ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় গাছের নিচে সন্তান প্রসব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৮, ১৩ আগস্ট ২০১৮

প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন এক নারী। কিন্তু নার্সরা তাকে ভর্তি না করে তাড়িয়ে দেন। অনেক অনুনয়ের পরও একবারও ফিরে তাকায়নি হাসপাতালের কেউ। উপয়ন্তর না পেয়ে গাছের তলায় পিঁপড়ার বাসার উপর সন্তান প্রসব করেন এক মা।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোববার ভোরে সন্তান প্রসবের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় প্রসব ব্যথায় কাতর রিনা পারভীনকে (৩৫)। এ সময় চিৎকার করে ডাকার পরও কোনো সেবিকা বা হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তার সেবায় এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার শত শত মানুষ হাসপাতালটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে তারা অমানবিক আচরণ করা বিশেষত সেবিকাদের শাস্তি দাবি করেছেন। ঘটনার শিকার রিনা পারভীন পার্বতীপুর উপজেলার হামিপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক আবু তাহেরের স্ত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রসব বেদনা শুরু হলে রিনা পারভীনকে গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সে সময় হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। দায়িত্বরত নার্স রোজিনা আক্তার ও আফরোজা খাতুন প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকা রিনাকে চেকআপ না করেই ‘এখানে হবে না’ বলে পার্শ্ববর্তী টিএম হেলথ কেয়ার এমদাদ-সিতারা কিডনি সেন্টারে নিয়ে যেতে বলেন। স্বজনরা অন্তত একবার প্রসূতিকে দেখার অনুরোধ জানালে ওই দুই নার্স তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। একপর্যায়ে প্রসূতি ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে স্বজনরা প্রসূতিকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। কারণ প্রচণ্ড ব্যথায় প্রসূতিকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। এ অবস্থায় স্বজনরা রোগীকে হাসপাতাল চত্বরের পূর্ব পাশে কামরাঙা গাছতলায় তড়িঘড়ি শুয়ে দেন। একপর্যায়ে সেখানেই খোলা আকাশের নিচে এক চা দোকানির স্ত্রীর সহযোগিতায় রিনা পারভীন একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। ঘটনার সময় রিনা পারভীনের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রিপন চিৎকার করে ডেকে ও কাছে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করেও ওই দুই নার্সের মন গলাতে পারেনি। তারা কেউ প্রসূতির কাছে আসেননি। আর প্রসূতিকে যেখানে রাখা হয় সেখানে পিঁপড়ার বাসা থাকায় পিঁপড়ার কামড়ে মা ও শিশুর শরীর ফুলে যায়।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার শত শত মানুষ এসে হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা এমন অমানবিক আচরণের জন্য দোষী নার্সদের শাস্তি দাবি করে। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে দোষীদের শাস্তির নিশ্চয়তা দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বর্তমানে সদ্যোজাত সন্তান নিয়ে মা রিনা পারভীন ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চিকিৎসাধীন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সঞ্চয় কুমার গুপ্ত বলেন, হাসপাতালে কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। তাই অনেক সময় সব চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে নার্সদের খারাপ আচরণের বিষয়টি নিয়ে সকালে আমরা মিটিং করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী নার্সদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছে। দোষী নার্সদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি