হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
প্রকাশিত : ১০:৫০, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।
সম্প্রতি সংস্থাটির লন্ডন প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের বর্ষীয়ান আইনজীবী লিন্ডা স্যামুয়েলস বিশেষ এজেন্ট লা প্রিভোটের সাথে যোগাযোগ করেন এবং দেখেন যে, ৩০০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন এবং বিপুল পরিমাণ নথি হস্তান্তর করেন।
এর পাশাপাশি ১ অক্টোবর বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধিদলের সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মিশাল ক্রেজারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি ইউরোপীয় প্রতিনিধিদল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহর সাথে দেখা করেন। কমিশনের অপারেশনাল সক্ষমতা জোরদার করার জন্য পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার করতে প্রযুক্তিগত সহায়তার পুনর্বিন্যাস নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশনকে জানান, হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগটি অধিকতর তদন্তের জন্য দুদক মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর দুদক মহাপরিচালক মোঃ আখতার হোসেন জানান, হাসিনা, জয়, হাসিনার বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে তথা বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক এবং অন্যরা নয়টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৭ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। যার পৃথক একটি তদন্তও শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
সূত্র জানিয়েছে যে, নয়টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশ্রয়ণ এবং বেপজা ও বেজার অধীনে থাকা অন্যান্য প্রকল্প। ৭ বিলিয়নের মধ্যে শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প থেকেই ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তে ব্রিটেনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তার পরিবারের তালিকায় রাখা হয়েছে। টিউলিপের খালা, বাংলাদেশে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে ব্যাপক তদন্তের মুখোমুখি।
হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পড়ে রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। ১৫ বছরের শাসনের পর হাসিনার নেতৃত্বাধীন কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম নজরে আসে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদের মামলায়।
এফবিআইর তদন্তে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অসদাচরণ প্রকাশ পেয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং লন্ডন ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরিত করার তথ্য বিশেষভাবে সামনে এসেছে।
এফবিআই তাদের লন্ডন প্রতিনিধির মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করেছে এবং গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
বিচার বিভাগের একজন সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি এবং একজন বিশেষ এজেন্ট নিশ্চিত করেছেন যে কেম্যান দ্বীপ এবং হংকংয়ের শেল কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনাটি অনেকাংশে সত্য, আমরা ভবিষ্যতে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে পারি, এ বিষয়ে আমরা পরে সরাসরি কথা বলব।'
বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে সম্প্রতি প্রকাশিত শ্বেতপত্র অনুসারে, কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ শাসনের অধীনে অবৈধ তহবিল প্রবাহের কারণে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার লোকসান করেছে।
সূত্র : গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প
এএইচ
আরও পড়ুন