ইয়েলের অধ্যাপকের দৃষ্টিতে
সুখী হওয়ার পাঁচ উপায়
প্রকাশিত : ১০:৪৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিজ্ঞানে প্রমাণিত হয়েছে যে সুখী হতে হলে সচেতন প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তবে এটা খুব একটা সহজ কাজ নয়, এজন্যে সময় লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান এবং কগনিটিভ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লরি স্যান্টোস বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১৬ বছরের ইতিহাসে অধ্যাপক লরি স্যান্টোসের ক্লাস শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। তিনি পড়ান ‘মনোবিজ্ঞান ও সুন্দর জীবন’। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২,০০। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এই কোর্সটি পরিচালনা করেন তিনি। এটা মনোবিজ্ঞানেরই একটি শাখা যেখানে সুখ এবং আচরণগত পরিবর্তনের বিষয়ে পড়ানো হয়।
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, সুখী হওয়া বিষয়টি আপনা আপনি হয় না। সুখী হওয়ার জন্যে আপনাকে এটা চর্চা করতে হবে। এটা অনেকটা ভালো সঙ্গীত শিল্পী বা ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠার মতোই। সাফল্যের জন্যে তাদেরকে যেমন চর্চা করতে হয় সুখী হওয়ার ব্যাপারেও আপনাকে সেটা করতে হবে।
তার দেওয়া পাঁচটি টিপস তুলে ধরা হলো।
১. কৃতজ্ঞতার একটি তালিকা তৈরি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস তার শিক্ষার্থীদের বলেন, প্রত্যেক রাতে তারা যাদের কাছে বা যেসব জিনিসের কাছে কৃতজ্ঞ তার একটি তালিকা তৈরি করতে। তিনি বলেন, এটা শুনতে খুব সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা দেখেছি যেসব শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে এটা চর্চা করেন তাদের সুখী মনে হয়।
২. আরও বেশি করে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চেষ্টা করুন
এই কাজটা করা সবচেয়ে সহজ বলে মনে হলেও আসলে এই কাজটা করা খুব কঠিন। এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতি রাতে আট ঘন্টা করে ঘুমানো। এবং এই কাজটা করতে হবে এক সপ্তাহ ধরে। অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, আমরা সবাই জানি যে বেশি ঘুমাতে পারলে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারলে বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে। এর ফলে ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়।
৩. ধ্যান করুন
আপনার কাজ হবে প্রত্যেকদিন ১০ মিনিট করে মেডিটেট বা ধ্যান করা। অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত ধ্যান করতেন এবং দেখেছেন সেটা করলে মন ভালো থাকে। এখন তিনি একজন অধ্যাপক। এখন তিনি তার শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন কিভাবে ধ্যান করতে হয়। তিনি বলেন, এধরনের কাজে পূর্ন মনোযোগ দিতে হয় যা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।
৪. পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আরও সময় কাটান
স্যান্টোস বলেছেন, গবেষণায় পরিষ্কার একটি বিষয় দেখা গেছে, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সময় কাটালে আপনি সুখী হবেন। তিনি বলেন, আপনার সুখী হওয়ার জন্যে সময় সম্পর্কে আপনার ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কতো অর্থ আছে সেটা দিয়ে আমরা প্রায়শই আমাদের সম্পদের হিসাব করি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পদ হচ্ছে আসলে আমাদের হাতে কতো সময় আছে সেটার সাথে সম্পর্কিত।
৫. সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগের পরিবর্তে বাস্তবে এই যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস মনে করেন, সোশাল মিডিয়া থেকে সুখের বিষয়ে মিথ্যা যেসব ধারণা পাওয়া যায় সেসবে ভেসে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘সবশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা, যারা এটা খুব বেশি ব্যবহার করেন না তাদের চাইতে কম সুখী।’
এখন তো সব জানা হয়ে গেলো। আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, তাহলে পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটান, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করুন, দিনের একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্যে নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে ধ্যানে মগ্ন হউন। সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে এসে আরও একটু বেশি ঘুমাতে চেষ্টা করুন। ইয়েলের শিক্ষার্থীদের জন্যে যদি এটা কাজ করে, তাহলে এসব পরামর্শ আপনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয় কাজ করবে।
সূত্র: বিবিসি
একে// এআর