ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

স্যোশাল মিডিয়া আসক্তি: ভেঙ্গে যাচ্ছে সামাজিক বন্ধন

তানভীরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ২২:১৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৭:৪০, ১৪ নভেম্বর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আমাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একসময় বহু দূরের পথ পাড়ি দিয়ে হলেও মানুষ একে অন্যকে দেখতে আসতো। আবার কোন অনুষ্ঠানের দাওয়াত পৌঁছাতেও যেতো অনেক পথ পাড়ি দিয়ে। আতিথিয়েতা থেকে গল্প, আড্ডা, খুনসুটি ছিল সামাজিক পরিচিত চিত্র।

আর্থিক সংগতি না থাকলেও আন্তরিক বন্ধন ছিল অটুট। আর এখন একটি ফোন কল বা ম্যাসাঞ্জারের মাধ্যমে এক মুহুর্তেই কাজ শেষ। ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক বা হৃদ্যতা তা আগের মতো আর থাকছে না। বিয়ে-শাদি বা বিভিন্ন দাওয়াতও এখন মানুষ সামান্য ম্যাসেজের মাধ্যমে বা ফেসবুক টুইটারের মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছে।

একসময় পরিবারের সবাই মিলে এক সঙ্গে বসে আড্ডা গল্প হতো। আর শিশুরাও এ থেকে অনেক কিছু শিখতো। আর এখন স্যোশাল মিডিয়ায় যুক্ত হয়ে সবাই নিজেদেরকে এতে ডুবিয়ে রেখেছে। ফলে পারিবারিক বন্ধনও দিনে দিনে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। একে অন্যের প্রতি যে ভালোবাসা সেটার পরিবর্তে বাড়ছে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি। এক্ষেত্রে সবচেয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে বিয়ে ভাঙ্গার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্যোশাল মিডিয়া বা ফেসবুক।

স্যোশাল মিডিয়ার ভয়াবহতা থেকে কিভাবে আমরা বের হয়ে আসতে পারি? এমন প্রশ্নে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিজেদেরকে সে আলোকে তৈরি করে নিতে হবে। প্রযুক্তিকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু দেখতে হবে আমি সেটাকে কিভাবে ব্যবহার করছি। আমাদের সন্তানদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। স্যোশাল মিডিয়ার প্রভাব অনেক বেশি। এ থেকে নিজেদেরকেই বের হয়ে আসতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, অনেকেই বলে আমরা এসবকে নির্মূল করবো। কিন্তু কোনো কিছুকেই নির্মূল করা যায় না। হ্রাস করা যায়। এ জন্য নিজেদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সন্তানদের কাছ থেকে কোনো কিছু লুকাতে চাইলে তারা আরও বেশি পরিমাণে সেদিকে ঝুঁকবে। তাদেরকে ভালো মন্দ, কোনটা সঠিক সে বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। পারিবারিক বন্ধন ঠিক রাখতে নিজেদের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সুতরাং নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে কিন্তু সেটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা একটু বেশি জড়িয়ে পড়েছি। অর্থ্যাৎ আমরা আসক্ত হচ্ছি এবং নিজের সামাজিক বন্ধন নষ্ট করে দিচ্ছি। সবকিছু যন্ত্র নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তাই বলে আত্মিক সম্পর্ক নষ্ট করে নয়। একসময় পারিবারিক বন্ধন, খুনসুটি, পারস্পরিক আন্তরিকতা, আড্ডা ছিল আমাদের সমাজের অন্যতম সংস্কৃতি। আর এখন পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমমুখী হয়ে উঠেছে। আধুনিক হতে গিয়ে সবকিছু যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এদেশে মানুষের আন্তরিকতা বা পারিবারিক বন্ধন নিয়ে যে সুনাম ছিল সেটা এখন অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে।

মানুষের সম্পর্কের যে মধুরতা সেটা নষ্ট করে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নেশার মতো স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে সব পেশার মানুষ এখন এ নেশায় আসক্ত। সকাল বিকাল রাত সব সময়ই ফেসবুক, টুইটার, গেমসে আসক্ত হয়ে আছে এক শ্রেনীর মানুষ। এ সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। এর ফলে মানুষ নিমন্ত্রণের কাজও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সারতে চায়। 

হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ফেলে দিয়ে প্রযুক্তিকে এক শ্রেণীর মানুষ আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে, যা পারিবারিক বন্ধনকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলবে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এমন আত্মঘাতি পথ থেকে এখনই আমাদের সরে আসতে হবে। নিজেদের সন্তানদের এবং নিজেদেরকেও এ আসক্তি থেকে সরিয়ে রাখতে হবে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি