স্তন ক্যান্সার কি ও কেন হয়?
প্রকাশিত : ১৬:১০, ২৩ মার্চ ২০২০
ডা. শাহনাজ পারভীন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর পনেরো হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যানসার এ আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে শতকরা আটানব্বই শতাংশের বেশি নারী তবে খুব অল্প সংখ্যক পুরুষও স্তন ক্যানসার এ আক্রান্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এ রোগে মারা যান।
স্তনে ক্যান্সার হওয়ার সাথে সাথে নির্ণয় করতে পারা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যুর হার অনেকটা কমে যায়। এছাড়া আক্রান্ত হবার প্রথম দিকে ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে স্তন পুরোপুরি না কেটে অপারেশন করা যায়। যার ফলে স্তনের সৌন্দর্য রক্ষা হয় এবং জীবনমান হয় সমৃদ্ধ।
স্তন ক্যানসারের নানা বিষয় নিয়ে একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন- শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের জেনারেল এন্ড অনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জারী বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক ডাঃ শাহনাজ পারভীন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মুছা মল্লিক।
একুশে টেলিভিশন-স্তন ক্যানসার কী ?
ডা. শাহনাজ পারভীন-স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে ঐ অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পান্ডা পরিণত হয়। বাংলাদেশের নারীরা যেসব ক্যান্সার আক্রান্ত হন তার মধ্যে স্তন ক্যানসার শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতার অভাবের জন্য বেশির ভাগ রোগীই শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
একুশে টেলিটেলিভিশন- স্তন ক্যানসার এর লক্ষণগুলো কী কী?
ডা. শাহনাজ পারভীন- অনেকগুলো লক্ষণের মাঝে অন্যতম-
• স্তনে চাকা অনুভব
• বোঁটায় ঘা বা ক্ষত
• স্তন দিএ রক্ত পড়া
• চামড়া কমলালেবুর খোসার মতো হয়ে যাওয়া
• বোঁটা ভিতরে ঢুকে যাওয়া
• বোঁটার চারপাশে কালো অংশে চুলকানীর লক্ষণ নিয়ে আসা ইত্যাদি।
একুশে টেলিভিশন- ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার কারণ সম্পর্কে জানতে চাই?
ডা. শাহনাজ পারভীন - বিশ থেকে নব্বই বছর বয়সে এটা সাধারণত হয়। যাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মা, খালা, বোন বা নানীর স্তন ক্যান্সারের আক্রান্ত হবার ইতিহাস আছে তাদের ঝুঁকি বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে - শতকরা পাঁচ ভাগ জেনেটিক মিউটেশন এর জন্য এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এছাড়া অতিরিক্ত অ্যালকোহল খেলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় অতিরিক্ত ওজন। দীর্ঘদিন ধরে হরমোন থেরাপি গ্রহন। আগে রেডিয়েশন পাওয়া রোগী ইত্যাদি কারণ রয়েছে।
একুশে টেলিভিশন - স্তন ক্যান্সারে কী ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হয় বা স্ক্রিনিং কিভাবে করা হয়?
ডা. শাহনাজ পারভীন - পঁয়ত্রিশ বছর বয়স হলেই প্রত্যেক মহিলার নিজ নিজ স্তন পরীক্ষা (প্রতি মাসে) ও বছরে অন্তত একবার USG সাথে Mammogram করা উচিত। যাদের পারিবারিক ইতিহাস নাই। যার পরিবারে এই ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে তাকে আরো আগে থেকেই স্ক্রিনিং করা উচিত। এছাড়া নিজ নিজ স্তন পরীক্ষা করে থাকতে পারেন নিরাপদ। প্রতি মাসে মাসিক শেষ হওয়ার দশ দিনের মধ্যে গোসলের পর ভেজা অবস্থায় আয়নার সামনে বসে বা দাঁড়িয়ে এই পরীক্ষা করতে হয় করবেন। স্তনের অস্বাভাবিক রং, দাগ, চাকা অনুভব, বা স্বাভাবিক সময়ের থেকে ভিন্ন কিছু বুঝতে পারলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এবং বয়স সত্তরের উপরে হলেও স্ক্রিনিং করতে হবে।
বাংলাদেশে শতকরা এক থেকে তিন ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো ব্রেস্ট ক্যান্সার। আসুন সচেতন হই এবং সুস্থভাবে বাঁচতে চেষ্টা করি।
একুশে টেলিভিশন - আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. শাহনাজ পারভীন - আপনাকেও ধন্যবাদ।