ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

স্বর্গসুখ পেতে ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটি

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ১৭:৪৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:০৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। পাহাড়, নদী ও লেকবেষ্টিত দেশের বৈচিত্রময় জনপদ এটি। পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠা নির্মল প্রকৃতি দেখলে যে কোনো পর্যটকের মনে হবে যে, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে এটিকে গড়ে তোলেছে। কোথাও কোনো খাদ নেই। একেবারেই অপরূপ সুন্দর। স্বর্গসুখ রয়েছে এতে। এখানে চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, চাক, পাংখোয়া, লুসাই, সুজে সাওতাল, রাখাইন সর্বোপরি বাঙালিসহ ১৪টি জনগোষ্ঠির বসবাস। পাশাপাশি এখানে কিছু অসমীয়া ও গুর্খা সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে।

রাঙ্গামাটির মাটির রঙ লাল কিংবা লালচে। তাই একে লাল মাটির অঞ্চল বলা হয়। রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে- কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে , কর্ণফুলী হ্রদ, পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু, উপজাতীয় যাদুঘর, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, পেদা টিং টিং, টুকটুক ইকো ভিলেজ, শ্রদ্ধেয় বনভান্তের জন্মস্থান, মোরঘোনায় স্মৃতি স্তম্ভ ও স্মৃতি মন্দির (নির্মাণাধীন), পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুল, রাঙ্গামাটি ফুড প্রোডাক্টস, রাইংখ্যং পুকুর, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্য, রাজবন বিহার, ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার রাজবাড়ি, উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেট, রাঙ্গামাটি ডিসি বাংলো, ফুরমোন পাহাড়, রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক প্রভৃতি।

 

পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু

রাঙ্গামাটির শেষপ্রান্তে কর্ণফুলির কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন হোলিডে কমপ্লেক্স। সেখানে পর্যটন মোটেল আছে। বর্তমানে মোটেল এলাকাটি পরিচিতি পেয়েছে ডিয়ার পার্ক নামে। মোটেল থেকে দেখতে পাবেন লাল পাহাড়ের সারি কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু হয়েছে। সেখানো আরও রয়েছে তিনশতাধিক দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু। সেতুটি পরিচিতি পেয়েছে সিম্বল অব রাঙ্গামাটি হিসেবে। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে পার্ক, পিকনিক স্পট, অডিটোরিয়াম, স্পিড বোট ও দেশীয় নৌ-যান। এখানে যেতে হলে প্রথমে ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে তবলছড়ি যেতে হবে। সেখান থেকে প্রায় ১০০ টাকায় অটোরিক্সা ভাড়া করে যেতে পারেন পর্যটন কমপ্লেক্সে।

 

উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেট

রাঙ্গামাটি ভ্রমণে গিয়ে যারা উপজাতিদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনতে চান, অথবা ঘুরে দেখতে চান উপজাতিদের তৈরি পণ্য, তাহলে যেতে পারেন উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেটে। সেখানে উপজাতিদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। এছাড়া আরও পাওয়া যায় উপজাতিদের হস্ত নির্মিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। রাঙ্গামাটি জেলার তবলছড়ির কাছাকাছি গেলেই উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেট। রাঙ্গামাটি থেকে প্রাইভেটকার অথবা অটোরিক্সা ভাড়া করে যেতে পারেন সেখানে।

 

উপজাতীয় জাদুঘর 

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের জীবনাচার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারনা অর্জন করতে চাইলে যেতে পারেন উপজাতীয় জাদুঘরে। সেখানে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের ঐতিহ্যবাহী অলংকার, পোষাক-পরিচ্ছদ, বাদ্যযন্ত্র, ব্যবহার্য তৈজষপত্র, অস্ত্র-শস্ত্র, প্রাচীন মুদ্রা, প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ, পুঁতিপত্র, তৈলচিত্র ও উপজাতীয় জীবনধারার বিভিন্ন আলোকচিত্র। উপজাতীয় জাদুঘরটি সবার জন্যই উন্মুক্ত। রাঙ্গামাটির প্রবেশ দ্বারেই রয়েছে উপজাতীয় জাদুঘর। এখানে যেতে হলে ঢাকা থেকে অথবা চট্টগ্রাম থেকে বাসে যাতায়াত করতে পারেন।

 

চাকমা রাজার রাজবাড়ি

 

ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠান দেখতে অথবা চাকমাদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান দেখতে যেতে পারেন চাকমা রাজার রাজবাড়িতে। নববর্ষের শুরুতেই একসঙ্গে দুটি অনুষ্ঠানই চলতে থাকে। রাজবন বিহার ও চাকমা রাজার বাড়ির মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা হ্রদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে। রাজবন বিহারের পাশেই রয়েছে চাকমা রাজার রাজবাড়ি। সেখানে যেতে হলে প্রথমে রাঙ্গামাটি থেকে অটোরিক্সা অথবা পাইভেটকার করে আপনাকে যেতে হবে কাপ্তাই হ্রদে। সেখান থেকে নৌযানে করে বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবেন।

টুকটুক ইকো ভিলেজ

পাহাড়চূড়ায় তৈরি করা হয়েছে টুক টুক ইকো ভিলেজ। সোখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করবেন হিমেল বাতাসের ঝাপটা। সামনে তাকালেই দেখতে পাবেন স্বচ্ছ পানি। পানির মাঝে জেগে উঠেছে সবুজ পাহাড়। কাপ্তাই হ্রদে নৌভ্রমণ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য চলে যান টুক টুক ইকো ভিলেজের রেস্তরাঁয়। সেখানে রয়েছে রকমারি খাবার। রেস্তরাঁটি তৈরি হয়েছে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে। রেস্তরাঁতে দেশিয় এবং আদিবাসীদের প্রিয় খাবার পাওয়া যায়।

বহু টিলা-উপটিলায় বিভক্ত পর্যটন কেন্দ্রতে থাকার জন্য কয়েকটি কাঠের কটেজ রয়েছে। কটেজের জানালা দিয়ে রাতের আকাশে তাকতেই দেখতে পাবেন চাঁদ যেন মেঘের সঙ্গে খেলা করছে। পাশাপাশি শুনতে পাবেন ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ।

চারদিকে পাহাড়ি ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ-গাছালি ছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশে আড্ডা দেওয়ার জন্য ১৫টি গোলঘর, খেলার মাঠ, কাঠের ব্রিজ রয়েছে। লাগানো হয়েছে নানা রকমের লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, আফ্রিকান গাদা ফুল। রাঙ্গামাটির শহর থেকে চলে যাবেন রিজার্ভ বাজার এবং রিজার্ভ বাজারের শহীদ মিনার এলাকা থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন টুক টুক ইকো ভিলেজ।

পেদা টিং টিং

পেদা টিং টিং চাকমা শব্দগুচ্ছ, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় পেট টান টান। প্রচুর পরিমাণে  খাওয়ার পর পেটের যে টান টান অবস্থা, এখানে তা বোঝানো হয়েছে। হ্রদবেষ্টিত এ স্থানে খাবারের মধ্যে রয়েছে বিগল বিচি, বাঁশের তরকারি, কেবাং প্রভৃতি। হ্রদের চারদিকে দেখতে পাবেন শুধুই পাহাড়। হ্রদ আর প্রকৃতি যেন মিশে গেছে। সেখানে রয়েছে রেস্তোরাঁ ও কটেজ। আরও রয়েছে নৌভ্রমণের ব্যবস্থা। রাঙ্গামাটি শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্যটন স্পট।

 কর্ণফুলী হ্রদ

হ্রদ ও পাহাড়ের অকৃত্রিম সহাবস্থান দেখতে যেতে পারেন রাঙ্গামাটি শহরে। হ্রদের স্বচ্ছ জল আর সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কৃত্রিম এ হ্রদের সঙ্গে কর্ণফুলী, কাচালং আর মাইনী নদীর সংযোগ রয়েছে। কাচালং নদীর উজানে লংগদুর মাইনীমুখে এসে হ্রদের বিস্তীর্ণ জলরাশি যেন মিশে গেছে আকাশের সঙ্গে। এখানে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি অথবা পর্যটন ঘাটে, সেখান থেকে নৌযানে করে গন্তব্যে যেতে পারেন। স্পিড বোট ভাড়া ঘণ্টায় ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। দেশিয় নৌযান ভাড়া ৫০০ টাকা থোকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। নৌ-ভ্রমণের জন্য রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও পর্যটন ঘাটে ভাড়ায় স্পিড বোট ও নৌযান পাওয়া যায়।

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান

পর্যটকরা নদী, পাহাড় আর সবুজের সহাবস্থান দেখতে ভীড় করে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। এখানে রয়েছে সেগুন, পারুল, গামারী আর কড়ই গাছের সারি । রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই ভ্রমণ করতে পারেন এবং কাপ্তাইয়ে থাকা-খাওয়ার জন্য বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে যেতে হলে চট্টগ্রাম থেকে বহদ্দার হতে বাস অথবা মাইক্রোতে কাপ্তাই যাওয়ার আগে জাতীয় উদ্যান গেটে নেমে যাবেন।

 

/ডিডি/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি