স্বাস্থ্যসম্মত শপিং!
প্রকাশিত : ১৮:১২, ১৭ মে ২০২০
শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি। স্বাস্থ্যসম্মত শপিং!! বাক্যটা শুনে নিজেও অবাক হয়েছিলাম। এক বন্ধুর কাছে শোনা, কথায় কথায় জানলাম তার ঈদের কেনাকাটা চলছে। স্বাভাবিক প্রশ্ন....করোনার মধ্যেই!!! ?? উত্তর ছিলো স্বাস্থ্যসম্মত শপিং করছি। তার মতে- দুএকজন না কিনলে ব্যবসায়ীরা চলবে কি করে। মাস্ক-গ্লাভস পড়ে মার্কেটে যাচ্ছেন তিনি, কখনো অনলাইনে পণ্য কিনছেন। ভাবতে বসলাম সবাই কি তা করছে? মনে হয় না- রাজধানী আর রাজধানীর বাইরের শপিংমলগুলোতে গিজগিজ করছে মানুষ, কোনো রকমের সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। মারাত্বক ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক আর শিশুদের ও নেয়া হচ্ছে জনসমাগম পূর্ণ এলাকায়। বাধ্য হয়ে আবার লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। তবে, ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়তো হয়ে যাচ্ছে।
আবার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত তাও ঠিক। স্বল্প আয়ের মানুষের কথা ভেবেই অল্প পরিসরে মার্কেট -দোকান খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কিন্তু আমরা তা মানছি কোথায়! উন্নয়নশীল দেশে দীর্ঘদিন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখা কঠিন ঠিক, তবে জীবনের মূল্য তার চাইতে অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে এবারে ঈদ উৎসবের আমেজ নেই মানুষের মাঝে। কেউ শপিং করছে শুনলেই ভুরু কুঁচকে যাচ্ছে আমাদের, তবুও শপিং হচ্ছে, আমরাই করছি। হয়তো কম হচ্ছে, তবুও হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই প্রাণটা হাতে নিয়ে।
এদিকে কর্মহীন মানুষগুলো যাদের রোজগার অনেকদিন বন্ধ তাদের নিয়ে দ্বিধায় পড়া। দোকান খুলে বসেছেন বেচাকেনা না হলে এভাবে আর কতদিন। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন আপাতত সহজে পিছু ছাড়ছে না করোনা। লকডাউন উঠিয়ে নেয়া আর শিথিলের পথে যেতেই হবে। তাই হয়তো সামনের দিনগুলোতে ’মুভ অন কিম্বা এগিয়ে যাওয়া নীতিতে’ যেতে হবে, তবে-সব সাবধানতা অবলম্বন করেই।
# খুবই প্রয়োজন না হলে মার্কেট বা জনসমাগমে না যাওয়াই উচিত। যেতেই হলে দলবেঁধে নয় একজন যান। মাস্ক-গ্লাভস পড়া, ভিড় এড়ানো, ব্যক্তিগত সকল নিরাপত্তা ও পরিচ্ছনতা মেনে চলুন। ঘরে এসে গোসল ও কেনা পণ্য অবশ্যই জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার করুন।
# অনলাইনে কিছু কিনলে প্যাকেট ও ভেতরের পণ্য স্যানিটাইজড করুন। পণ্য গ্রহণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
# ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখুন। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে পণ্য কেনাবেচা করুন। শপিংমল ও মার্কেটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলে কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।
# প্রতিটি মার্কেট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা ও মেনে চলার অভ্যাস করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে, অযথা ভীড় না বাড়িয়ে দোকান ত্যাগ করা উচিত।
# শিশু ও বয়স্কদের যেকোনো দোকান, মার্কেট, শপিংমল ও জনবহুল জায়গায় নেয়া থেকে বিরত থাকুন।
# ব্যবসায়ীরা দোকান কিম্বা ব্যবসাস্থল নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখুন। চেয়ার-টেবিল, বসার জায়গা প্রতিদিন জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার করুন। দোকানে হ্যান্ডস্যানিটাইজার রাখলে তা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই ব্যবহার করতে পারেন।
# একসাথে এক দোকানে বেশি মানুষ যাতে ভীড় করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা উচিত। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পণ্য কেনার সুযোগ না থাকলে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকুন।
রোগ প্রতিরোধের কথা বার বার বলা হলেও, মূলত পরিবারের সবার এই ক্ষমতা এক থাকে না। তাই যে কেউ যেকোনো সময় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া ব্যক্তির কাছ কাছ থেকে। সবার ভালোর জন্য এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সর্তকর্তা অবলম্বন ছাড়া বিকল্প কিছুই নেই। একই সাথে পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত শপিং না করে, ঈদ পোশাক আর যাকাতের টাকা আশপাশের কর্মহীন, নিন্ম আয়ের আত্মীয় স্বজন কিম্বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়া মানুষকে দেয়া গেলে হয়তো কিছুটা ভারসাম্য হবে।
এমবি//