ঢাকা, শুক্রবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

হাথুরুকে নিয়ে এতো বিতর্কের কারণ কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২২, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ১৯:২৩, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচের পদ থেকে বিদায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে চণ্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। তাকে 'অসদাচরণের' অভিযোগে নোটিশ জারির সাথে সাথে সাময়িক বরখাস্ত দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। এরপর তাকে বরখাস্ত করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে নতুন কোচ হিসাবে ফিল সিমন্সকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গত পাঁচই অগাস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও পরিবর্তন আসে। ফারুক আহমেদ বিসিবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর থেকেই ইঙ্গিত মিলেছিল যে হাথুরুসিংহের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

দায়িত্ব নেবার পর ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নতুন কিছু দিতে পারবেন কী না সেটি নিয়ে তার সংশয় আছে।

এখন যেসব অভিযোগে হাথুরুসিংহেকে বিদায় নিতে হচ্ছে সেগুলো বেশ গুরুতর। বিশ্বকাপ চলাকালীন জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের গায়ে হাত তোলা, চুক্তির বাইরে যথেচ্ছ ছুটি নেয়া এবং দলের ভেতরে নানা ধরনের গ্রুপিং তৈরির অভিযোগ।

“ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট কোনভাবেই একটা ন্যাশনাল প্লেয়ারকে আপনি করতে পারবেন না। এটার শাস্তি এখন হচ্ছে। এটাই হওয়া উচিত ছিল আগে,” গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ।

তিনি দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেছেন।

বোর্ড সভাপতি বলেন, “দুই তিনটা ঘটনা ঘটেছে সেটা পীড়াদায়ক ছিল আমার জন্য। এসব ঘটনা টিমের জন্য ভালো উদাহরণ ছিলনা।”

এসব বিষয় বিবেচনা করে হাথুরুসিংহেকে শোকজ নোটিস এবং সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ দেয়া হয়েছে।

সেসব নোটিশের উত্তর আসার আগেই অবশ্য হাথুরুসিংহেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তেরর কথা জানান বিসিবি সভাপতি। নতুন কোচ হিসাবে ফিল সিমন্সকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তবে ক্রিকেটারের গায়ে হাত তোলার বিষয়টি হাথুরুসিংহে আগেই অস্বীকার করেন। তিনি তখন বলেছিলেন অযথা বিষয়গুলো নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৫ই ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন শেষে বিষয়টি নিয় প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তখন তিনি বলেছিলেন, 'যারা আমাকে একটু হলেও জানে, তারা জানে এরকম কিছু করার মতো মানুষ আমি কিছুতেই নই।'

সেই অভিযোগ ওঠার প্রায় এক বছর পর হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিসিবি।

কেমন কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহে?
ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামির মতে, টেকনিক্যালি হাথুরুসিংহে ‘খুব ভালো’ একজন কোচ। তিনি বিশ্বের একজন 'টপ রেটেড' কোচ।

হাথুরুসিংহে দুই দফায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ ছিলেন। প্রথম দফায় ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় তিনি আবার কোচ হিসেবে ফিরে আসেন ২০২৩ সালে।

“ এই দুটো সময়ের মধ্যে বেশ বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তিনি টেকনিক্যালি বেশ ভালো একজন কোচ হলেও ওনার সার্ভিস দল কতদিন পেয়েছে? এতো শার্প একজন কোচ যদি বছরে অতিরিক্ত ৬৪ দিন ছুটি কাটান তাহলে উনি প্লেয়ারদের স্কিল টেইনিং কখন করিয়েছেন? ”

মি. সামি বলেন, এটির প্রভাব দেখা গেছে দলের পারফর্মেন্স ওপর। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দলের ব্যাটিং অর্ডারে ব্যর্থতা লক্ষ্য করা গেছে।

ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন কোচের দুটো দিক থাকে। একটি হচ্ছে, দলের সাফল্য। আরেকটি হচ্ছে, ভালো টিম ম্যানেজমেন্ট।

গত এক বছরে এর কোনটিই ভালো করতে পারেননি হাথুরুসিংহে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিশ্লেষক রকিবুল হাসান বলেন, একজন কোচের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খেলোয়াড়দের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা। হাথুরুসিংহের ক্ষেত্রে সেটি ছিলনা বলে উল্লেখ করেন রকিবুল হাসান।

“তিক্ততা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে এটা আর সমাধান করা সম্ভব ছিলনা, ” বলেন রকিবুল হাসান।

একই কথা বলছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক মি. সামি। তার মতে, হাথুরুসিংহে একজন ভালো কোচ, কিন্তু তিনি ভালো ম্যানেজার নন।

মি. সামি বলছেন, দলের কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের অনুরোধে হাথুরুসিংহেকে আবারো কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়।

হাথুরুসিংহে কোচ থাকার সময় ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। এছাড়া একই বছর বাংলাদেশ হোম সিরিজ জিতেছিল ভারত, পাকিস্তান ও সাউথ আফ্রিকার সাথে। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছিল।

কিন্তু এর পুরো কৃতিত্ব হাথুরুসিংহেকে দিতে রাজি নন মি. সামি।

“২০১৫ সালে যেসব প্লেয়ার টপ ফর্মে ছিলেন, যেমন - সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল,মাশরাফি বিন মর্তুজা – তারা কিন্তু এর আগের ১০ বছরের প্রোডাক্ট। তারা তৈরি হচ্ছিলেন আরো ১০ বছর আগে থেকে। ২০১৫ সালে এসে তারা টপ ফর্মে ছিলেন,” বলেন মি. সামি।

“এই প্লেয়ারগুলোর পিক টাইম হাথুরুসিংহে পেয়েছিলেন এবং সেটাকে ক্যাশ করেছেন। কিন্তু হাথুরুসিংহে যখন ২০২৩ সালে আবার ফেরত আসলেন তখন ঐসব প্লেয়াররা তাদের পিক টাইম হারিয়ে ফেলেছেন।”

বোর্ড সভাপতির অপছন্দ?
বিসিবির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ ২০১৫ সালে যখন প্রধান নির্বাচক ছিলেন তখন হাথুরুসিংহে প্রথম দফায় কোচ হিসেবে যোগ দেন। দুজনের মধ্যে তখন থেকে বৈরি সম্পর্ক ছিল বলে কোনও কোনও গণমাধ্যমে খবর হয়েছে।

বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেবার পর ফারুক আহমেদ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে হাথুরুসিংহের চুক্তি নবায়ন করা হবে না।

“ফারুক যখন চিফ সিলেক্টর ছিলেন তখন হাথুরুসিংহে তাকে রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলেনি,” বলছিলেন রকিবুল হাসান।

তবে ফারুক আহমেদ দাবি করেন, হাথুরুসিংহেকে বিদায় দেবার পেছনে ব্যক্তিগত কারণ এখানে প্রভাবিত করেনি। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ একটি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বাংলাদেশের সামনে সাউথ আফ্রিকা সিরিজ আছে। এখন অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য একজন কোচ নিয়োগ করা হয়েছে। নতুন অন্তর্বর্তী কোচ হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্স। বোর্ড সভাপতি জানান, আপাতত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ফিল সিমন্সের সাথে চুক্তি থাকবে।

তিনি বলছেন, বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজ টুর্নামেন্টের কারণে কোচ পাওয়া মুশকিল। কারণ এসব টুর্নামেন্টে কোচরা খুব অল্প সময়ে ভালো আয় করতে পারে।

“এই প্রসেসগুলো খুব সহজ না। এর আইনি দিক থাকে। এটার সাথে জড়িত অন্য কোচ পেতে হয়,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ।

এ বিষয়ে হাথুরুসিংহের সাথে বিবিসি যোগাযোগ করলে তিনি 'এখন এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চান না' বলে জানান। আইনজীবীদের সাথে কথা বলে বিসিবির নোটিশের জবাব দেবেন এবং চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি