স্টিভ স্মিথ : স্পিন-জাদুকর থেকে ব্যাটিং-সম্রাট
প্রকাশিত : ১৮:৪৭, ২৭ অক্টোবর ২০১৭
অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের জীবনের গল্পটা খুবই রোমাঞ্চকর। রাতারাতি নিজের ক্যারিয়ারের মোড় পাল্টে দিয়েছেন তিনি। একজন লেগ স্পিনার হিসেবে দলে এসে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর ব্যাটসম্যান হয়েছেন এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। শুধু তা-ই নয়, মাত্র ২৫ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের অধিনায়কও হয়েছেন তিনি। ব্যাটিং লাইনআপের গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর জায়গাটিও তার দখলে। রূপকথার মতো ক্যারিয়ারটাকে যেভাবে বদলেছেন তা বড় এক বিস্ময় !
স্মিথের জন্ম অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১৯৮৯ সালের জুনের ২ তারিখে। ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করেছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে। ২০০৮ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে লেগ স্পিনার হিসেবে সুযোগ পান তিনি। ঐ বছরেই বিগ ব্যাশ টুর্নামেন্টে এক ইনিংসে ৪ উইকেটসহ ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন স্টিভ স্মিথ। তার ওই নৈপুণ্যের জন্য টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে টি-টুয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতেছিল নিউ সাউথ ওয়েলস। স্টিভেন স্মিথ ছিলেন সেই দলের সদস্য। ফাইনালে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর বিপক্ষে ৩৩ রান করার পাশাপাশি লেগ স্পিনে ২ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে ডাক পান স্মিথ। দলের বিশেষজ্ঞ স্পিনার নাথান হারিজের অনুপস্থিতিতে তাকে ডাকা হয়। কিন্তু বক্সিং ডে টেস্টের আগ মুহুর্তে হারিজ সুস্থ হয়ে ফিরে আসলে তাকে হতাশ হতে হয়। তবে ২০১০ সালেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পা রাখেন স্মিথ। ওই বছরের ৫ ফেব্রয়ারি টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় পাকিস্তানের বিপক্ষে। ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটেও অভিষেক হয়ে যায় তার। আর টেস্ট অভিষেক হয় ১৩ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে। অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিন ভেলকিতে তুলে নিয়েছিলেন নেন ৩ উইকেট।
অজি দলের হয়ে অংশ নেন ২০১০ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপেও। বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। এভাবে বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার চলতে থাকে। আইপিএলে খেলতে এলে স্মিথের ব্যাটিং দৃষ্টি কাড়ে সবার। আইপিএলে বেশ কয়েকটি ম্যাচ জেতানোয় অজি দলের মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করার সুযোগ মিলে তার। সেখান থেকেই নিজেকে মেলে ধরেন। সুযোগটা কাজে লাগান। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ইংল্যান্ডের ওভালে অনুষ্ঠিত ২০১৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের শেষ ও ৫ম টেস্টে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্মিথকে।
গত কয়েক বছরে ব্যাট হাতে রানের বান ছুটিয়ে টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যাটা নিয়ে গেছেন ২০-এ। স্মিথের টেস্ট গড় এখন ৫৬.৮৫। ওয়ানডেতেও চলছে স্মিথের রাজকীয় ব্যাটিং। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে পালন করেছেন অসামান্য ভূমিকা।
মাইকেল ক্লার্কের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হয়ে দলকে অনেক জয় এনে দিয়েছেন এই ডানহাতি। ভারতের মাঠে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজেও চার ম্যাচে তিনটি শতক হাকিয়েছেন স্মিথ।
পরিশ্রম ও সাধনার ফলে এক কালের লেগস্পিনার সাম্প্রতিক সময়ের টেস্টের সেরা ব্যাটসম্যান। ৯৩৬ পয়েন্ট নিয়ে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেই আছেন অজি দলপতি। জু রুট, কেন উইলিয়ামসন-ভিরাট কোহলিরা সবাই স্মিথের পেছনে। ক্যারিয়ারে অনেক বড় বড় বাধাকে জয় করা স্মিথের সামনে এখন অ্যাশেজ সিরিজ। অ্যাশেজকে সাধারণত ‘যুদ্ধ’ বলে ডাকেন ইংলিশ ও অজিরা। কিছুদিন পরই শুরু হতে যাওয়া এই যুদ্ধে জয়ী হয়ে স্মিথ কি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন হাতছাড়া হওয়া সেই ‘ছাইয়ের ট্রফি’টা ? শেন ওয়ার্ন, পন্টিংদের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন স্মিথের নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়া ফিরিয়ে আনবে গৌরব ও ঐতিহ্যের অ্যাশেজ ট্রফিটি।
সূত্র : ক্রিকইনফো, ক্রিকবাজ
এমআর/ডব্লিউএন