ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সেলিমের উত্থান যেভাবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০১, ১ অক্টোবর ২০১৯

সেলিম প্রধান! বাংলাদেশে প্রথম ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন অপরাধ জগতের এই ডন। অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে তিনি এ ব্যবসা করতেন। যেখান থেকে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা কামাতেন তিনি। সে অর্থ পাচার হতো বিদেশে। শুধু ক্যাসিনো নয়, খাটাল থেকেও প্রতিমাসে তার পকেটে চাঁদা আসতো কয়েক কোটি টাকা। এছাড়াও, থাইল্যান্ডে গড়েছেন নিজ বাড়ি, হোটেলসহ অনেক কিছু।

শুধু কি তাই? ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে আটক বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ডান হাত এই সেলিম। যাকে নিজের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। দেশ ও বিদেশে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের অনেকের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে সেলিমের। এমনকি, সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও তার হৃদ্বতাপূর্ণ সম্পর্ক বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। ফলে, প্রতিমাসে অর্জিত আয়ের বড় একটা অংশ য়ায় তারেকের দরগায়। 

ক্যাসিনো ব্যবসায় বিসিবির পরিচালক লোকমানকে সেলিমই প্রথম নিয়ে আসে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকদিন থেকে সেলিমকে খুঁজতে থাকে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। এর সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে, এমন আশঙ্কায় লোকমানকে ইতিমধ্যে আরো দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। 

আটক লোকমানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার মূলহোতা সেলিমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকা ত্যাগ করার আগ মূর্হুতে বিমান থেকে তাকে নামিয়ে আনা হয়।

আটকের পর থেকে সেলিম প্রধানকে নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে, কে এই সেলিম? কিভাবে হলো তার উত্থান? 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেলিম প্রধান একজন ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারী।

সেলিমের উত্থান ঘটে মূলত ১/১১ এর সময়। ওয়ান ইলেভেন সরকারের অনুমতি নিয়েই তিনি বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি খাতে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস তৈরি করেন। সেলিম এ প্রেন্টিং প্রেস করেছেন জাপানের অর্থায়নে বলে তার আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ আছে। 

জানা গেছে, ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত লোকমানের হাত ধরে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সেলিমের। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সখ্যতা গড়ে ওঠে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ একাধিক নেতার সঙ্গে। যেখানে কয়েকজন মন্ত্রীও আছেন। 

এটাকে কাজে লাগিয়ে সেলিম উপরের সিড়ি বেয়ে ওঠেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। যার অধিকাংশ অর্থই তিনি থাইল্যান্ডে পাচার করেন। 

গোপনসূত্রের খবরে জানা যায়, বর্তমানে সেলিম দুটি ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি। এরমধ্যে রুপালি ব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপী তিনি। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজস থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। 

সেলিম বাংলাদেশে খুবই কম আসেন। ব্যাংককেই বেশি থাকেন তিনি। সেখান থেকে গত দু’বছর যাবৎ বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন। বিশ্বব্যাপী যে অনলাইন ক্যাসিনো সেটার বাংলাদেশ শাখা চালু করেন এই সেলিম। অনলাইন ক্যাসিনো সিন্ডিকেট বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। 

আটকের পর র‌্যাবের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, মাসে অন্তত ১০০ কোটি টাকা ব্যাংককসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করতেন ঢাকার এ ডন। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় অবৈধ এ ব্যবসাকে রমরমা করেছেন বলে অভিযোগে উঠেছে। 

এভাবে একের পর এক অপরাধ জগতে নাম লেখান সেলিম প্রধান। শুধু এখানেই শেষ নয়। অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার পাশপাশি পশুর খাটাল থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন সেলিম। রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ অনলাইন ক্যাসিনো গুরু সেলিমের হাতে। এসব পয়েন্ট থেকে মাসে কম করে হলেও ২০ কোটি চাঁদা তোলেন সেলিম প্রধান।

জানা গেছে, সেলিম ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য প্রধানগ্রুপ নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখানে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর লাইভ ক্যাসিনো মার্কেট পি২৪ লিমিটেড নামের গেমিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে উল্লেখ আছে।

ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডের ১১/এ। এখানে রয়েছে পি২৪ এর অফিস। আর কর্পোরেট অফিসের ঠিকানা- ডি-১ মমতাজ ভিশন, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডে ১১/এ ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশি ঠিকানা দেয়া আছে, ১৬৫/৯৬ মো ১০, সুরাসাক, শ্রী রাখা, চনবুন থাইল্যান্ড, ২০১১০।

সূত্র জানায়, সেলিমের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বাবার নাম হান্নান প্রধান। থাকেন ঢাকার মোহাম্মাদপুরে নূরজাহান রোডের একটি বাসায়। সেলিমের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরাশেন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার বলেন, অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো খেলায় জুয়ারিদের উদ্বুদ্ধ করতেন সেলিম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুলেছিলেন গোপন ক্যাসিনো। এসব অর্জিত টাকা পাচার করতেন বিদেশে। এমনকি প্রতি মাসে তারেক রহমানকে এক কোটি টাকা পাঠাতেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। 

আটক সেলিমকে নিয়ে গতকাল সোমবার রাতভর র‌্যাব গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর সড়কের ১১/এ নম্বর ভবনে অভিযান চালায়। এ ভবনেই পি২৪ এর অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন।

সেলিমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ দুপুরে বনানীর ২ নম্বর সড়কের ২২ নম্বর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সরোয়ার বিন কাসেম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

আই/এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি