হজের আগে ও পরে যা জানা জরুরি
প্রকাশিত : ১৮:৫৫, ১৫ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৮:২৯, ১৬ জুলাই ২০১৭
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ২৪ আগস্ট। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মুসল্লি পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। ইতোমধ্যেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ গমনেচ্ছুদের ভিসা আবেদন বাংলাদেশস্থ সৌদি আরব দূতাবাসে জমা পড়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজ অফিসার নিয়োগ, প্রশাসনিক ও মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পবিত্র হজ পালনে যারা যাবেন তাদের কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শগুলো হলো-
১। পিআইডি নম্বর জেনে নিন।
২। পাসপোর্টে ভিসা লেগেছে কি না নিশ্চিত হোন।
৩। যথাসময়ে সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল/স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে টিকা গ্রহণ করে মেডিকেল সার্টিফিকেট গ্রহণ করুন। ডায়াবেটিকস, হার্ট বা ক্রনিক রোগীরা প্রেসক্রিপশনসহ অবশ্যই ৫০ দিনের ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
৪। আপনার ফ্লাইট শিডিউল এবং সৌদি আরবে যে হোটেল/বাড়িতে থাকবেন তার ঠিকানা জেনে নিন।
৫। আইডি কার্ড এবং কবজি বেল্ট সংগ্রহ করুন। এগুলো সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে।
৬। জেলা পর্যায়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ঢাকায় আশকোনা হজ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।
৭। টিকিট, পাসপোর্ট, হজ গমনের অনুমতিপত্র, টাকা জমা দেয়ার ডুপ্লিকেট রসিদ, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র সংগ্রহ করে ২ সেট ফটোকপি করে রাখুন।
৮। ১০০০ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে সঙ্গে রাখুন।
৯। পুরুষ হজযাত্রীদের জন্য কমপক্ষে ২ সেট ইহরামের কাপড়, ২ সেট পাজামা-পাঞ্জাবি, ২টি লুঙ্গি, ২টি টুপি, ২টি গেঞ্জি, ২ জোড়া স্যান্ডেল, ২টি তোয়ালে/গামছা, ১টি খাবার প্লেট, ১টি পানির গ্লাস, চিকিৎকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ, ২টি রিডিং চশমা, একটি ছোট কাঁচি, টুথ ব্রাশ, পেস্ট, নাইলনের রশি, নারী হজ যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, বোরকা এবং অন্যান্য ব্যবহার্য কাপড় সঙ্গে নিতে হবে।
১০। প্রয়োজনীয় মালামাল নিজে বহন করার মতো একটি ব্যাগ সঙ্গে নিতে হবে। ব্যাগের উপর পাসপোর্ট নম্বর এবং ঠিকানা লিখতে হবে।
১১। বিমানে ভ্রমণকালে ছুরি, কাঁচি, সুঁই, নেইল কাটার, লাইটার, পেস্ট, স্প্রে, ধারালো এবং তরল জাতীয় জিনিস হাত ব্যাগে নেয়া যাবে না।
১২। হজ যাত্রার তারিখের তিন দিন আগে হজযাত্রীদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে আসতে হবে।
১৩। ফ্লাইটে ওঠার আগেই গাইডের নাম জেনে নিন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
১৪। যে হজযাত্রীরা সরাসরি মক্কায় যাবেন তারা যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে ইহরামের কাপড় পরবেন।
১৫। বিমানে ভ্রমণের সময় চাল, ডাল, শুটকি, রান্না করা খাবার, ফল, তরিতরকারী সঙ্গে রাখা যাবে না।
১৬। হাত ব্যাগের সাইজ হবে- ২২সে.মি.x ১০সে.মি. x১৮ সে.মি.’র মধ্যে। হাত ব্যাগে ৭ কেজির বেশি মাল বহন করা যাবে না।
১৭। জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছে ইমিগ্রেশন শেষ করার পর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ‘শেড’ বাংলাদেশ প্লাজায় অপেক্ষা করতে হবে। সেখান থেকে সৌদি সরকার নির্ধারিত বাসে হোটেলে পৌঁছানো হবে। যাত্রার আগে পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হবে। জেদ্দা বিমান বন্দরের সকল কার্যক্রম সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কোনো কারণে দেরি হলে ধৈর্য ধরুন। জেদ্দা বিমান বন্দরে কোনো সমস্যা হলে বাংলাদেশ প্লাজার কাছেই অবস্থিত হজ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
১৮। মক্কা-মদিনা পৌঁছার পর বাস থেকে নেমে নিজ দায়িত্ব লাগেজ সংগ্রহ করে হোটেল/বাড়ির নির্ধারিত কক্ষে যেতে হবে। লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকার নিয়ম নেই। হোটেল/বাড়িতে রান্না এবং কাপড় ইস্ত্রি করা যাবে না।
১৯। মক্কা-মদিনা পৌঁছার পর মোয়াল্লেম অফিসের দেয়া কার্ড সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে। ওই কার্ডে মোয়াল্লেম অফিসের নম্বর লেখা থাকে।
২০। হজ আফিস থেকে দেয়া বাংলাদেশের পতাকাখচিত ছবিসহ আইডি কার্ড, হাতে লাগানো কব্জি বেল্ট সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে। কেউ হারিয়ে গেলেও এই কার্ড বাংলাদেশ হজ অফিসে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।
২১। হোটেল/বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়ার সময় একা যাবেন না। সব সময় দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করবেন।
২২। তাওয়াফ/সায়ী এবং শয়তানেক পাথর মারার সময় বেশি টাকা পয়সা সঙ্গে নিবেন না।
২৩। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। এতে পায়ে ফোসকা পরতে পারে। রোদ ঠেকাতে ছাতা ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি/ফলের রস পান করবেন। ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না।
২৪। শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালিত ক্লিনিকে যোগাযোগ করুন। সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন।
২৫। জিলহজ মাসের ৭ তারিখ রাতে অথবা ৮ তারিখ সকালে মোয়াল্লেমের বাসে মিনা যেতে হবে। সঙ্গে হালকা কাপড়-চোপড় ও প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা নেবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বাকি টাকা-পয়সা মোয়াল্লেমের অফিসে রেখে রসিদ নেবেন।
২৬। মক্কা থেকে পায়ে হেঁটে মিনা আরাফাতে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
২৭। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার সময় দলবদ্ধভাবে যাবেন। পাথর মারার সময় কখনো স্যান্ডেল খুলে গেলে, পাথর হাত থেকে পড়ে গেলে কোনো অবস্থাতে ওঠানোর চেষ্টা করবেন না। কিছু অতিরিক্ত পাথর রাখবেন। অক্ষম, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের পক্ষে অন্যের দ্বারা পাথর নিক্ষেপ করা যায়।
২৮। মিনা-আরাফাতে নিজের তাঁবু হারিয়ে গেলে হজ অফিসের তাঁবুতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এ জন্য মিনা-আরাফাতের ম্যাপ সঙ্গে রাখুন।
২৯। মিনা-আরাফাতে অবস্থানকালে পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। সবসময় পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। ডায়াবেটিকস রোগীরা সবসময় কিছু খাবার সঙ্গে রাখবেন।
৩০। মিনা-আরাফাতে অবস্থানকালে ধূমপান ও আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকুন।
৩১। মোজদালেফায় অবস্থানের জন্য বাস থেকে নামার পর ফের কখন, কোন জায়গা থেকে বাসে উঠবেন জেনে নিন। মোজদালেফায় দলবদ্ধভাবে অবস্থান করুন।
৩২। নিজে কোরবানি দেয়া কষ্টসাধ্য। কোরবানির টাকা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে জমা দেয়াই সৌদি সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ব্যবস্থা। অন্যথা প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
৩৩। সৌদি আরবে রাস্তা পারাপারের সময় দৌড়াবেন না। ডান-বাম দেখে রাস্তা পার হবেন। সৌদি আরবে গাড়ি ডান দিক থেকে চলে।
৩৪। দেশে ফেরার সময় ৩৬ ঘণ্টা আগে টিকিট ও পাসপোর্ট জমা প্রদান করে বিমানের আসন নিশ্চিত করতে হবে।
৩৫। ফেরার সময় সিটি চেক-ইন হবে। বাংলাদেশ বিমানে দুই ব্যাগে ৪৬ কেজি মালামাল আনা যাবে। কোনো ব্যাগের ওজন ৩০ কেজির বেশি হবে না।
৩৬। জমজমের পানি লাগেজে আনবেন না। ফেরার পথে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে দেওয়া হবে।
৩৭। সৌদি আরবে অবস্থানকালে কোনো প্রকার রাজনৈতিক আলোচনা/মতবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকুন।
৩৮। বর্তমানে সৌদি আরবে মোবাইল সিম সংগ্রহ করতে পাসপোর্টের পেছনে লাগানো নম্বরের প্রয়োজন হবে। সিম কিনতে একটু সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশ থেকে মোবাইল সিম কিনলে প্রতারিত হতে পারেন।
৩৯। হজ সংক্রান্ত যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা/মক্কা/মদিনা/জেদ্দা হজ অফিসে যোগাযোগ করুন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে যে কোনো পরামর্শ/সমস্যা সম্পর্কে জানানো যাবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।