তারকালাপে পারভেজ
‘স্টেজ শো না করলে রাতে ঘুম হয় না’
প্রকাশিত : ১৭:৫২, ২২ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ০৯:৪৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৭
এ প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়ক পারভেজ সাজ্জাদ। ‘এ জীবন হারিয়ে যায়, যাবি যদি উড়ে দূরে, পথ গেছে পথের আড়ালে’সহ তার অসংখ্য গান আজ লাখো মানুষের ঠোঁটে ঠোঁটে। বিভিন্ন ধারার গান করলেও সুফি গান তাকে দিয়েছে অনন্য পরিচিতি। সুরের অলৌকিক শক্তি দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন পারভেজ।
পারভেজ স্টেজ শো, টেলিভিশন লাইভ, মিউজিক ভিডিও, চলচ্চিত্রে গান-সবকিছুতেই নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তবে স্টেজ শো’তেই বেশি এনজয় করেন চিরতরুণ এই শিল্পী। স্টেজে তার দূরন্ত গতি ও প্রাণবন্ত উপস্থিতি শ্রোতা-দর্শকদের আন্দোলিত করে। নিজেকে উজার করে দেন পারভেজ। গানপাগল মানুষটির সরল স্বীকারোক্তি- ‘স্টেজ শো করতে না পারলে রাতে ঘুমোতে পারি না। মন ছটফট করে।’
শৈশব থেকে গানের সঙ্গে যার বসবাস সেই মানুষটি এখনও গানের তালিম নিচ্ছেন। তার মতে সঙ্গীত এমনই একটা মাধ্যম যেখানে চর্চার শেষ নেই। আমৃত্যু গানের সঙ্গেই থাকতে চান।
পুরান ঢাকায় জন্ম নেওয়া এই সুফি গায়কের মুখোমুখি হয়েছে একুশে টেলিভিশন (টিভি) অনলাইন। তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন - সোহাগ আশরাফ
একুশে টিভি অনলাইন : ভাইয়া শুভ সকাল। কেমন আছেন?
পারভেজ সাজ্জাদ : শুভ সকাল। অনেক ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ।
একুশে টিভি অনলাইন : সম্প্রতি গান নিয়ে কেমন ব্যস্ততা আপনার?
পারভেজ সাজ্জাদ : আসলে শীতের সময়টাতে কাজের চাপ একটু বেশি-ই থাকে। ট্রাডিশনালি বলতে গেলে এখন আমাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। আমাদের স্টেজ প্রোগ্রামের সময় এখন। নভেম্বর থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত তাই ব্যস্ত থাকতে হয়।
তাছাড়া শীতের সময়গুলোতেই রেকর্ডিং একটু বেশি থাকে। দুইটা সিডিউল মিলিয়ে কাজ করাটা এ সময়টাতে একটু কঠিন হয়ে যায়। সম্প্রতি দুটি সিঙ্গেলের কাজ শেষ করলাম। আর দুটির কাজ চলছে। সেগুলোর ভিডিওর কাজ হাতে নিয়েছি। সঙ্গে লাইভ প্রোগ্রামগুলো করতে হচ্ছে।
একুশে টিভি অনলাইন : নতুন যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত যদি বলতেন। কি ধরণের গান? গানের কথা-সুর কে করেছেন?
পারভেজ সাজ্জাদ : শেষ যে কাজটি করলাম সেই গানটির নাম হচ্ছে ‘জিকির’। গানটি একেবারেই সুফি ঘরানার একটি গান। ইশতিয়াক রুপ ভাই লিখেছেন। তিনি নিউ ইয়র্ক প্রবাসী। খুব ভালো লিখছেন তিনি। আমার সুরে গানটির কম্পোজিশন করেছে বর্ণ। আশা করছি এ গানটির ভিডিও এ বছরেই প্রকাশ পাবে। বাকিগুলো আগামী বছর প্রকাশ পাবে। গানটির মধ্যে সৃষ্টিকর্তার রহমতগুলোর বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনাকে আমরা সাধারণত সুফি ঘরানার গানে একটু বেশি পেয়ে থাকি। সুফি গানের প্রতি ভালোলাগাটা কি একেবারে শুরু থেকেই?
পারভেজ সাজ্জাদ : ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের গানের সঙ্গেই বেড়ে ওঠা। পুরান ঢাকায় জন্ম আমার। পরবর্তী সময় গান শেখার সৌভাগ্য হয়। সেমি ক্ল্যাসিক্যাল গানের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। বড় হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি টানতে শুরু করে সুফি গান। অনুপ্রেরণা ওস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলী খান। আমাদের পারিবারিক আবহটা এমন ছিল, কখনই গান শোনার জন্য আলাদা করে সময় বের করতে হয়নি। গান প্রায় বেশিরভাগ সময়ই বাজত। আমার মা নিজেই গাইতেন। নানু বাড়িতে রীতিমতো ওস্তাদ রেখে গান শেখানো হতো।
একুশে টিভি অনলাইন : বর্তমানে প্লে-ব্যাকে কেমন ব্যস্ততা আছে?
পারভেজ সাজ্জাদ : আমি আসলে কাজ খুব বেছে বেছে কাজ করার চেষ্টা করি। আমি ক্যারিয়ার শুরু করেছি ২০০৮ সালে। ‘হৃদয় মিক্সড’, নামে একটি মিক্সড অ্যালবামের মাধ্যমে। এরপর আমার তিনটি সলো অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। একক অ্যালবাম ওই তিনটা-ই। আমি অনেক সময়ই এই প্রশ্নের সম্মুখিন হই যে- কাজ এতো কম কেনো? মিক্সড অ্যালবামে আমার গান আছে হাতে গোনা খুব বেশি হলেও বিশ-ত্রিশটি হবে। প্লে-ব্যাকেও গানের সংখ্যা এমন হবে। মাস খানেক আগে একটি প্লে-ব্যাকে কাজ করলাম। আগামী বছর সিনেমাটি মুক্তি পাবে। একেবারে সিলেক্টিভ কাজ ছাড়া আমি আপাতত কিছু করছি না।
একুশে টিভি অনলাইন : কেনো আপনি এতো কম সংখ্যক কাজ করছেন?
পারভেজ সাজ্জাদ : আসলে আমি অনেক বড় শিল্পী নই; এখনও কাজ শেখার চেষ্টা করছি। আমি আসলে অনেক কিছু পারি না। অনেক কিছু জানি না। সে জন্য হুট করেই অনেক গান গেয়ে ফেলতে পারি না। আমি অল্প কিছু দিন হয়েছে শিখেছি, অল্প কিছু জানি। তাই অনেক কাজ আমি করতে পারি না। তবে নিজের ভালো লাগার জায়গা তো থাকেই। যদি একটু সেমিক্লাসিক্যাল কিছু ব্যপার থাকে, সুফি কিছু টাচ থাকে আমি ওগুলো গ্রহণ করি। তারপরও বলি আমার অজ্ঞতার জায়গা থেকে আসলে অনেক কাজ করা হয় না। আমি আসলে জানি যে- আমি কতটুকু জানি না। যতটুকু জানি সেটা মহা সমুদ্রের এক ফোটা দু’ফোটা জলের মতই। বড়াই করার মত কিছুই করতে পারিনি। আমার বড়াই আমার শ্রোতারা। যারা আমার গান শোনেন। যাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এখানে। আমার অহংকার আমার শিক্ষকরা, আমার বন্ধুরা, আমার পরিবার সবাই। যারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন।
একুশে টিভি অনলাইন : প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে ইউটিউবে শিল্পীরা নিজেদের চ্যানেলে গান প্রকাশ করছেন। দর্শক ও শ্রোতারাও এটিকে বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করছে। এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
পারভেজ সাজ্জাদ : আমার যে ভিডিও দুটি প্রকাশ পাচ্ছে তার মধ্যে যে গানটি এখন করলাম ‘জিকির’ এটার কিন্তু অডিও রিলিজ করিনি আমি। শুধু ভিডিওটিই রিলিজ করবো আমার ইউটিউব চ্যানেলে। বিষয়টিকে আমি খুব পজিটিভলি দেখি। এটা প্রমাণ করে আমরা কিন্তু বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলছি।
একুশে টিভি অনলাইন : শুরু থেকে এ পর্যন্ত যে কাজগুলো করেছেন তার মধ্যে কোন গানটি শ্রোতারা বেশি গ্রহণ করেছে বলে মনে হয়? আপনার ভালোলাগার গান কোনটি?
পারভেজ সাজ্জাদ : আমি আগেই বলেছি, আমি ভালো শিল্পী নই। তাই আমার গাওয়া ভালোলাগার তেমন কোনো গান নেই। তবে আমি তো স্টেজ শো করি। এটাই এককথায় আমার পেশা। সেখানে কিছু গানের অনুরোধ পাই। সব থেকে যে গানটির অনুরোধ বেশি পাই সেটার শিরোনাম হচ্ছে-‘যাবি যদি’। তারপরে যে গানটির অনুরোধ পাই সেটা হচ্ছে-‘এ জীবন’। এরপর ‘পথ’ নামে একটা গান আছে। ‘কথা’- নামে আরেকটা গান আছে। ‘জীবনের আয়না’ নামে মিক্সড অ্যালবামে একটা গান করেছিলাম। আসলে বেশ কিছু গানের অনুরোধ পাই। তবে ওই ভাবে যদি বলি সাইনিং গান হচ্ছে-‘যাবি যদি’। কারণ মানুষ আমাকে দুটি নামে পরিচয় দেয়। একটা হচ্ছে- ‘যাবি যদি’ পারভেজ। অথবা ‘পথ’ পারভেজ।
আর নিজের ভালো লাগার কথা যদি বলি। আমার কাজ আমারই ভালো লাগে না। সত্যি কথা বলতে আমি খুব খুতখুতে টাইপের মানুষ। সব সময় মনে হয়েছে আরও একটু যদি ভালো করতাম। আমার থার্ড সলো অ্যালবামে এক বছর সময় নিয়েছি শেষ করার পরে। দুটি গান আবার রিঅ্যারেঞ্জ করেছি। পুরোটার মিক্সড আবার রিমিক্সড করা হয়েছে। মাস্টারিং এ যাওয়ার পরে আবারও মাস্টারিং ফেলে নতুন করে করেছি। মোটকথা আমার কাজে আমি তৃপ্ত না।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনি তো নিয়মিত স্টেজ শো করছেন। দর্শকদের সামনে সরাসরি শো করতে কেমন লাগে?
পারভেজ সাজ্জাদ : স্টেজটা আমার কাছে চাইল্ডহুড প্লে-গ্রাইন্ড। আমি স্টেজে না গাইলে আমার ঘুম হয় না রাতে।
একুশে টিভি অনলাইন : আমরা জানি যে গানের পাশাপাশি আপনি ব্যাবসাও করছেন। ব্যবসা নিয়ে কেমন ব্যস্ততা চলছে? নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
পারভেজ সাজ্জাদ : আমাদের রেস্তোরাঁর একটিভ ব্রাঞ্চ চারটি। ইন একটিভ আছে একটি। মোট পাঁচটি ব্রাঞ্চ। নতুন দুটি ব্রাঞ্চের পরিকল্পনা আছে। দুটি আলাদা জায়গায়। গানের পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে সময় দিতে হয়। সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ততা।
একুশে টিভি অনলাইন : অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
পারভেজ সাজ্জাদ : একুশে টিভি অনলাইনকেও অনেক ধন্যবাদ।
এসএ/এআর