকায়দায় পড়ল। কারণ তার প্রতিপক্ষ বেশ শক্তিশালী আর অভিজ্ঞ।

একসময় মনে হলো যে, বালকটি বোধহয় হেরে যাচ্ছে। ভীষণ মার খাচ্ছে। রেফারিও বুঝতে পারছে না খেলা কি চলতে দেবে, না থামিয়ে দেবে। কারণ যেভাবে ছেলেটি মার খাচ্ছে তাতে যেকোনো সময় সে পড়ে যেতে পারে। কিন্তু তার গুরু ইশারা করলেন যে, না, খেলা চলুক।

বিরতি হলো। গুরু বালকের মাথায় হাত বুলিয়ে উৎসাহ দিলেন। সুন্দর খেলছ। তুমি জিতবে। খেলা আবার শুরু হল। শক্তিমান প্রতিপক্ষ অধৈর্য হয়ে উঠল। মরিয়া হয়ে আক্রমণ করতে লাগল। বালক ঠান্ডা মাথায় প্রতিটি আক্রমণ কাটাচ্ছে। হঠাৎ প্রতিপক্ষ একটা ভুল করার সাথে সাথে বালক তার প্যাঁচ প্রয়োগ করল এবং জিতে গেল। বালক চ্যাম্পিয়ন হল।

চ্যাম্পিয়ন হয়ে বালক তো মহাখুশি। এটা তার কাছেও বিস্ময়কর যে, একটিমাত্র কৌশল প্রয়োগ করে সে জিতে গেল! ফেরার পথে সে গুরুকে জিজ্ঞেস করল যে, সেনসেই! এই একটিমাত্র কৌশল প্রয়োগ করে আমি জিতলাম কী করে?

তখন গুরু বললেন যে, দেখ, তুমি দুটি কারণে জিতেছ। এক হচ্ছে, তুমি জুডোর খুব দুরূহ একটি কৌশল, খুব কষ্টকর জটিল একটি প্যাঁচকে খুব ভালোভাবে শিখেছ। দুই হচ্ছে, আমার জানামতে এই প্যাঁচ থেকে বাঁচার জন্যে প্রতিপক্ষের একটিই পথ আছে। তা হলো প্রতিদ্বন্দ্বীর বাম হাত ধরে ফেলা। সে যদি তোমার বাম হাত ধরতে পারত তাহলেই বাঁচতো। কিন্তু তোমার তো বাম হাতই নেই। অতএব তুমি জিতে গেছ।’

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি