দি ডক্টরস্ (ভিডিও)
হাঁটু-কোমরের কৃত্রিম প্রতিস্থাপনে ৩০ বছর স্বাভাবিক চলাফেরা সম্ভব
প্রকাশিত : ১৬:১৪, ২ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৪:১৯, ৩ এপ্রিল ২০১৮
কোমর ও হাঁটুর জয়েন্ট নষ্ট হয়ে গেলে আক্রান্ত রোগীদের কি যে অসহনীয় অবস্থা হয়, তা একবার দেখলে বিবেককে নাড়া দেয়। তাদের দাঁড়িয়ে মলমূত্র ত্যাগ করতে হয়। শরীরে তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। চলাফেরা করতে পারে না। পরিবারে বোঝা হয়ে দাঁড়ান এসব রোগী। এক সময় আপনজনরাও তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। মলমূত্রের সঙ্গেই তাদের জীবন-যাপন করতে হয়। অথচ এই জটিল রোগটি সম্পর্কে একটু সচেতন হলে রক্ষা পাওয়া সহজ।
একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) ‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানে আজকের আলোচনার বিষয়- ‘হাঁটু ও কোমর প্রতিস্থাপন’।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন- অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন (অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগের চীফ কনসালট্যান্ট, বিশিষ্ট আর্থোপ্লাষ্টি ও ট্রমা সার্জন, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড্ হাসপাতাল)।
‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন- অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ।
শ্রুতিলিখন করেছেন- সোহাগ আশরাফ
প্রশ্ন : হাঁটু ও কোমরের সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। যদিও এই রোগ যেকোন বয়সেই হতে পারে, তবে একটু বেশি বয়সে এর প্রকপ বেশি দেখা যায়। কি মাত্রায় হচ্ছে? কেনো হচ্ছে?
উত্তর : বর্তমানে আমাদের আয়ুষ্কাল অনেক বেড়ে গেছে। আর একটু বয়স বাড়লেই এই রোগটি হবে এটাই স্বাভাবিক। হাঁটু ও কোমরের মধ্যে হাঁটুতে একটু বেশি দেখা যায়। আমাদের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন এসেছে। দিনে দিনে আমাদের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আমরা খুব বেশি যান্ত্রিক হয়ে উঠেছি। আমরা অনেকেই আছি যারা পরিশ্রম আছে এমন কাজ করি না। প্রযুক্তি নির্ভর জীবনব্যবস্থা আমাদের অলস করে দিচ্ছে। তাই দেহ ভারি হয়ে যাচ্ছে।
আমি সব সময় বলি- দেহের প্রত্যেকটি মাংস পেশি চায় আমাকে ব্যবহার করুক এবং আমাকে সচল রাখুক। আর দেহের সব মাংস পেশি সচল রাখলে সুস্থ থাকা সম্ভব।
ফাস্টফুড, ভেজাল খাবার, ওজন বৃদ্ধি, কবিরাজি ওষুধ গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টোরাল এবং মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের কারণে কোমর ও হাঁটুর জয়েন্ট নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন : এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কি করা জরুরী বলে মনে করেন?
উত্তর : শুধু নিয়মিত ব্যায়াম করলেই এই জটিল রোগ থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন : কোমর ও হাঁটুর কৃত্রিম জয়েন্ট বিষয়টি কি?
উত্তর : কোমর ও হাঁটুর কৃত্রিম জয়েন্ট অত্যাধুনিক চিকিৎসার অংশ। এই কৃত্রিম জয়েন্ট মানব দেহের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে যুক্তরাষ্ট্রে টাইটেনিয়াম ইমপ্লান্ট অর্থাৎ এক ধরনের মেটাল দিয়ে কৃত্রিম জয়েন্ট তৈরি করা হয়। এছাড়া জাপানেও তা তৈরি করা হয়ে থাকে। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। কোমর ও হাঁটুতে কৃত্রিম জয়েন্ট প্রতিস্থাপনে রোগী ২০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে। এতে কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। কৃত্রিম জয়েন্ট প্রতিস্থাপনের পর খেলোয়াড়েরাও তাদের খেলাধুলা চালিয়ে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন : যক্ষ্মা রোগ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
প্রশ্ন : কখন কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়?
উত্তর : আঘাত, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, হাড়ের ক্ষয়, হাড়ের টিউমার, অস্থিতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধসহ অন্যান্য অসুখে যখন কোমর বা হাটুর প্রচণ্ড ব্যথা হয়, হাঁটা-চলা বন্ধ হয়ে যায়, যখন অন্যান্য চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায় না, তখন সম্পূর্ণ কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়। ষাটোর্ধ রোগীদের এটা বেশি করা হলেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী কৃত্রিম অস্থিসন্ধি ব্যবহার করে অল্পবয়সী রোগীদেরও আজকাল কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন হচ্ছে।
আরও পড়ুন : চোখের চাপ জনিত গ্লোকমা রোগ ও প্রতিকার
প্রশ্ন : কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপনে খরচ কেমন হয়?
উত্তর : এটা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি। যাতে অপারেশন করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিভাইস বসিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই চিকিৎসায় খরচ পড়ে বিশ-ত্রিশ লাখ টাকা থেকে এক দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। আশার কথা যে, সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশে এই চিকিৎসা এখন সম্ভব হচ্ছে। যাতে খরচ পড়ছে মাত্র এক থেকে দুই লাখ টাকা।
আরও বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিও দেখুন :
এসএ/