ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

স্টার হলে একটা কালো ছায়া পিছু ধাওয়া করবেই: শাকিব খান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৩, ৩১ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ২১:৪৫, ৩১ মার্চ ২০১৮

ভালোর চেয়ে আমার সম্পর্কে খারাপ খবর আরও বেশি ছড়াবে। এটা আমি মন থেকে মেনে নিয়েছি। স্টার হলে একটা কালো ছায়া পিছু ধাওয়া করবেই। এটাই নিয়ম! এই কালো ছায়ার কাজ হল স্টারকে বেইজ্জত করা। আমি এগুলো গায়ে মাখি না। এমনটাই বললেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান। কলকাতার ‘এবেলা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।   

মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘চালবাজ’ ছবি সম্পর্কে শাকিব খান বলেন, চালবাজ প্রজেক্টটা নিয়ে আমি খুব এক্সাইটেড! ভেবেছিলাম, ‘চালবাজ’ই ২০১৮’য় আমার প্রথম ছবি হবে। কিন্তু সেটা হলো না। ইনশাল্লাহ্, ইট উইল বি আ বিগ হিট মুভি।  

শুভশ্রীর সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, নবাব ছবিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। প্রথম থেকেই ওঁর সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রিটা বেশ ভাল! ‘নবাব’ বিগ হিট ছিল। বিদেশেও মুক্তি পেয়েছিল। ‘শিকারি’র সময় থেকে আমরা ফের ওভারসিজ রিলিজ করছি। তার আগেও বিদেশে ছবি মুক্তি পেত, কিন্তু ছাড়া ছাড়া ভাবে। ‘নবাব’ মিডল-ইস্টে খুব ভাল ব্যবসা করেছিল। কানাডা, ফ্রান্সেও। আমার বিশ্বাস, ‘চালবাজ’ও দেশ ও বিদেশের মাটিতে ভাল ব্যবসা করবে!

বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শাকিব বলেন, খুব ভগ্নদশায় আমি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটাকে পেয়েছিলাম। আপনি যদি ২০০০ সাল অবধি বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিকে দেখেন, তখন আমাদের ওখানে টলিউডের চারগুণ বাজেটের ছবি তৈরি হতো। সেই সময় আমরা তখন দু’কোটি টাকায় ছবি বানাতাম। টলিউডে ছবির বাজেট তখন ৫০ লক্ষ। তখন আমাদের সুপারস্টার ছিলেন সলমন শাহ। শাহরুখ খানের সঙ্গেও ওঁর ভাল আলাপ ছিল। তখন স্টারডম কাকে বলে, সেটা ওঁকে শিখতে হয়! তখনকার তারকাদের হাতে প্রায় ২০-২৫টা ছবি থাকত। আমাদের ছবি সুপারহিট হলে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যবসা করত।

তাহলে কেন বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি পিছিয়ে পড়ল? এর উত্তরে শাকিব বলেন, সালমান শাহ মারা গেলেন। আরও যারা স্টার ছিলেন, তারা অনেকে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে বিয়ে করে নিলেন। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসি, তখন আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা ক্রান্তিকাল চলছিল। তারপর কোথা থেকে একটা অশ্লীল পিরিয়ড চলে এসেছিল। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তখন ফাঁকা মাঠ। কোনও ভাল তারকা নেই। সেই সুযোগে কিছু দুষ্টু লোক ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে পড়েছিল। তাঁরাই অশ্লীলতাগুলো করত! মান্না ভাই সেই সময় ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবক ছিলেন। ওঁর নেতৃত্বে ইন্ডাস্ট্রি ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। সিনেমা হল রাজকীয় ব্যবসা! সারা বিশ্বে তারাই সিনেমা বানান যাদের প্রচুর অর্থ রয়েছে, সঙ্গে একটা শিল্পী মনও রয়েছে। অনেক নামী প্রযোজকও অশ্লীলতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেন। ওই সময়টাতেই ইন্ডাস্ট্রি অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল। তারপর ইন্ডাস্ট্রিটাকে নতুন করে সাজাতে প্রচুর সময় লেগে গেল। আজকে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি যে অগ্রগতিটা করেছে, সেটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ১৯৯৫-২০০০ সালের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়নি।

যৌথ প্রযোজনা সম্পর্কে শাকিব খান বলেন, যৌথ প্রযোজনার ছবি মিঠুনদা’র (চক্রবর্তী) সময় থেকেই হয়ে আসছে। সেই সময় ‘অন্যায় অবিচার’এর মতো ছবি হয়েছিল। রাজেশ খন্না, শশী কপূরও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। মাঝে কিছুটা সময় ব্যাপারটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার যৌথ প্রযোজনা শুরু হয়েছে। এপার বাংলা-ওপার বাংলা দু’টো দেশ হতে পারে, কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি তো একই! আমাদের রুচিবোধও এক। যেদিকে ব্যাপারটা এগোচ্ছে, সেটা ভালর দিকেই!

নিজের দু:সময়ে যারা কাছে ছিলেন তাদের সম্পর্কে শাকিব খান বলেন, আমি সেই মানুষগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমাকে ভালবাসেন। কিছুদিন আগেই খুব খারাপ সময় এসেছিল আমার জীবনে। কিন্তু ওই মানুষগুলোর ভালবাসা কখনও কমেনি। জীবনে তো কম কিছু দেখলাম না। কিন্তু খারাপ সময় আমাকে ছুঁতেও পারেনি। কেন জানেন? ওই মানুষগুলোর নিঃস্বার্থ ভালবাসা! ওঁরাই আমার জীবনের সব কিছু। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার শত্রু যারা রয়েছে, তারা হয়তো ভেবেছেন শাকিব খানের অধ্যায় এবার শেষ! কিন্তু শেষ তো হই-ইনি, বরং নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছি। এটাই তো আল্লাহর রহমত! খারাপ সময়েই কাছের মানুষকে চেনা যায়।

তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যে সংবাদমাধ্যমে এত কাটাছেঁড়া হয়, খারাপ লাগে না? জানলা দিয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে শাকিব খান বলেন, ইট্’স পার্ট অফ লাইফ! মানুষ আমাদের ভালবাসেন। সেই কারণেই আমাদের সম্পর্কে তাদের এত আগ্রহ। ভালাবাসা থেকেই আসে ব্যাপারটা। খারাপ লাগে না তা নয়, কিন্তু ঠিক আছে...!

অতিরিক্ত আগ্রহ তো কারও বিরক্তি বা যন্ত্রণার কারণও হতে পারে!
যন্ত্রণা তো হয়ই! ভালর চেয়ে আমার সম্পর্কে খারাপ খবর আরও বেশি ছড়াবে এটা আমি মন থেকে মেনে নিয়েছি। স্টার হলে একটা কালো ছায়া পিছু ধাওয়া করবেই। এটাই নিয়ম! এই কালো ছায়ার কাজ হল স্টারকে বেইজ্জত করা। আমি এগুলো গায়ে মাখি না। কারণ, জীবনে সবচেয়ে খারাপটা আমি দেখে ফেলেছি। তাই নতুন করে আর কিছু দেখার নেই! জীবনে খারাপ মুহূর্ত আসারও সুবিধা আছে। এগুলো পরিণত করে তোলে। জীবনে প্রতিটা খারাপ মুহূর্তে আমাদের একটা করে শিক্ষা দিয়ে যায়।

এসি 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি