ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বামীর হত্যাকাণ্ড দেখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন জমিলা

প্রকাশিত : ১৭:১৬, ৮ অক্টোবর ২০১৭

চোখের সামনে স্বামীর নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন জমিলা আক্তার (৩০)। পাঁচ শিশু সন্তান নিয়ে প্রাণ বাচাঁতে গত দুই দিন আগে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফের হোয়াইক্যং চাকমারখোল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

অশ্রুসিক্ত নয়নে জমিলা আক্তার জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে বর্বরোচিত নির্যাতন আমাদের উপর চালাচ্ছে তা সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা পাগলের মতো হয়ে গেছি, খাওয়া-দাওয়া, স্বাধীনভাবে নিজেদের মতো চলা, সেই টুকুও হারিয়ে গেছে। বার্মার সেনাবাহিনী আমাদের গ্রাম থেকে অনেক অল্প বয়সী মেয়েকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। যুবক ছেলেদেরকে আটক করে গ্রামের ভিতর সবার সামনে প্রথমে লম্বা দা, দিয়ে আঘাত করার পর গুলি করে হত্যা করে। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে আমার স্বামীকেও সকলের সামনে থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে মেরে ফেলে।

আমরা মংডুর কাউয়ার বিল এলাকায় বসবাস করতাম। আমাদের আশপাশের গ্রামগুলো সেনারা জ্বালিয়ে দিয়েছে শুনে আতংকে ছিলাম। প্রথমে কিছুদিন কোনোরকম না খেয়ে সময় কাটাই। পরে হঠাৎ করে সেনাবাহিনীর একটি দল আমাদের গ্রামে ঢুকে এলোপাতির গুলি করতে থাকে। যাকে পায় তাকে হত্যা করে। আমার সামনে ৫০-৬০ জনের মতো লোককে সেনারা হত্যা করে, নারীদের ধরে নিয়ে যায়। এসব দেখে সেই মগের দেশ থেকে পালিয়ে এসেছি ছোট্ট শিশুদের নিয়ে।

জমিলা আক্তার আরো জানান, আমি এখন বর্তমানে পাঁচ সন্তান নিয়ে কোনো রকম বসবাস করতেছি এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আজকে কিছু অনুদান পেয়েছি। এর আগে ছোট্ট শিশুদের নিয়ে না খেয়ে কোনোমতে ছিলাম। এখন আমি স্বামী হারিয়ে চার মেয়ে এক ছেলে সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ঠিক মতো ত্রাণ পাচ্ছি না। বৃষ্টি হলে পানিতে ভিজতে হয়। নগদ কোনো টাকা পয়ঁসা নেই. কাপড় নেই সব কিছু বার্মায় ফেলে চলে আসতে হয়েছে।

সেই মগের দেশে নির্যাতনের কথা মনে পড়লে চোঁখ থেকে পানি চলে আসে, রাত্রে ঘুমাতে পারি না। একদিকে স্বামী হারানোর বেদনা অন্যদিকে ছোট্ট ছেলে মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাদের সহায়তা করে থাকার জায়গা দিয়েছে। জমিলা আক্তারের সাথে আলোচনা হয় অল্প কিছু ত্রাণ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার মাঝপথে।

জেডএ/ডব্লিউএন

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি