সৎকর্মশীলদের বিষয়ে কুরআন কি বলে!
প্রকাশিত : ১৬:৫৯, ১৯ মে ২০১৯
কুরআন শতাব্দীর পর শতাব্দী জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কোটি কোটি মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে। তাদের বদলে দিয়েছে ভেতর থেকে, খুলে দিয়েছে তাদের সম্ভাবনার দ্বার, দিয়েছে প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত জীবন।
যে সৎকর্ম করে, সে নিজের ভালোর জন্যেই তা করে। আর যে অপকর্ম করে, তার প্রতিফলও সেই ভোগ করবে। কেউ যদি গোপনে দান-খয়রাত, মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করে শান্তি স্থাপনের পরামর্শ দেয়, তবেই তা সৎকাজ। এই জীবনে যারা সৎকর্মশীল তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সেরা ঘোষণা করেছেন।
কুরআনে সৎকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা যা বলেন :
‘প্রত্যেকেরই একটি লক্ষ্য আছে; যা তার কর্মধারাকে পরিচালনা করে। অতএব তোমরা সৎকর্মে (নিজের সঙ্গে) প্রতিযোগিতা করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, আল্লাহ তোমাদের সকলকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা বাকারা ১৪৮)
‘আর আল্লাহর পথে মুক্তহস্তে ব্যয় করো। (মুক্তহস্তে ব্যয় না করে) নিজের হাতে নিজের সর্বনাশ করো না। সৎকর্মে ক্রমাগত লেগে থাকো। কারণ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’ (সূরা বাকারা ১৯৫)
‘তারপর আল্লাহ তাদের পৃথিবীতে পুরস্কৃত করেছেন এবং আখরাতে পুরস্কৃত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান ১৪৮)
‘অধিকাংশ গোপন সলাপরামর্শই মানুষের কোন কল্যাণে আসে না। তবে কেউ যদি গোপনে দান-খয়রাত, সৎকর্ম বা মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করে শান্তি স্থাপনের পরামর্শ দেয়, তবে তা নিশ্চয়ই ভালো। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কেউ যদি তা করে, তাহলে আমি তাকে মহাপুরস্কার দেব।’ (সূরা নিসা ১১৪)
‘কোনো জনপদ ধ্বংস করার আগে আমি সেখানকার বিত্তবান ও প্রভাবশালী লোকদের সৎকর্ম করার নির্দেশ দেই। কিন্তু ওরা আমার আদেশের অবাধ্য হয়ে অন্যায় ও জুলুমে লিপ্ত হয়। তখন ন্যায়সঙ্গতভাবেই আজাবের ফয়সালা হয়ে যায় এবং তারা ধ্বংস হয়।’ (সূরা বনি ইসরাইল ১৬)
‘যারা সাফল্যের সরলপথে চলে, আল্লাহ তাদের সৎপথের উপলব্ধি ও চলার ক্ষমতাকে ক্রমাগত বাড়িয়ে দেন (বাড়িয়ে দেন সৎকর্ম করার আকুতি)। সৎকর্ম তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে স্থায়ী পুরস্কার প্রাপ্তির জন্যে উত্তম, সুফল দানকারী হিসেবেও (শুধু পার্থিব লাভালাভের চেয়ে) অনেক অনেক ভালো।’ (সূরা মরিয়ম ৭৬)
‘আসলে যে সৎকর্ম করে, সে নিজের ভালোর জন্যেই তা করে। আর্ যে অপকর্ম করে, তার প্রতিফলও সেই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের ওপর কখনো জুলুম করেন না।’ (সূরা হা-মিম-সেজদা ৪৬)
‘আর নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্মশীল, তারা সৃষ্টির সেরা।’ (সূরা বাইয়েনাহ ৯৮)
সৎকর্মশীল পুরস্কৃত হবেন :
‘আর হে নবী! যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল তাদের সুসংবাদ দাও জান্নাতের, যার পাদদেশে থাকবে প্রবহমান ঝর্ণাধারা। সেখানে যখন তাদের ফলফলাদি খেতে দেয়া হবে, তখন তারা আনন্দে বলবে, ‘হাঁ, দুনিয়ায় আমরা এ ধরনের ফলই খেতাব।’ সেখানে তাদের সঙ্গে থাকবে পবিত্র সাথিরা এবং সেখানে তারা থাকবে চিরকাল।’ (সূরা বাকারা ২৫)
‘আর যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল, আল্লাহ তাদের যথাযথ পুরস্কার প্রদান করবেন। আল্লাহ জালেমদের অপছন্দ করেন।’ (সূরা আলে ইমরান ৫৭)
‘আর আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, তিনি তাদের ক্ষমা করবেন ও মহাপুরস্কার দেবেন।’ (সূরা মায়েদা ৯)
‘এরপর আমি ইব্রাহিমকে ইসহাক ও ইয়াকুবের মতো সন্তান দিয়েছি। প্রত্যেককে সরলপথ দেখিয়েছি। এর আগে আমি নূহকেও সরলপথ দেখিয়েছি এবং তারই বংশধর দাউদ, সোলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মুসা ও হারুনকে সৎপথ প্রদর্শন করেছি। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করি।’ (সূরা আনআম ৮৪)
সৎকর্মশীলদের বৈশিষ্ট্য :
‘তারা আল্লাহ ও আখেরাতকে বিশ্বাস করে, সৎকর্মে অন্যদের অনুপ্রাণিত করে, অন্যায় করতে নিষেধ করে এবং তারা সাধ্যমতো সৎকর্ম করে। এরাই সৎকর্মশীল।’ (সূরা আলে ইমরান ১১৪)
‘আসলে যারা তাদের প্রতিপালকের (বিরাগভাজন হওয়াকে) ভয় করে, যারা তাঁর বাণীকে বিশ্বাস করে, যারা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না, যারা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে- এই বিশ্বাস নিয়ে কম্পিত হৃদয়ে অন্তর থেকে দান করে, তারাই সৎকর্মে (নিজের সঙ্গে) আসল প্রতিযোগী, তারাই সৎকর্মে অগ্রগামী।’ (সূরা মুমিনুন ৫৭-৬১)
‘প্রজ্ঞাময় কিতাবের এ ঐশীবিধান সৎকর্মশীলদের জন্যে (করুণাময়ের) রহমত ও পথনির্দেশনা। সৎকর্মশীলরা নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে। তারা অন্তরের গভীর থেকে পরকালে জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে। তারা তাদের প্রতিপালকের হেদায়েতের পথে আছে আর সেজন্যে তারাই অনন্ত কল্যাণ লাভে ধন্য হবে।’ (সূরা লোকমান ২-৫)
আল্লাহ আমাদেরকে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সুস্থতা ও অর্থ দিয়েছেন। এগুলোকে সৎকর্মে বিনিয়োগ করি। আল্লাহর পুরস্কার অবধারিত।
এএইচ/