হাসিনার পিয়ন সেই জাহাঙ্গীরকে নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য
প্রকাশিত : ১০:৪৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১১:০৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) বহুল আলোচিত ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ মো. জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুদক। ব্যাংক হিসাবগুলোতে ৬২৭ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
পাশাপাশি জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রীর বিশাল অঙ্কের অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, আলোচিত পিয়ন জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে ২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুদক উপপরিচালক রাশেদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে সহকারী পরিচালক পিয়াস পাল বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামি জাহাঙ্গীর আলম স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় এবং তিনি ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ভোগ করার মানসে আটটি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা/ক্রেডিট ও জমা করা অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তোলন বা স্থানান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে তার নিজ নামে ও তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। তার আটটি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা হয় এবং ৬২৪ কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৬৭১ টাকা উত্তোলিত হয়। যা দুদকের অনুসন্ধানে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তার হিসাবে জমা হওয়ার পর তিনি তা বিভিন্ন পন্থায় স্থানান্তর করেছেন। যার মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলম তার মালিকানাধীন স্কাই রি এরেঞ্জ নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি চলতি হিসাবে শুধু ২০২৪ সালের (প্রথম ৫ মাসে) ৮৩ দিনে মোট ১৭৮ কোটি টাকা জমা করেন এবং ১৭৮ কোটি ৯৩ টাকা উত্তোলন/ফান্ড ট্রান্সফার করেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়, তিনি নিজ নামে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
জানা যায়, জাহাঙ্গীর ছিলেন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। এক চিত্রনায়িকার গাড়ি চালাতেন। জাতীয় সংসদে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতেও কাজ করেছেন। পরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
জাহাঙ্গীরের নিজের নামে তার এলাকায় কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষিজমি, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান, মিরপুরে সাততলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে চারতলা বাড়ি রয়েছে।
নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুর এলাকায় তার পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি রয়েছে।
এ বছরের ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাসার পিয়ন ছিল, সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।’
জাহাঙ্গীর, তার স্ত্রী ও সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সম্প্রতি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসুলেটে পাওয়ার অফ এটর্নি করানোর জন্য নথি জমা দিতে দেখা গেছে।
এএইচ
আরও পড়ুন