গার্মেন্টসে যৌন হয়রানি
সুপারভাইজারদের দায়ী করলেন ৮৬ শতাংশ নারী
প্রকাশিত : ১৫:০৮, ২৭ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১৫:১১, ২৭ আগস্ট ২০১৮
দেশের ক্রমবর্ধমান পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ৮৫ ভাগই নারী।যে নারীর উপর ভর করে রফতানি আয়ের সিংহভাগ দখল করেছে পোশাক খাত।সেই নারীর উপর চলছে নানাবিধ যৌন হয়রানি। আর এ হয়রানির জন্য দায়ী কারখানার সুপারভাইজার থেকে শুরু করে মধ্য সারির কর্মকর্তারা।কারখানায় কর্মরত ৮৬ ভাগ নারীর কাছ থেকে এমনই তথ্য মিলেছে বলে পরিসংখ্যানে তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক সেমিনারে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
নারীদের নিয়ে কাজ করে এমন পাঁচটি সংগঠন (ব্ল্যাস্ট, ব্র্যাক, ক্রিশ্চিয়ান এইড, নারীপক্ষ ও এসএনভি) মিলিত উদ্যোগে ‘সজাগ’এ সেমিনারের আয়োজন করে। উপস্থাপিত পরিসংখ্যানের জন্য মার্চ হতে জুন ২০১৮ পর্যন্ত সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকার ৮টি কারখানার ৩৮২ জন নারী পোশাক শ্রমিকের সাথে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন এবং সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক সজাগ কোয়ালিশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ কারখানা। আর পরিসংখ্যানে আসা প্রত্যেকটি কারখানা কমপ্লায়েন্সভুক্ত কারখানা।কমপ্লায়েন্সের তালিকার বাইরের কারখানাগুলোর পরিসংখ্যান করলে এ হয়রানির পরিমান আরো ভয়াবহ বলে ধারনা করা হয়।
সেমিনারে উপস্থাপিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শ্রমিকদের ২২ শতাংশ বলেন, তারা কারখানার ভিতরে অথবা বাইরে শারিরীক, মানসিক এবং যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।৬৬ বলেন, তারা কারখানার কমিটির কাছে কোন সহযোগিতা বা প্রতিকার চায়না কারণ তারা মনে করেন কমিটির কাছে কোন বিচার পাওয়া যাবেনা।১১ শতাংশ মনে করেন, তারা কর্মক্ষেত্রে অনিরাপদ।৮৩ শতাংশ মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে তাদের সাথে অশালীন বা অকথ্য ভাষায় কথা বলা, কারখানায় প্রবেশের সময় নিরাপত্তা কর্মীর অস্বস্তিকর, চেকিং, পুরুষ সহকর্মীর অপ্রত্যাশিত স্পর্শ, যৌন সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা এগুলো হয়রানী। ৬৮ শতাংশ বলেন, কর্মক্ষেত্রে তেমন কোন কার্যকর যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি নেই।
সেমিনারে মিনিষ্ট্রি অব লেবার এন্ড ইমপ্লয়মেন্টের ল ডিভিশনের এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারী বেগম মোর্শেদা হাই, ডাইফির জেন্ডার ইকুয়ালিটি এন্ড ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডিআইজ মতিউর রহমান, রেনেশাঁ গ্রুপের কর্পোরেট হেড অব এইচ আর সৈয়দা শায়লা আশরাফ, ব্লাস্টের এ্যাডভোকেসী এন্ড কমিউনিকেশন উপপরিচালক মাহবুবা আক্তার আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারী বেগম মোর্শেদা হাই বলেন, কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি রোধে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।দেশের আইন ব্যবস্থা নারীর জন্য উম্মুক্ত করেছে। তারপরও কর্মক্ষেত্রে নারীর হয়রানি বাড়ছে।এটার জন্য সরকারের পাশাপাশি মালিক-শ্রমিকসহ সব পক্ষকেই সচেতন হতে হবে।
মতিউর রহমান বলেন, কমিউনিটিতে বানিজ্যিকভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরীর উদ্যোগ নিতে হবে। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ছাড়াও পরবর্তীতে যাতে বিনা বেতনে দীর্ঘ দিন ছুটি নিতে পারে এবং হালকা কাজ দেয়া হয়, সেই সুযোগ সুবিধা আইনে আসা দরকার।
সৈয়দা শায়লা আশরাফ বলেন, যদি মালিকপক্ষ অঙ্গীকার করেন ফ্যাক্টরীতে নির্যাতন হবে না, তাহলে নির্যাতন বন্ধ হবে, সেজন্য কারখানা পর্যায়ে ব্যবস্থাপনাকে সচেতন করা খুবই জরুরী।
মাহবুবা আক্তার বলেন, তারা যেসব পোশাক শিল্প কারখানার সাথে কাজ করেন সেখানে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন অভিযোগ কমিটি নেই। এই ক্ষেত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এই কমিটি গঠন করা সহজ হবে। তিনি আরো বলেন, কলকারখানা পরিদর্শন চেকলিষ্টে অভিযোগ কমিটি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন আছে। তিনি চেকলিষ্টে আরো বিস্তারিত করা এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে কমিটি কার্যকর কিনা তা মনিটরিং করার জন্য ডাইফির প্রতি অনুরোধ জানান।
সেমিনারে পরিসংখ্যান সম্পর্কে উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা, পরিসংখ্যানের উপর আলোকপাত করেন সজাগ কোয়ালিশনের দলনেতা মাহীন সুলতান । পরিসংখ্যানের উদ্দেশ্য ছিল পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের পথে ঘাটে, বাসস্থানে এবং কারখানার ভিতরে যৌন হয়রানী ও সহিংসতা এবং কারখানার ভিতরে সহিংসতা রোধে কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ, ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বর্তমান অবস্থা জানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ দেশীয় প্রতিনিধি সাকেব নাবি।
আরকে//
আরও পড়ুন