ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্য বীমা হোক বাধ্যতামূলক

ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী

প্রকাশিত : ১৭:২৪, ১ মার্চ ২০২৪

চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার জন্য অনেক কারণ রয়েছে। এর একটা হচ্ছে মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচার। যখন কোনো একটা ঘটনা ঘটে, সারা পৃথিবীতেই কিন্তু এমন ঘটনা ঘটছে। কোনো রোগী যখন মারা যায়, হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে নিতে নিতে বা হাসপাতালে নেওয়ার পর রোগী মারা গেল। কিন্তু মিডিয়া যদি তখন নিউজ করে ‘ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু’ তখন খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে এদেশের স্বাস্থ্য খাত পিছিয়ে যায়।

কোনো গ্রামের হাসপাতালেও যদি কোনো ঘটনা ঘটে- অনেক ক্ষেত্রে সেটা দিয়েই গণমাধ্যম দেশের সব হাসপাতালগুলোকে এমনকি পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তুলনা করে থাকে। যা কাম্য নয়। ফলে সাধারণ জনগণের এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়।

আপনারা বিষয়টির খুব গভীরে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত সত্যটি তুলে আনার চেষ্টা করুন। এতে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

এদেশে স্বাস্থ্য খাতে মানুষের কোনো বাজেট নাই। আমরা ঈদে- পূজায় বাজেট রাখি। রমজানে বাজেট রাখি। পোশাক কেনার জন্য বাজেট রাখি। কিন্তু চিকিৎসার জন্য কোনো বাজেট নাই। যখনই কেউ ডায়াবেটিস, প্রেসার বা কিডনি ফেইলিওর হয়ে যায় বা আইসিইউতে ভর্তি হয় তখন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। কারণ চিকিৎসার টাকা নাই। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বীমা একদম ফাঁকা জায়গায় আছে। প্রচলিত যে বীমা সচরাচর সব জায়গায় দেখা যায় সেটা হলো লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতসহ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য বীমা চালু আছে। সেখানে এলআইসি চালু করেছে কার্ডিয়াক প্রিমিয়াম। বছরে একবার ৩ হাজার ৯শ নিরানব্বই রুপী দেবে। বিনিময়ে যদি তার বুকে ব্যথা হয়, হার্টে রিং পরানো হয়, হার্ট সার্জারি লাগে সবকিছু ফ্রি দেওয়া হয়। কেন? কারণ, অনেক মানুষ এটি করছে। ফলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন রোগী।

এদেশে ষোলো কোটির অধিক মানুষ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে যদি কাজে লাগানো যায় অল্প প্রিমিয়াম দিয়ে বিশাল ফান্ড করা সম্ভব। কোনো রোগী যদি জানে আড়াই লাখ টাকার বাইপাস সার্জারিতে তিনি শুধু ওষুধ খরচ ৫০ হাজার টাকা দিলেই হবে এবং বার্ষিক ৫ হাজার টাকার প্রিমিয়াম দিলে হবে তাহলে সবাই এ বীমা করতে উৎসাহী হবে।

রোগী আর চিকিৎসকের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটির অন্যতম কারণ পকেট থেকে নগদ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কিন্তু মেডিকেল বীমার মাধ্যমে চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করা যায়। আমাদের দেশেও এটিকে বাধ্যতামূলক করা হোক। খুব উপকার পাবে সাধারণ মানুষ। ভারতের পিছিয়ে থাকা রাজ্য ত্রিপুরাতেও মানুষ এই স্বাস্থ্য বীমার সুফল ভোগ করছে। আরেকটি বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তার যত মেগা প্রজেক্ট আছে, তারা পিপিপির আওতায় হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দেশের ১০০টি বেসরকারি হাসপাতালকেও যদি পিপিপির আওতায় আনা যায় তাহলে পিপিপি আমাদের ফান্ডিং করে বলে দেবে, চিকিৎসার খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে। এতে সরকারি হাতপাতালের ওপর চাপ কমবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও নিরাপদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ পিপিপি স্বাস্থ্যখাতের অস্থিরতা দূর করতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। 

(ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (সাবেক- আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল)র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের চিকিৎসা সংকট, ডাক্তার রোগীর সম্পর্কের বিষয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার সমস্যা ও সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে কথা বলে গণমাধ্যমে বেশ প্রশংসা পেয়েছেন ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী। সমাজে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্যও খ্যাতি রয়েছে তার।)

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি