১১১ অবিকৃত মমির রহস্য ভেদ হয়নি আজও
প্রকাশিত : ১৪:৫৩, ২৭ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৩:০৪, ২৯ মে ২০১৮
মমি সব সময়ে যে ‘করা’ হয়, এমন নয়। প্রাকৃতিক কারণেও অনেক সময়ে মৃতদেহ অমরত্ব লাভ করে। সেই উদাহরণ খুব বেশি নয়। কিন্তু মেক্সিকোর গুয়ানাহুয়াতো শহরে এই ‘অসম্ভব’টি রীতিমতো সম্ভব। এই শহরে রক্ষিত ‘স্বাভাবিক’ মমির সংখ্যা ১১১। যেগুলোর কোনোটিতেই পঁচন ধরেনি, অবিকৃত।
গুয়ানাহুয়াতোর মমি মিউজিয়ামের খ্যাতিই এই ১১১টি মমির কারণে। কী করে এবং কোথায পাওয়া গেল এই ১১১টি মমি? জানা গেছে, মেক্সিকোর প্রাচীন আজটেক সভ্যতায় মমিকরণের প্রচলন ছিল। তা নিয়ে গল্প-উপন্যাসও কম লেখা হয়নি। গুয়ানাহুযাতোর এই মিমিগুলি মোটেই আজটেক সভ্যতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এই ১১১টি মমিকে কোনো প্রত্নক্ষেত্র থেকে আমদানিও করা হয়নি। এরা সবাই স্থানীয় মানুষ এবং এরা মমি হয়েছিল ১৮৩০-এর দশকে।
১৮৩৩ সালে গুয়ানাহুয়োতোয় কলেরা মহামারী আকারে দেখা দেয়। এতে এত বেশি মানুষ মারা যেতে থাকে যে, তাদের কবর দেওয়াই দায় হয়ে দাঁড়ায়। কলেরা প্রতিরোধের কারণেও মৃতদেহ দ্রুত সৎকার করাটা জরুরি ছিল। কিন্তু বাধ সাধতে শুরু করে সেই শহরের বারিয়াল ট্যাক্স। কবর দিতে গেলে কবরখানা কর্তৃপক্ষকে একটা মোটা টাকা দিতে হত মৃতের পরিবারকে। এই টাকা একবারে অথবা বার্ষিক কিস্তিতে দেওয়া যেত। কিন্তু যারা দিতে অক্ষম, তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ নিয়ে পড়তে হতো বিপুল দুর্বিপাকে। যারা বেশি টাকা দিত পারত, তাদের পরিজনের মৃতদেহ কবরের জায়গা করে দেওয়া হতো যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদের পরিজনের কবর সরিয়ে।
এই সময়ে লোমিঙ্গো লেরয় নামের এক চিকিৎসক মারা যান। তাঁর মৃতদেহ কবর থেকে তুলে অন্য মৃতদেহকে জায়গা করে দিতে হয়। কবর থেকে তোলার পরে দেখা যায়, তাঁর মৃতদেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এর পরে ওই কবরখানা থেকে আরও মৃতদেহ তুলে দেখা যেতে থাকে, অনেক মৃতদেহই অবিকৃত অবস্থায় থেকে গিয়েছে। এই মৃতদেহগুলিকে নিয়েই গড়ে ওঠে গুয়ানাহুয়াতোর মমি মিউজিয়ামের সংগ্রহ।
কী কারণে এই মৃতদেহগুলোতে পচন ধরেনি, তাই নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আজও তেমন কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। রে ব্র্যাডবেরির মতো যুগন্ধর সাহিত্যিক গুয়ানাহুয়াতোর এই মমিদের নিয়ে লিখেছেন ‘দ্য নেক্সট ইন লাইন’-এ মতো বিখ্যাত ছোটগল্প। মমি মিউজিয়ামকে তাঁর সিনেমায় স্থান দিয়েছেন জার্মান পরিচালক ওয়ার্নার হারজগ।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
/ এআর /