ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

স্বাধীনতার স্মৃতি স্মরণ করাতে এলো মার্চ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ০৯:৪৮, ১ মার্চ ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

বছরঘুরে আবার এসেছে বাঙালির স্বাধীনতা ও গৌরবগাথার মার্চ মাস। অগ্নিঝরা ইতিহাস, বিষাদ ও বেদনার মাস মার্চ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে রক্তঝরা মার্চ মাসের রয়েছে এক অন্যরকম আবেদন। এই মাসের ২৫ তারিখ থেকে লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য; যার নাম বাংলাদেশ। 

বাঙালীর জীবনে ভাষা আন্দোলনের স্মারক মাস ফেব্রুয়ারির পর মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এই মার্চেই। একাত্তরের গোটা মার্চ মাসই ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর এ দেশ যে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় এই মার্চেই। 

১৯৭১-এর ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই বজ্রনিনাদ ঘোষণার পর এ দেশের মানুষের বুঝতে বাকি রইল না স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে আর দেরি নেই। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বললেন। শত্রুর মোকাবেলা করার নির্দেশও ঘোষিত হয় তাঁর বজ্রকণ্ঠে।

পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়েছিল। এ দেশের তরুণ-তরুণী, আবালবৃদ্ধবনিতা সেদিন এই একটি কণ্ঠের মন্ত্রমুগ্ধে আবিষ্ট হয়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য যার যার মতো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। 

স্বাধীনতা এবং মুক্তির ঐকতানে জাতি এক হয়। এরই মধ্যে নানা কূটকৌশল চালাতে থাকে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। প্রথমেই তারা নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এভাবেই আসে ২৫ মার্চের কালরাত। পাকিস্তান বাহিনী ভারি অস্ত্র, কামান নিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের নামে এ দেশের ছাত্র, জনতাসহ নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। 

তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে গোটা জাতি। শুরু হয় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম। অসীম ত্যাগ, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান বাঙালীকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এনে দিয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙালী তার মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হয়। অম্লান সেইসব দিন।

নষ্ট রাজনীতি আর একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির কালো ছায়ার বিস্তার ঘটছে। এই অপশক্তির আস্ফালন প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। তারা দেশের উন্নয়ন ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, দেশকে নিয়ে যেতে চায় অন্ধকারের দিকে। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে হবে, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে নতুন করে চিহ্নিত করতে হবে। দেশে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে শীর্ষ কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে বেশিরভাগেরই বিচার শেষের পথে। দেশবাসীর প্রত্যাশা এ বছরই যেন বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশ হয়।

আজ পহেলা মার্চ। জাতির কাছে মার্চ মাস এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উদ্গীরণকারী মাস। এই মাসেই জাতি তার চেতনাকে নতুন করে শাণিত করে। নতুন শপথে বলীয়ান হয়। অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতিবারই আমাদের নতুন করে পথ দেখায়। আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই বীর শহীদদের, যাঁরা স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁদের জীবন দিয়ে প্রতিরোধ সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি