স্রষ্টার সকল বাণীর চূড়ান্ত রূপ আল কোরআন
প্রকাশিত : ২২:৪৪, ৩০ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ২৩:৪৩, ৩০ মার্চ ২০২৪

আল কোরআন মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে যেমন রয়েছে মানুষের জাগতিক উন্নয়ন ও কল্যাণের দিকনির্দেশনা; তেমনি আছে নৈতিক উন্নতি ও পরকালীন মুক্তির দিশা। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদকে সত্যজ্ঞান, প্রজ্ঞা, হিকমত ও বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গোটা মানবজাতির জন্য তার পক্ষ থেকে প্রেরিত নেয়ামত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এতে ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য লাভের সব দিকনির্দেশনা আছে।
বিশ্বজগৎ সৃষ্টির পর তা পরিচালনা, প্রতিপালন ও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের বিশেষ হিকমতপূর্ণ কিতাব প্রদানের মাধ্যমে কিছু নিয়মনীতি বা বিধান শিখিয়ে দিয়েছেন। সৃষ্টির সময় থেকেই মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এ বিধিবিধান কার্যকর রয়েছে। এই জ্ঞানের দ্বারা মানুষ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বুঝতে পারে। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব আল কোরআন; যা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি নাজিল করা হয়েছে।
৫৭০ খিস্টাব্দে রসুল (সা.) জন্মের সময় মক্কা নগরীর অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। ঐতিহাসিকরা রসুল (সা.)-এর জন্মের আগের ওই সময়কে ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ তথা অন্ধকার যুগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমন সংকট সময়ে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশায় ফেরাতে আল কোরআন নাজিল হয়। রসুল (সা.) হেরা পর্বতে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় আল্লাহর আদেশে জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে সুরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত অবতীর্ণ হয়। এর মাধ্যমেই নবী করিম (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির শুরু। রমজান মাসে লাওহে মাহফুজ থেকে পূর্ণ কোরআন একসাথে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর রসুলের ২৩ বছর নবুয়তের জিন্দেগীতে অল্প অল্প করে কখনো এক আয়াত কখনো একটি সূরা এভাবে পূর্ণ কুরআন রাসূলের কাছে অবতীর্ণ হয়। জিবরাঈল (আ.) যখন আল্লাহর আদেশে রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে ওহি পাঠ করে শুনাতেন, তখন তা নবীজির অন্তরে গেঁথে যেত। আর তিনি তা পরবর্তীতে সাহাবাদের মাঝে প্রচার করতেন। স্রষ্টার সকল বাণীর চূড়ান্ত রূপ আল কোরআন।
অজ্ঞতার কারণেই আমরা অবিদ্যা দ্বারা আক্রান্ত হই
আমাদের আদি পাপ, এক নম্বর পাপ যদি কিছু থাকে সেটা কি? অজ্ঞতা। মহাপাপ যদি কিছু থাকে সেটা হচ্ছে অজ্ঞতা। এই অজ্ঞতার কারণেই আমরা অবিদ্যা দ্বারা আক্রান্ত হই। বাংলার মহামানব আসলে মহামানবরা কোনো বিশেষ স্থানের না, মহামানবরা সমস্ত মানুষের। তো মহামতি বুদ্ধ সেই ২৬০০ বছর আগে বলেছিলেন। যে আমাদের জীবনের যত দুঃখ দুঃখের কারণ হচ্ছে আসক্তি। আসক্তির কারণ হচ্ছে অবিদ্যা।
কোরআনের একটা ছোট্ট আয়াত আছে। আমাদের এখনকার টোটাল অবস্থাটা ঐ ঐ ছোট্ট আয়াতের মধ্যে পরিষ্কার। ১০০ নম্বর সূরা। সূরা আদিয়াত।
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে। তাকাও যারা র্ঊধ্বশ্বাসে ধাবমান। যাদের পদাঘাতে স্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত হয়, যারা অভিযান চালায় ঊষালগ্নে, উৎক্ষিপ্ত ধূলিতে আঁধারে আচ্ছন্ন করে দিগন্ত, (অন্ধভাবে) ঢুকে পড়ে ভিড়ের মধ্যে (তছনছ করে সবকিছু নিজের স্বার্থে)।
১৪০০ বছর পরেও সমাজের অবস্থা একই, শুধু নিজের স্বার্থ...
আমাদের অবস্থা কী? আমরা সব ধাবমান এখন। সব ধাবমান। কিসের পেছনে ধাবমান? নিজের স্বার্থের জন্যে। এবং তছনছ করে দিতে চাই সবকিছুই। শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বুঝি না। কী? আমরা যদি আমাদের চারদিকে মানুষের দিকে তাকাই সে যে পেশারই হোন, তার লক্ষ্যটা কি? শুধু নিজের স্বার্থ। সেই স্বার্থটা অর্থ হতে পারে সম্পত্তি হতে পারে বিপরীত লিঙ্গ হতে পারে খ্যাতি হতে পারে যে-কোনোকিছু হতে পারে।
১৪০০ বছর পরেও যদি আমরা আমাদের সমাজের দিকে তাকাই আমাদের অবস্থাতো এর চেয়ে বাইরে কিছু বলেনা! শুধু নিজের স্বার্থে আমরা সবকিছু করতে পারি। মানে উই ক্যান। একদম অন্ধভাবে যে-কোনো জায়গায় ঢুকে যেতে পারি। আমাদের এই যে এত ব্যস্ততা, সবসময় ধাবমান… কিসের পেছনে ধাবমান? শান্তির পেছনে? জ্ঞানের পেছনে? সেবার পেছনে? না। এবং এরপরের আয়াতে কিন্তু হচ্ছে যে মানে আয়াতে পুরো এটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আসলে মানুষ তার প্রতিপালকের প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ। আর সে নিজেই এর সাক্ষী। কারণ সে ধনসম্পত্তির আসক্তিতে নিমজ্জিত।
অবিদ্যা=মূর্খতা=অজ্ঞতা এটাই হচ্ছে মহাপাপ
আসলে মহামতি বুদ্ধ বলেছিলেন, দুঃখের কারণ হচ্ছে আসক্তি। আসক্তির কারণ অবিদ্যা। অর্থাৎ যথাযথ জ্ঞানের অভাব। এই যে অবিদ্যা=মূর্খতা=অজ্ঞতা এটাই হচ্ছে মহাপাপ।
সেজন্যেই প্রজ্ঞার শুরু হচ্ছে জ্ঞান থেকে। এবং মানুষকে এই জ্ঞানে জ্ঞানী করার জন্যে যুগে যুগে পরম প্রভু নবী-রসুলদের পাঠিয়েছেন মহামানবদের পাঠিয়েছেন তাঁর বাণীবাহকদের পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে এমন কোনো জনপদ নাই, যে জনপদে তিনি তাঁর বাণীবাহক পাঠান নাই। এবং বাণীবাহকের সংখ্যা কত?
এক লক্ষ ২৪ হাজার, কেউ বলেন দুই লক্ষ ২৪ হাজার। কয়জনের নাম আমরা জানি? কোরআনে উল্লেখ যতজন নাম নবীর নাম আছে, যে এই মর্মবাণীতে এটার তালিকা দেয়া আছে যে এতজন নবী। বাকিরা কোথায়? বাকিদের নাম আমরা জানি না।
অতএব যে জনপদে যে মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন অতীতে, তারা যে নবী ছিলেন না রসুল ছিলেন না এটা বলার কোনো কোনো সুযোগ নাই। কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন এমন কোনো জনপদ নাই, যেখানে আমি আমার বাণীবাহক পাঠাই নাই।
ধর্মগ্রন্থের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষকে জীবনের জ্ঞান দান করা
কীজন্যে পাঠিয়েছেন? মানুষকে জ্ঞানী করার জন্যে। কোরআন শরীফের যে প্রথম যে সূরা আয়াত নাজিল হলো। সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত-
‘পড়ো! তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে যিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না’।
আসলে যত ধর্মগ্রন্থ পৃথিবীতে এসছে সে ধর্মগ্রন্থের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, মানুষকে কী করা? মানুষকে জ্ঞান দান করা, জীবনের জ্ঞান দান করা, মানুষকে জ্ঞানী করা। এবং এই জ্ঞানী করাই হচ্ছে ধর্মগ্রন্থের লক্ষ্য, যত ধর্মগ্রন্থ এসছে পৃথিবীতে।
আপনি গীতা পড়েন বাইবেল পড়েন ধম্মপদ পড়েন উপনিষদ পড়েন বেদ পড়েন- সমস্ত ধর্মগ্রন্থের শিক্ষাই হচ্ছে এক স্রষ্টার উপাসনা করো এবং সৃষ্টির কল্যাণ করো, মানুষের কল্যাণ করো, নিজের কল্যাণ করো।
এই যে কল্যাণচিন্তা, স্রষ্টার ইবাদত এবং কল্যাণচিন্তা নিজের কল্যাণ এবং অন্যের কল্যাণ এটাই হচ্ছে সমস্ত ধর্মের শিক্ষা। এবং যত ধর্মগ্রন্থ এসছে পৃথিবীতে স্রষ্টা যত বাণী প্রেরণ করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যে, তার চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে ফাইনাল রূপ হচ্ছে আল কোরআন।
কেআই//