‘স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে কাঠামোগত বণ্টন জরুরি’
প্রকাশিত : ২২:২০, ২৫ জুলাই ২০২০
দেশের স্বাস্থ্য খাতে চলমান অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা দূরীকরণে কাঠামোগত বণ্টন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেইসঙ্গে সরকারি খাত, বেসরকারি খাত ও অলাভজনক সংস্থার মধ্যে বিকেন্দ্রীকরণ ও সমন্বয় প্রয়োজন যার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে।
শনিবার (২৫ জুলাই) বিকালে ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক লিড প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট ড. আখতার মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো অনেক কিছু একীভূত অবস্থায় আছে। অনেক কিছু ঢাকা কেন্দ্রীক হচ্ছে। এই অবস্থা পরিবর্তনে সরকারের ভেতরে বিকেন্দ্রীকরণ হতে হবে অথবা সরকারের বাইরে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে পাবলিক পলিসি মাধ্যমে সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। একেবারে ঢেলে সাজানো হয়তো সম্ভব না। একটু একটু করে পরিবর্তন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে আমরা দেখলাম, অন্য খাতেও দেখি, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যা ব অভিযানে যায়। তাতে হৈচৈ হয় কিন্তু সমস্যাগুলো দূর হয় না। কারণ তারা রেগুলেটর না। আমাদের রেগুলেটরি ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। তরুণ অফিসারদের বিশ্বাস করতে হবে। তাদের ভালো কাজ করার স্পৃহা আছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের পরিচিতিও বেশি।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যখন স্বাস্থ্য প্রশাসনের কথা বলছি তখন তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ফিন্যান্সিং কতটা হবে, ইনইকুয়ালিটি ও এফিসিয়েন্ট ইউজ অব রিসোর্সেস। এই তিনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে কীভাবে সার্ভিস বেশি দেবো সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যারা অতি দরিদ্র তাদের জন্য শুধু হাসপিটাল রাখলে হবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন— ক্যানসার, যক্ষ্মা ও মাতৃসেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আলাদা প্রকল্প দরকার। কারণ পাবলিক হসপিটালে যাওয়ার সামর্থ্যও অনেকের নেই। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কিছু প্রকল্প দেখা যায়, সেই বরাদ্দও যদি ঠিকভাবে ব্যবহার করা হতো তাহলে আউট অব দ্য পকেট খরচ কমানো যেত।’
তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে অতি দরিদ্র যারা তারা স্বাস্থ্য সেবা থেকে দূরে চলে যায়। দরিদ্র হওয়ায় তারা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না। যেখানে তারা বসবাস করেন, সেখানে ভালনারেবিলিটি আছে। যে কোনো দুর্যোগে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং তাদের স্বাস্থ্যের জন্য খরচ করার ক্ষমতা কম। এ রকম একটি পরিবারের মা দুর্বল সন্তানের জন্ম দেন, এভাবেই চলতে থাকে। এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
‘স্বাস্থ্য খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা যেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি সেটা সম্ভব হবে’— বলেন নাজনীন আহমেদ।
লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর সিনিয়র হেলথ ইকোনমিস্ট ড. জাহাঙ্গীর খান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি খাত ও অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা কমপ্লিমেন্টারি ভূমিকা রাখছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যদি একই জায়গায় কাজ করে তাহলে আমাদের অনেক রিসোর্স নষ্ট হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সব সময় আমাদের ক্ষমতার চেয়ে উঁচু মানের বাজেট করা হয়। প্রশ্ন হলো, বাজেট অনুসারে টাকা রেডি থাকে নাকি বলে দিলাম আমরা এই টাকা খরচ করবো, বিষয়টা এমন? এনবিআর বা অন্য খাত থেকে যে টাকা আসার কথা, তা আসে না। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনেও আমরা দেখেছি, এটা একটা বড় ধরনের ব্যর্থতা। বলা হয়, বরাদ্দ দিলেও খরচ হয় না। কেন খরচ হচ্ছে না সেটাও দেখতে হবে। যারা হাসপাতালের চাহিদা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছে, তারা কি দক্ষ? আমি মনে করি, তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। কারণ চাহিদা অনুযায়ী বাজেট আমরা দেখতে পাই না। আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়।’
‘হেলথ সেক্টরের প্রাইভেটাইজেশনকে আমি ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে তুলনা করি। কেউ মার্সেডিজ চড়লে সমস্যা নেই কিন্তু আরেকটা মানুষ যেন বাসে জায়গা পায়’— বলেন জাহাঙ্গীর খান।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট জিয়া উদ্দিন হায়দার। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাপ্তাহিক এই আয়োজন করে আসছে।
টিআই/