ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘সূরা আল মাউন’র মর্মবাণী ও শানে নুযূল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৮, ৮ মে ২০২০

Ekushey Television Ltd.

মাহে রমজানে আমরা বেশি বেশি কোরআন পাঠ করব। চেষ্টা করব অর্থ বুঝে তবেই পাঠ করার। সব সময় কোরআনের সঙ্গে থাকব। কারণ এ মাসেই আল্লাহ মহা পবিত্র আল কোরআন নাজিল করেছেন। এই কোরআন মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক। 

আজ আমরা পবিত্র কোরআন শরীফের ১০৭ নম্বর সূরা ‘সূরা মাঊন’ পাঠ করব। সেই সঙ্গে জেনেনিব এর ফজিলত সম্পর্কে।

১০৭. সূরা মাঊন
পারা ৩০, আয়াত ৭, রুকু ১ (মাক্কী)

বাংলা উচ্চারণ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আরায়াইতাল্লাযী ইয়ুকাযযিবু বিদ্দীন। ফাযা লিকাল্লাযী ইয়াদু'উল ইয়াতীম। অলা ইয়াহুদদু 'আলা তা'আমিল মিসকীন। ফাওয়াইলুল্লিল মুছায়াল্লীন। আল্লাযীনাহুম 'আন ছালাতিহিম সাহুন। আল্লাযীনা হুম ইয়ুরা য়ুনা অইয়ামনা উনাল মা'ঊন।

মর্মবাণী
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
(হে নবী!) তুমি কি কখনো চিন্তা করেছ, কোন ধরনের লোকেরা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করে? ২-৩. এ ধরনের লোকেরা এতিমের সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে, অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে কোনো আগ্রহ বোধ করে না বা অন্যকেও উৎসাহিত করে না।
৪-৭. আর দুর্ভোগ সেই নামাজীদের জন্যে, যারা সচেতনভাবেই নামাজে অমনোযোগী, শুধু লোক দেখানোর জন্যে নামাজে শামিল হয়। (দুর্ভোগ তাদের জন্যেও) যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় ছোটখাটো সাহায্য দানেও বিরত থাকে।

নাযিলের সময়–কাল
ইবরেন মারদুইয়া ইবনে আব্বাস (রা.) ও ইবনে যুবাইরের (রা.) উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তাঁরা এ সূরাকে মক্কী হিসেবে গণ্য করেছেন। আতা ও জাবেরও এ একই উক্তি করেছেন। কিন্তু আবু হাইয়ান বাহরুল মুহীত গ্রন্থে ইবনে আব্বাস, কাতাদাহ ও যাহহাকের এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, এটি মাদানী সূরা। আমাদের মতে, এই সূরার মধ্যে এমন একটি আভ্যন্তরীণ সাক্ষ রয়েছে যা এর মাদানী হবার প্রমাণ পেশ করে। সেটি হচ্ছে, এ সূরায় এমন সব নামাযীদেরকে ধ্বংসের বার্তা শুনানো হয়েছে যারা নিজেদের নামাযে গাফলতি করে এবং লোক দেখানো নামায পড়ে। এ ধরনের মুনাফিক মাদীনায় পাওয়া যেতো। কারণ ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীরা সেখানে এমন পর্যায়ের শক্তি অর্জন করেছিল যার ফলে বহু লোককে পরিস্থিতির তাগিদে ঈমান আনতে হয়েছিল এবং তাদের বাধ্য হয়ে মসজিদে আসতে হতো। তারা নামাযের জামায়াতে শরীক হতো এবং লোক দেখানো নামায পড়তো। এভাবে তারা মুসলমাদের মধ্যে গণ্য হতে চাইতো। বিপরীতপক্ষে মক্কায় লোক দেখাবার জন্য নামায পড়ার মতো কোন পরিবেশই ছিল না। সেখানে তো ঈমানদারদের জন্য জামায়াতের সাথে নামায পড়ার ব্যবস্থা করা দূরূহ ছিল। গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে নামায পড়তে হতো। কেউ প্রকাশ্যে নামায পড়লে ভয়ানক সাহসিকাতর পরিচয় দিতো। তার প্রাণনাশের সম্ভবনা থাকতো। সেখানে যে ধরনের মুনাফিক পাওয়া যেতে তারা লোক দেখানো ঈমান আনা বা লোক দেখানো নামায পড়ার দলভুক্ত ছিল না। বরং তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য নবী হবার ব্যাপারটি জেনে নিয়েছিল এবং মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের কেউ কেউ নিজের শাসন ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব বহাল রাখার জন্য ইসলাম গ্রহণ করতে পিছপাও হচ্ছিল। আবার কেউ কেউ নিজেদের চোখের সামনে মুসলমানদেরকে যেসব বিপদ – মুসিবতের মধ্যে ঘেরাও দেখছিল ইসলাম গ্রহণ করে নিজেরাও তার মধ্যে ঘেরাও হবার বিপদ কিনে নিতে প্রস্তুত ছিল না।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
আখেরাতের প্রতি ঈমান না আনলে মানুষের মধ্যে কোন ধরনের নৈতিকতা জন্ম নেয় তা বর্ণনা করাই এর মূল বিষয়বস্তু। ২ ও ৩ আয়াতে এমনসব কাফেরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যারা প্রকাশ্যে আখেরাতকে মিথ্যা বলে। আর শেষ চার আয়াতে যেসব মুনাফিক আপাতদৃষ্টিতে মুসলমান মনে হয় কিন্তু যাদের মনে আখেরাত এবং তার শাস্তি ও পুরস্কার ও পাপ পূর্ণের কোন ধারণা নেই, তাদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আখেরাত বিশ্বাস ছাড়া মানুষের মধ্যে একটি মজবুত শক্তিশালী ও পবিত্র – পরিচ্ছন্ন চরিত্র গড়ে তোলা কোন ক্রমেই সম্ভবপর নয়, এ সত্যটি মানুষের হৃদয়পটে অংকিত করে দেয়াই হচ্ছে সামগ্রিকভাবে উভয় ধরনের দলের কার্যধারা বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য।

 

এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি