`সৈয়দ হকের সর্বশেষ গানটি আমার জন্যই লেখা’
প্রকাশিত : ২১:৪৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২০:৪২, ৩ জানুয়ারি ২০১৮
সাব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বহুমাত্রীক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি অসংখ্যা কালজয়ী গান রচনা করেছিলেন। ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, রঙ ফুরালেই ঠুস,। ‘যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে, সে কি তুমি নও, ওগো তুমি নও’। তার রচিত এ ধরণের অসংখ্যা কালজয়ী গান এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। দীর্ঘ দিন তিনি গান লেখা থেকে বিরত ছিলেন।
সর্বশেষ চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ মো. সংগ্রামের ‘বাসর হবে মাটির ঘরে’ ছবির জন্য ‘মাটির ঘরে চাঁদ নেমেছে’ শিরোনামের একটি গান লিখেন। তার লিখা গান নিয়ে কথা হয় পরিচালক শাহ মো. সংগ্রামের সঙ্গে। সৈয়দ হকের সঙ্গে তার দেখা, কথা বলা এবং অজানা কিছু স্মৃতির কথা জানান ইটিভি অনলাইনকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আউয়াল চৌধুরী।
ইটিভি অনলাইন: কিভাবে সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ ঘটলো?
শাহ মো. সংগ্রাম: প্রথমেই সৈয়দ শামসুল হক স্যারকে আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তিনি আজ আামাদের মাঝে নেই। আমার অনেক দিনের একটা ইচ্ছা ছিল সৈয়দ শামসুল হক স্যারকে দিয়ে গান লিখাবো। আমার সে ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। তিনি তার সর্বশেষ গানটি আমার জন্য লিখেছেন। এটি আমার পরম পাওয়া। তার মতো এতবড় একজন মানুষ অসুস্থ থেকেও বহু বছর পর আমার জন্য গান লিখেছেন।
তাঁর সঙ্গে আমার একদিন শিল্পকলা একাডেমিতে কথা হয়। তিনি একটা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। আমি তাকে পরিচয় দিয়ে কথা বলি। তিনিও খুব স্নেহশীলভাবে আমার সঙ্গে আলাপ করেন। পরে তার নাম্বারটা চাইলে তিনি বলেন যখন কাজ করবে তখন নাম্বার নিও। এরপর অনেক দিন তাঁর সঙ্গে আর দেখা হয়নি।
ইটিভি অনলাইন: তারপর কিভাবে তাঁর সঙ্গে আবার দেখা হলো?
শাহ মো. সংগ্রাম: এরপর আমি আমার ছবির কাজ শুরু করতে গেলে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করি। কিন্তু তাঁর সাক্ষাৎ পাচ্ছিলাম না। পরে তাঁর বাড়ীর ঠিকানা নিয়ে সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সহযোগিতায় তাঁর সঙ্গে দেখা করি। তখন তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে বলি স্যার আমার চলচ্চিত্রের জন্য একটা গান লেখাতে চাচ্ছি। যদি আপনি আমাকে একটু সময় দেন। তখন তিনি বলেন আমিতো প্রায় ২০ বছর ধরে সিনেমার কোনো গান লিখি না। তখন আমি বলি স্যার আপনি এক বছর আগে আমাকে কথা দিয়েছিলেন যখন প্রয়োজন হবে তখন আসার জন্য। স্যার এখন আমার প্রয়োজন। তখন তিনি বলেন আমার অনেক কিছুই এখন মনে থাকেনা, পরে এসো। এরপর আমি আর বিরক্ত না করে চলে আসি।
ইটিভি অনলাইন: পরে কিভাবে তাঁকে রাজি করালেন?
শাহ মো. সংগ্রাম: আসলে তাঁর লিখা একটা গান আমি মনে প্রাণে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই লিখতে চাচ্ছেন না। এরপর আমি প্রায় সময়ই তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে বসে থাকতাম। কখনো কখনো দাঁড়িয়ে থাকতাম। যদি তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তিনি যদি আমাকে একটু সময় দেন। এভাবে অনেক দিন পার হয়ে গেল। আমি বার বার চেষ্টা করতে থাকলাম। এরপর হঠাৎ একদিন তাঁর এক আত্বীয়র সঙ্গে আমার দেখা হয়। পেইন্টিং এ কাজ করেন। তিনি সৈয়দ হকের একটি ছোট পেইন্টিং রুম আছে সেখানে আমাকে নিয়ে গেলেন। তাকে আমি সব কিছু খুলে বলি। এরপর তার মাধ্যমে স্যারের সঙ্গে কথা হলে স্যার গান লিখতে রাজি হন।
স্যার আমার কাছ থেকে পুরো গল্পটি শুনলেন। শুনে তিনি পছন্দ করলেন। কে কে আর্টিস্ট থাকবে সে সম্পর্কেও জানলেন। এরপর জানতে চাইলেন বাকি গান কে লিখেছে। আমি তাকে জানাই কবির বকুল। তিনি খুশি হয়ে বললেন সে ভাল গান লেখে। এরপর জানতে চাইলেন গাইবে কে। আমি বলি রুনা লায়লা ও সুবীর নন্দী। তাদের নাম শুনে তিনি বললেন তোমার সিলেকশন ঠিক আছে। তারপর বললেন সুর করবে কে। আমি বলি আলাউদ্দিন আলী। তিনি নাম শুনে খুব খুশি হলেন। এবং বললেন তুমি একদিন পরে এসো। আমি পরের দিন বিকালে গেলাম কিন্তু তিনি গান লিখতে পারেননি। বললেন পরের দিন এসো। পরের দিন তার বাসায় এসে দেখি তিনি নেই। কোনো অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। এরপর তিনি পুরো গানটি লিখে আমাকে দেন। আমি খুশি মনে গানটি নিয়ে সুরকার আলাউদ্দিন আলীর কাছে দেই। তিনি গানটি দেখে বললেন এটাতো সিঙ্গেল হয়ে গেছে। হবেতো ডুয়েট। এখন আমি গানটি নিয়ে কি করবো চিন্তায় পড়ে গেলাম।
ইটিভি অনলাইন: স্যারতো এর মাঝে অসুস্থ হয়ে গেলেন, আপনি কি তার কাছে আবার গিয়েছিলেন?
শাহ মো. সংগ্রাম: স্যার পুরো পুরি অসুস্থ হওয়ার আগেই গানটি লিখেন। ওই সময় আমি গান নিয়ে খুব টেনশন করছিলাম কি করবো। এমনিতে স্যার লিখতে চাচ্ছিলো না। তাও কষ্ট করে লিখলো। এখন কিভাবে আবার তার কাছে যাই। এরপরও ভয়ে ভয়ে আমি তার বাসায় যাই। তাঁকে বলি স্যার গানটাতো হবে ডুয়েট, হয়ে গেছে সিঙ্গেল। তিনি বললেন তুমিতো আগে এটা বলনি। তখন আমি বলি স্যার বিষয়টা আপনাকে বুঝাতে আমার ভুল হয়ে গেছে। এখন আরেকটু কষ্ট করে যদি লিখে দিতেন। তখন তিনি আমাকে ১৫ দিন পরে আসতে বললেন। এরপর ঠিক সময়ে গেল স্যার গানটি আমাকে দিয়ে দেন।
এই গান রুনা লায়লা দেখার পর বললেন অনেক দিন পর একটা ভাল গান হাতে পেয়েছি। এমন গান এখনতো হয়না। সত্যি আমি খুব খুশি।
এসি/
আরও পড়ুন