হোজা ও প্রতিবেশী
প্রকাশিত : ১৬:০৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু বা অতি লোভে তাতি নষ্ট এই প্রবাদ বাক্য গুলো আমাদের সবারই জানা। তবে আমরা অনেকেই সেগুলো মনে রাখিনা। লোভে পড়লে এসবই ভুলে যায় মানুষ। আর ভুলে গিয়েই পড়ে বিপদে। এনিয়ে নাসিরুদ্দিন হোজার একটি গল্প প্রচলিত আছে।
হোজা একবার তার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটা হাঁড়ি চেয়ে আনলেন রান্নার জন্যে। কয়েকদিন পর ফেরত দেয়ার সময় ঐ হাঁড়িটার সাথে আরো একটা ছোট হাঁড়ি যখন দিতে গেলেন, প্রতিবেশী তো অবাক। জিজ্ঞেস করল, হোজা, দুটো হাঁড়ি দিচ্ছ যে। হোজা বললেন, তোমার হাঁড়ি তোমাকে দেবো না তো কাকে দেব? প্রতিবেশি বললো, আমার হাঁড়ি! আমি তো একটা হাঁড়ি দিয়েছি। হোজা বললেন, তা ঠিক আছে। কিন্তু হাঁড়িটা একটা বাচ্চা দিয়েছে কি না! মা হাঁড়িটা যেহেতু তোমার, কাজেই এর বাচ্চাটাও তো তোমারই হবে। তাই না?
প্রতিবেশী তো খুশিতে আটখানা। আসলে একটা হাঁড়ি দিয়ে দুটো পাওয়ায় সে এতই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল যে, হাঁড়ি কীভাবে বাচ্চা দেয়-এ প্রশ্ন তার মনে এলোই না। কয়েকদিন পর হোজা আবারো তার বাড়িতে গেলেন হাঁড়ি ধার চাইতে। এবার প্রতিবেশী বেশ অনেকগুলো হাঁড়ি ধরিয়ে দিলো হোজার হাতে। মনে মনে ভাবলো, ইস, এবার প্রত্যেকটা হাঁড়ির সাথে পাবো একটা করে বাচ্চা হাঁড়ি!
এদিকে হাঁড়ি তো আর ফেরত আসে না। অনেকদিন অপেক্ষা করে করে শেষমেশ প্রতিবেশী একদিন হোজার কাছে গিয়ে তার হাঁড়িগুলো ফেরত চাইলো। মুখ খুব ব্যাজার করে হোজা বললেন, দুঃখের কথা কী আর বলবো ভাই। কাল রাতে বাচ্চা দিতে গিয়ে তোমার হাঁড়িগুলো মারা গেছে। প্রতিবেশী বললো, হাঁড়ি আবার মরে কীভাবে? হোজা উত্তর দিল, হাঁড়ি বাচ্চা দেয় যেভাবে। অর্থাৎ যে হাঁড়ি বাচ্চা দিতে পারে, সে হাঁড়ি তো মারাও যেতে পারে।
শেষপর্যন্ত কাজীর দরবারে গিয়েও প্রতিবেশী কোনো সুবিধা করতে পারলো না। কাজীও তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এর আগে হাঁড়ি কি বাচ্চা দিয়েছিলো? প্রতিবেশী বললো, হাঁ। কাজী বললেন, তাহলে যে হাঁড়ির বাচ্চা দেয়ার কথা তুমি নিজেই বিশ্বাস করেছো, সে হাঁড়ি মারাও যেতে পারে সেটাও তো তোমাকে মেনে নিতে হবে।
অতএব সামান্য একটু দেখেই বিশ্বাস করবেন না বা মতামত দেবেন না। পুরোটা দেখুন, জানুন, বুঝুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
বর্তমানে এমএলএম কোম্পানির ফাঁদে যারা পা দিয়েছেন তারাও একই ধরনের লোভে পড়েই। কোনো ধরণের বিচার বিবেচনা না করেই শুধুমাত্র লোভে পড়ে টাকা বিনিয়োগ করেছেন তারা, এবং যথারীতি ধরা খেয়েছেন।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তথা মোল্লা নাসিরুদ্দিনের নাম শোনেননি, ভূ-ভারতে এমন মানুষ বিরল। তাকে কিংবদন্তি বললেও কম বলা হবে। বিশ্বের এমন কোনো প্রান্ত নেই যেখানে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প প্রচলিত নয়। তার জীবন সম্বন্ধে খুব বেশি জানা না গেলেও সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, ত্রয়োদশ শতকে বর্তমান তুরস্কের এসকিসেহির প্রদেশের সিভ্রিহিসার নামের শহরে তার জন্ম। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, তার জন্ম আধুনিক ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের ‘খোয়’ শহরে। এই মতবাদ অনুসারে, পেশায় তিনি ছিলেন বিচারক বা কাজি, এবং ইসলামের নানা নিগুঢ় তত্ত্বে তিনি ছিলেন বিরাট পণ্ডিত। নাসিরুদ্দিনের উপস্থিত বুদ্ধি ও বিজ্ঞতার খ্যাতি দেশ ও কালের সীমানা ছাড়িয়েছে- যদিও কোনো কোনো গল্পে তাকে পাওয়া যায় বোকা ও নেহাতই সাদাসিধে মানুষ হিসেবে। ফলে নাসিরুদ্দিন মহাবুদ্ধিমান নাকি মহাবোকা ছিলেন তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। তবে আসল ঘটনা যাই হোক, নাসিরুদ্দিনের গল্পগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষকে নির্মল আনন্দ জুগিয়ে আসছে। মোল্লা নাসিরুদ্দিনের বিশার গল্পসম্ভার থেকে মজার কয়েকটি এখানে গ্রন্থিত করা হল।
এসবি/