ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪

সুন্দরভাবে কথা বলা সৎকর্মের ভাণ্ডার

প্রকাশিত : ১০:৫২, ১৯ জুন ২০১৯

মানুষের মন যেমন জয় করা যায় তেমনি আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করা যায় সুন্দর বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে। সুন্দর কথা বলার জন্য শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রম করতে হয় না, কোন আর্থিক ত্যাগের প্রয়োজন হয় না। সুন্দর বাক্য এমন এক সৎকর্ম যা প্রতিমুহূর্তে করা যায়। ছোট ছোট বালুকণা যেমন বিশাল পাহাড় তৈরি করে তেমনি প্রতিটি মুহূর্তে উচ্চারিত সুন্দর বাক্য পরকালে নেকির এমন পাহাড় গড়ে তুলবে যা দেখে মানুষ বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যাবে।

সুন্দরভাবে কথা বলা ও ভালো ব্যবহার কোন ঐচ্ছিক ব্যাপার নয় বরং আল্লাহর নির্দেশ। আমরা নামাজ, রোজাসহ আল্লাহর নির্দেশগুলো যে চেতনা নিয়ে ফরজ মনে করে পালন করি ঠিক সেই চেতনা নিয়েই সুন্দর কথা বলার চেষ্টা চালাতে হবে। আল্লাহ পবিত্র আল কোরআনে বার বার মানুষকে সুন্দরভাবে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলো সুন্দর কথা বলো। (সূরা বাকারা ২:৮৩)

আরও বলেন : তাদের সঙ্গে (যেসব যাঞ্চাকারীকে তুমি কিছু দিতে অপারগ) নম্রভাবে কথা বল। (সূরা বনিইসরাইল ১৭:২৮)

আল্লাহতায়ালা বলেন : চাল চলনে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। মোলায়েম কণ্ঠে কথা বল। নিশ্চয়ই স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর (অর্থাৎ গাধার মতো কর্কশ কণ্ঠে কথা বলো না)। (সূরা লোকমান ৩১:১৯)

আল্লাহ তায়ালা পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে এমনকি সমাজের নীচু পর্যায়ের যাঞ্চাকারীর (ভিক্ষুকের) সঙ্গেও সুন্দরভাবে কথা বলার নির্দেশ দিচ্ছেন। হয় মানুষ সুন্দরভাবে মোলায়েম কণ্ঠে কথা বলবে অথবা চুপ থাকবে। কোন অবস্থাতেই কর্কশ কণ্ঠে কথা বলার অনুমতি আল্লাহ দেন নাই।

আমাদের প্রত্যেককে প্রতিমুহূর্তে শব্দ চয়নে সতর্ক হওয়া উচিত এবং সুন্দরভাবে, শুদ্ধভাবে, শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার সাধনা করা উচিত। কেননা একটি ফলবান বৃক্ষ যেমন বছরের পর বছর মানুষকে তৃপ্ত করে তেমনি একটি সৎবাক্য বা ভালো কথা স্থানকালের সীমানা অতিক্রম করে অগণিত মানুষকে আলোকিত করে ও পথ নির্দেশনা দেয়।

সুন্দর বাক্য এমন এক ধরনের সৎকর্ম যার প্রতিদান শেষ হবার নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : একটি ভালো কথা বা সৎবাক্য এমন একটি ভালো গাছের মত, যার শিকড় মাটির গভীরে সুদৃঢ় আর যার শাখা-প্রশাখা দিগন্তব্যাপী বিস্তৃত এবং যা সারাবছর ফলদান করে। (সূরা ইব্রাহিম ১৪:২৪)

সুন্দর বাক্য শুধু সৎকর্মের ভান্ডার সমৃদ্ধ করে না দোযখের আগুন থেকে মানুষকে বাঁচায়। কিয়ামতের বিভিষীকাময় পরিস্থিতিতে দোযখের আগুন থেকে বাঁচার জন্য একটি সুন্দর কথা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রতিনিয়ত দান ও সুন্দর বাক্যের মাধ্যমে দোযখের আগুন থেকে বাঁচার উপদেশ দিয়েছেন।

আলী ইবনে হাতেম (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো যদি এক টুকরা খেজুর দান করেও হয়। তাও করা না গেলে একটি সুন্দর কথা বলার বিনিময়ে হলেও। (বুখারী ৩৪৯৬)

আল্লাহর অপছন্দনীয় বিষয় যেমন গীবত, চোগলখোরী, ঝগড়াঝাটি, কটুবাক্য থেকে যেমন একদিকে বিরত রাখার চেষ্টা চালাতে হবে অন্যদিকে সুন্দর বাক্য বিনিময়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কেননা সুন্দর কথা প্রতিমূহূর্তে সৎকর্মের ভান্ডার সমৃদ্ধ করে। তাই বুদ্ধিমানদের উচিত সুন্দরভাবে কথা বলার সাধনা করা যাতে সৎকর্মে অগ্রবর্তীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায়।

তথ্যসূত্র : ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরীর প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের সোপান গ্রন্থ।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি