ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০১, ২০ জানুয়ারি ২০২০

বাংলা ছবির শক্তিশালী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন ছিল গতকাল। এই অভিনেতা ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগ দেখেছেন, আবার এক মিলেনিয়াম থেকে আর এক মিলেনিয়ামে যাত্রার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। মঞ্চ, ছোট পর্দা, বড় পর্দা– সব মাধ্যমেই তাঁর নিয়মিত কাজে বয়স কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ৮৫ বছর বয়সের এই অভিনেতা শুধু বর্তমান নয়, আগামী কয়েক প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পেশাগত জীবন অত্যন্ত ঘটনাবহুল ও বহু দেশী-বিদেশী পুরস্কার ও সম্মানে পরিপূর্ণ। তাঁর জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ ৫টি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হলো-

ঘোষক সৌমিত্র
অল ইন্ডিয়া রেডিও’র ঘোষক হিসেবেই পেশাগত জীবন শুরু করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গম্ভীর কণ্ঠস্বরের কারণে অল্প বয়স থেকেই প্রশংসা পেতে শুরু করেন। কলেজ জীবন থেকেই মঞ্চাভিনয়ে হাতেখড়ি তাঁর। অভিনয়ে তাঁর প্রথম গুরু ছিলেন অহিন্দ্র চৌধুরী। অভিনেতা হিসেবেই যে জীবনে তিনি এগোতে চান, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিশির ভাদুড়ির একটি নাটক দেখার পর। 

নাকচ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়
সত্যজিৎ রায় ১৯৫৬ সালে ‘অপরাজিত’ সিনেমার জন্য নতুন মুখের সন্ধান করছিলেন, তখনই প্রথম বার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হয় বিশ্ববরেণ্য এই পরিচালকের। তখন সৌমিত্রের বয়স ২০ বছর, সদ্য কলেজ পাস করেছেন। তাঁকে দেখে অপু চরিত্রে পছন্দ হলেও শেষ পর্যন্ত সৌমিত্রের কাস্টিং নাকচ করেন দেন সত্যজিৎ রায়। অপু চরিত্রে আরও কম বয়সী কাউকে চেয়েছিলেন পরিচালক। এর ২ বছর পর সত্যজিৎ রায় যখন ‘জলসাঘর’-এর শুটিংয়ে ব্যস্ত, তখন ওই শুটিংয়ে একদিন পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে যান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শুটিংয়ের ব্রেকে সত্যজিৎ রায় ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আলাপ করিয়ে দিয়ে বলেন– “এ হল সৌমিত্র। আমার পরের ছবি ‘অপুর সংসার’-এ অপু চরিত্রে অভিনয় করছে।” তখন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা, কারণ তিনি সেই প্রথম জানতে পারেন যে মনে মনে কাস্টিংটা ঠিক করে রেখেছিলেন সত্যজিৎ রায়।

১৯৬১ সালে খল-চরিত্রে
এই বছরটি ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের একটি মাইলস্টোন। ওই বছরেই মুক্তি পায় তপন সিনহা পরিচালিত ছবি ‘ঝিন্দের বন্দী’। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে সৌমিত্রকে প্রথম দর্শক পেয়েছিলেন একটি খল-চরিত্রে। যে অভিনেতা অপু হিসেবে দর্শকের মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘দেবী’ অথবা ‘সমাপ্তি’-তে যে সুদর্শন নায়ক ঝড় তুলেছেন অভিনয়ে, সেই অভিনেতাকে তপন সিনহা দিলেন একটি নিষ্ঠুর ভিলেনের চরিত্র। যে উপন্যাস অবলম্বনে ‘ঝিন্দের বন্দী’ করা হয়, তাতে ময়ূরবাহনকে একজন অত্যন্ত সুদর্শন ও লম্পট যুবক হিসেবে দেখানো হয়। এমন একটি চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে যে কেউ ভাবতে পারেন, সেটাই ছিল আশ্চর্যের। অভিনেতার পেশাগত জীবনে তাই এই বছরটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান
১৯৭০ সালে যখন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এর কারণে তিনি বলেছিলেন, ওই সময়ে সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য তেমন কিছুই করছিল না। তাই আলাদা হয়ে একজন ইন্ডিভিজুয়াল হিসেবে ওই পুরস্কার আমি নিতে চাইনি। এর অনেক বছর পর, ২০০৪ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে পদ্মভূষণ পদক দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া ফ্রান্সের দুটি সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ‘অর্ডার দি আর্ট এ দে লেটার’ হল শিল্পীদের জন্য ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে তিনিই প্রথম এই সম্মানে ভূষিত হন। ফ্রান্সের ‘লিজিয়ঁ অফ অনার’ হল সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান, প্রথম ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে ২০১৮ সালে এই সম্মানে ভূষিত হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

১৯৮৬-তে সংলাপ
সত্যজিৎ রায়ের ছবির বাইরে এমন দু-একটি ছবি এবং চরিত্র রয়েছে যার সংলাপ অথবা দৃশ্য, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে কিংবদন্তি হয়ে আছে। তার প্রথমটি অবশ্যই ‘কোনি’ ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ– ‘ফাইট কোনি ফাইট’। এই সংলাপটি ঘুরে ফিরে বাংলার পপুলার কালচারে পরিণত হয়। আরও একটি সংলাপ দর্শকের মুখে মুখে ফেরে, যে সংলাপটি তাঁর নয়, কিন্তু ওই সংলাপটি বলা হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। ছবিতে সেই সংলাপটি যতবার এসেছে, ততবারই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নীরব থেকেছেন। আর তাঁর সেই নীরবতা যে কতটা মর্মভেদী, ওই চরিত্রটি যে কতটা অসহায়, যাঁরা ছবিটি দেখেছেন তাঁরা কোনও দিনই ভুলতে পারবেন না। ছবির নাম ‘আতঙ্ক’ এবং সংলাপ– ‘মাস্টারমশায়, আপনি কিন্তু কিছু দেখেননি।’ ঘটনাচক্রে ওই দুটি ছবিই মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি