ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

১৩ বছর পর বিশ্বকাপের চূড়ান্ত লড়াইয়ে বাবরের দল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১০, ৯ নভেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৮:১৩, ৯ নভেম্বর ২০২২

জয়ের মুহূর্তে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা

জয়ের মুহূর্তে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা

Ekushey Television Ltd.

একটা সময় সেমিফাইনালে ওঠাই অনিশ্চিত ছিল দলটির। সেই পাকিস্তানই কিনা নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে উঠে গেল চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে। ১৩ বছর পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল বাবর আজমের দল।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সিডনিতে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে ৭ উইকেটে হেরে বিদায় নিলো কেন উইলিয়ামসনের দল।

এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। দলের পক্ষে অর্ধশতক হাঁকান ড্যারিল মিচেল। জবাবে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের জোড়া অর্ধশতকে ভর করে মাত্র ৩টি উইকেট হারিয়ে পাঁচ বল হাতে রেখেই জয়ের প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় পাকিস্তান।

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে মেলবোর্নের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলল বাবর আজমের দল। এর ফলে ২০০৭-সালের পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি হয়ে গেল। 

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেই রোববার মেলবোর্নে জমবে ধুন্ধুমার লড়াই। রোহিত শর্মার দল যে বাড়তি তাগিদ নিয়ে মাঠে নামবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

আর ভারত যদি ফাইনালে ওঠে তাহলে তাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তা হতে চলেছে বাবরের ছন্দে ফেরা। চলতি প্রতিযোগিতায় একেবারেই রান পাচ্ছিলেন না বাবর। যে কারণে দলকেও বার বার ভুগতে হচ্ছিল। ওপেনিং জুটিতে কোনও ম্যাচেই বড় রান ওঠেনি। 

মোহাম্মদ রিজওয়ান তবু দু’-একটি ম্যাচে ভালো খেলেন। কিন্তু বাবরের ব্যাটে রান আসছিল না। সেই অভাব মিটল বুধবার। আসল ম্যাচেই জ্বলে উঠলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। এক সময় ১০ উইকেটে জেতার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। অবশ্য সেটা হয়নি, বাবর অতিরিক্ত মারতে যাওয়ায়।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কেন উইলিয়ামসন। বল করতে নেমে প্রথম ওভারেই নিউজিল্যান্ডকে ধাক্কা দেয় পাকিস্তান। চতুর্থ বলেই ফিরে যান দলের ওপেনার ফিন অ্যালেন। ঘাতক হিসাবে দেখা দিলেন সেই শাহিন আফ্রিদি। তার সোজাসুজি নেমে আসা বল আড়াআড়ি খেলতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন অ্যালেন। লাইন ফস্কান এবং সোজা লেগবিফোর। 

প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ডেভন কনওয়ে এবং কেন উইলিয়ামসন। সেখানেও বাধা। শাদাব খানের দুর্দান্ত থ্রো-তে ২১ রানেই ফিরে যান কনওয়ে। গত বিশ্বকাপে চোটের কারণে খেলতে পারেননি তিনি। এবার আসল ম্যাচেই ব্যর্থ। ঝাঁপিয়ে পড়লে রান আউট হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারতেন হয়তো! কিন্তু সেটা তিনি করেননি।

এবারের আসরে দুর্দান্ত শতক হাঁকানো গ্লেন ফিলিপস খেলতে নেমেছিলেন কনওয়ের পরেই। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ। মোহাম্মদ নওয়াজের আপাত নিরীহ বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিলিপস। যাতে ৪৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে বিপদে কিউয়িরা।

তারপরেও নিউজিল্যান্ড যে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছল, তার পিছনে রয়েছে উইলিয়ামসন এবং ড্যারিল মিচেলের ইনিংস। মিচেলকে দলে নেয়ার জন্য কেন এত তাড়াহুড়ো করছিল কিউয়িরা, তা বোঝা গেল এই ম্যাচেই। 

গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অর্ধশতক হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। এবারও মূল্যবান ইনিংস খেললেন তিনি। তবে দলকে জেতাতে পারলেন না। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে নিউজিল্যান্ডকে আবারও ঝাটকা দিলেন শাহিন। তুলে নিলেন কিউয়ি অধিনায়ককে। 

তারপরেও মিচেলের অপরাজিত ৫৩ এবং জিমি নিশামের অপরাজিত ১৬ রানের সৌজন্যে চার উইকেটে ১৫২ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।

সিডনির এই পিচ কিছুটা ধীরগতির থাকায় লক্ষ্যমাত্রা যে খুব কম ছিল, তা বলা যাবে না। কিন্তু কিউয়ি বোলারদের পাড়ার বোলারদের পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন পাকিস্তানের ওপেনার। 

অনেক দিন ধরেই রিজওয়ান এবং বাবরের ছন্দ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ওপেনিং জুটিতে বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ভালোই খেলেছেন দুজনে। কিন্তু বিশ্বকাপের শুরু থেকে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না বাবর। রিজওয়ান তবুও দু’-একটি ম্যাচে রান করেছেন। আজ আসল ম্যাচেই জ্বলে উঠলেন দু’জনেই।

কিউয়ি বোলিং বিভাগ যে কোনও দলের কাছে আতঙ্কের। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, লকি ফার্গুসন, নিশাম, ইশ সোধি, মিচেল স্যান্টনার- বোলারের কোনও অভাব নেই। কাকে ছেড়ে কাকে বল করাবেন সেটা নিয়েই উইলিয়ামসনকে ভাবতে হয়। 

কিন্তু এদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনও বোলারের জারিজুরিই ধোপে টিকল না। যে-ই বাবর-রিজওয়ানদের সামনে আসছিলেন উড়ে যাচ্ছিলেন। যাতে পাওয়ার প্লে-তেই ৫৫ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান, এই প্রতিযোগিতায় যা তাদের সর্বোচ্চ। তার পরেও দু’জনের থামার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

স্পিনার আসার পর রানের গতি অবশ্য কিছুটা কমে। তার মাঝেই অর্ধশতরান করে ফেলেন বাবর। ফাইনালে নামার আগে নিশ্চিত আত্মবিশ্বাস জোগাবে তার এই ইনিংস। তবে শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকতে পারলেন না তিনি। ১৩তম ওভারে বোল্টের বলে মারতে গিয়ে ফিরলেন মিচেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ততক্ষণে তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করেছে  ৫৩ রান। দলও অনেক ভাল জায়গায়। বাবরের ৪২ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার।

কিছুক্ষণ পরে অর্ধশতরান করে ফেলেন রিজওয়ানও। শেষ দিকে এসে উইকেটকিপার এই ব্যাটার ব্যক্তিগত ৫৭ রানে ফিরলেও দলকে জেতাতে সমস্যা হয়নি মোহাম্মদ হারিস ও শান মাসুদদের। 

এরমধ্যে মোহাম্মদ হারিস ২৬ বলে ৩০ করে আউট হলেও শান মাসুদ অপরাজিত থাকেন ৩ রানে। যার ফলে পাঁচ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটের দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। ম্যাচ সেরা হন ৪৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলা মোহাম্মদ রিজওয়ান।

এদিকে, কাকতালীয় হলেও চরম বাস্তবতা হলো- এ নিয়ে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে চারবারই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই ফাইনালে উঠল পাকিস্তান।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি