ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

স্রষ্টার নৈকট্য লাভের অনন্য উপায় ইতেকাফ

প্রকাশিত : ১৫:০৮, ১৩ জুন ২০১৮ | আপডেট: ২৩:২৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

ইতেকাফ উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের এক অনন্য উপায়। `ইতেকাফ` শব্দের অর্থ হলো এক জায়গায় অবস্থান করা। ইতেকাফ শব্দটা `আকেফীন` হিসেবে কুরআনুল কারীমে এসেছে। ইতেকাফকারীদের মর্যাদার কথা আল্লাহ পাক কুরআনুল কারীমে গুরুত্ব সহকারে বলেছেন।

আল্লাহ `লাওহে মাহফুয` থেকে আয়াত নাযীল করে ইতেকাফকারীর যে মর্যাদার কথা বলেছেন সেটা অনেক বড় মাহাত্মের ব্যাপার। ইতেকাফ পালন করা যেমন ফযীলতপূর্ণ তেমনি ইতেকাফকারীও খুবই সম্মানীয়।

ইতেকাফ সারা বছর করা যায়। একে বলা হয় নফল ইতেকাফ। রোজার নিয়ত করে মসজিদে ঢুকে গেলে একদিন, দু`দিন-যার যেভাবে সম্ভব সেভাবে ইতেকাফ করা যেতে পারে। জঞ্জালের দুনিয়া, টেনসনের দুনিয়া, দু:শ্চিন্তার দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করে দেওয়ার নাম ইতেকাফ। এতে ইতেকাফকারীর আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা আসবে। অশান্তির জগতে তার মনে শান্তি আসবে।

ইতেকাফ হলো দোয়া কবুল হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। ইতেকাফকারী নিজের জন্য,পরিবারের জন্য,  প্রতিবেশীর জন্য,  দেশবাসীর জন্য দোয়া করবেন। এটা সারাবছরই করা যায়।

আরেকটা হলো- ওয়াজিব এতেকাফ। যদি কেউ মানত করে যে, আমার এই মনোবাসনা পূরণ হলে আমি ইতিকাফ করব, সেটা ওয়াজিব হয়ে যায়। এটা হলো ওয়াজিব ইতেকাফ।

আর মাহে রমজানে যে ইতেকাফের সঙ্গে আমরা পরিচিত সেটা হলো সুন্নতি ইতেকাফ। রমজান মাস যদি ত্রিশ দিনে হয় তাহলে ইতেকাফ পড়বে শেষ দশদিন। আর রমজান যদি ২৯ দিনে হয় তাহলে ইতেকাফ পড়বে ৯ দিন। রমজানের শেষ ১০ দিন বা ৯ দিনে পুরুষরা মসজিদে ইতেকাফ করবে। আর নারীরা ঘরের যেস্থানে নামাজ কালাম পরে, সেই স্থানে বসে ইতেকাফ করবে।

আমাদের দেশে আমরা সচরাচর যে ইতিতকাফ করি সেটা হলো সুন্নতি ইতেকাফ। এক্ষেত্রে ২০ রমজানের দিন সূর্যাস্তের আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। কারণ সূর্যাস্তের পর থেকে ২১ রমজান শুরু হয়ে গেল।

আমাদের সবাইকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। এটা অনেকটা মৃত্যুর রিহার্সেল। আমার সংসারে এতো ঝামেলা, এতো সংকট, মেয়েদের বিয়ে হয় নাই, ছেলে চাকরি পাচ্ছে না- সব সাংসারিক চিন্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যায় ইতেকাফে।

সাংসারিক জীবনে টেনশনের কোনো শেষ নাই। আমরা সেসবকে পিছনে ফেলে আল্লাহকে রাজি খুশি করার এক সুবর্ন সুযোগ ইতেকাফ। ইতেকাফকারী সাংসারিক সব ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে ইতেকাফে বসে। এটা একটা ট্রেনিংও বটে। আমি যদি না থাকি সংসার কীভাবে চলবে? এই সময়টাতে তিনি সব প্রকার সাংসারিক, পার্থিব কেজ থেকে বিরত থাকেন। স্ত্রী- কণ্যার সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন।

একজন এতেকাফকারী আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করে দেন। জিকির-ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখেন। ইতেকাফকারী কোরআন তেলাওয়াতকরা, নফল নামায পড়া, তাসবীহ পড়া- এসবে নিজেকে মশগুল রাখেন। এর ফলে প্রচুর সওয়া হচ্ছে, পূণ্য হচ্ছে। অার এতেকাফ দোয়া কবুল হওয়ার জায়গা। এতেকাফকারী নিজের জন্য, নিজের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র- সবার জন্য দোয়া করবেন। দোয়ায় নিজেও উপকৃত হই, যার জন্য দোয়া করি সেও উপকৃত হয়। এর ফলে সবার জীবনে শান্তি অাসে।

আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেও ইতেকাফ করতেন। তিনি বলেছেন, অন্যান্য একাধিক নেক আমলের যে সওয়াব, একটি মাত্র ইতেকাফে এতেকাফকারী সেই পরিমাণ সওয়াব পেয়ে থাকেন।

ইতেকাফ মানব কল্যাণের, মানুষের জীবনের কল্যাণের, ইহকালীন কল্যাণের, পরকালীন কল্যাণের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। তবে এমন যদি পরিস্থিতি হয়, ইতেকাফকারী ব্যাক্তির অবর্তমানে তার পরিবার সংসার সমস্যায় পড়বে, তাদের প্রয়োজন মিটবে না- তাহলে তিনি এতেকাফে আসবেন না। কারণ, ইতেকাফ সুন্নত। কিন্তু সংসারের দায়িত্ব পালন করা ফরজ। সুন্নত পালন করতে গিয়ে ফরজের ত্রুটি করা চলবে না।

লেখক: খতিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি