স্থানীয় পর্যায় থেকে যুব নেতৃত্ব তুলে আনতে হবে

জাতীয় যুবনীতি-২০১৭ বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায় থেকে যুব নেতৃত্ব তুলে আনতে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। শনিবার (৩ অক্টোবর) একশন এইড বাংলাদেশ এবং ধুব্রতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ভার্চূয়াল ওয়েবিনারে এ আহ্বান জানান বক্তারা।
 
দেশের নীতিনির্ধারকদের সাথে “জাতীয় যুবনীতি-২০১৭ বাস্তবায়ন-বিভিন্ন যুবকদের উদ্বেগের সম্মোধন” শীর্ষক এ ওয়েবিনারে সংলাপ আয়োজন করে। এতে সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অনলাইনে যুক্ত হন।
 
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর এমপি বলেন, “বর্তমানে আমরা যুব সমাজকে ঠিকমত প্রস্তুত করছি কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের গ্রাম ও শহরে স্কুলে পড়ুয়া যুবদের মধ্যে বিশাল বৈষম্য রয়ে গেছে। লেখাপড়া শেষে তাদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও এ বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকারের চেষ্টা অব্যবাহত থাকলেও এখনো অনেক বৈষম্য রয়ে গেছে। যুব সমাজের মধ্যে যে নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে তা করোনার কারণে আমাদের সামনে চলে এসেছে। যুবকদের নৈতিকভাবে গড়ে তুলতে শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। যুবকদের কাছ থেকে যে প্রত্যাশা তা পূরণে খন্ডিত কর্মপরিকল্পনায় না গিয়ে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।” 

মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, “একটি জাতির আগামীর ভবিষ্যৎ হলো আজকের যুবরা। দেশকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যুবদের আদর্শিক অবস্থানটা ঠিক করতে হবে। যুবদের নৈতিক অবক্ষয় দূর করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে। যুবকদের কীভাবে সাহায্য করা যায় সেটা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। যুবরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদেরকে মুল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার বলেন, “আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের চেয়ে পরীক্ষার্থীতে ভরে গেছে। আমাদের যুবসমাজকে নীতি ও আদর্শবোধের ওপর জোর দিতে হবে। দেশে যে সব নীতি ও আদর্শগুলো বিদ্যমান রয়েছে তা কীভাবে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। জাতীয় যুব কাউন্সিল বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের ওপর বিশেষ করে জোর দিতে হবে।”

সংসদ সদস্য ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য জাকিয়া তাবাস্সুম জুই বলেন, “সরকার চায় যুবরা এগিয়ে আসুক। সরকার চাইলেই তো হবে না যুবদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। যুব উন্নয়নের সব খাতের বিষয়ে সরকারের নজর রয়েছে। আজকে যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে তা আমি আমাদের আগামী স্ট্যান্ডিংকমিটির মিটিংয়ে তুলে ধরব।” 

বিশিষ্ট সমাজ কর্মী ও সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ আরমা দত্ত বলেন, “যুবকদের নিয়ে দেশে যারা কাজ করে তাদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্লাটফর্ম থাকা জরুরি। যুবনীতি বিশ্লেষণ করে এর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।” 

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ জামান খান কবির বলেন, “জাতীয় যুব কাউন্সিল অনেক আগেই করার কথা ছিল। মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা আগামী সপ্তাহের এক সভায় যুব কাউন্সিল বিষয়ে আলোচনা করবে। যুব নেতৃত্বকে উপজেলা থেকে কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় সাংসদের সহযোগিতার প্রয়োজন। যুবদের নিয়ে কাজ করে এমন ২২ হাজার সংগঠনকে নিয়ে আমরা লাইনআপ একশান তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে একটি প্লাটফর্মে মাধ্যমেই যুবদের নিয়ে তারা কাজ করতে পারেন।”

এছাড়াও জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম এবং অধ্যাপক মো. শাহ আজম এতে যুক্ত ছিলেন। 

আলোচনায় যুবনীতি-২০১৭ বাস্তবায়নে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, যুবনীতি সঠিক বাস্তবায়ন, যুব নেতৃত্ব বিকাশে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুবদের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ কাঠামোতে যুবদের অংশগ্রহণ, গ্রামীণ যুবদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও উন্নয়ন, মেধার যথাযথ মুল্যায়ন, বেকারা যুবদের আর্থিক প্রণোদনা, যুব ব্যাংক স্থাপন, উদ্যোক্তা ও যুব ঋণ সহজীকরণের ওপর জোর দেন বক্তারা।

ওয়েবিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন একশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নাজমুল আহসান। জাতীয় যুবনীতি-২০১৭ বাস্তবায়ন-বিভিন্ন যুবকদের উদ্বেগের সম্মোধন শীর্ষক এ ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ধ্রুবতারা ইয়্যুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অমিয় প্রাপন চক্রবর্তী অর্ক।

এনএস/