ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

১৩ বছরেই সফল উদ্যোক্তা জাফলংয়ের তাহলীল

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

প্রকাশিত : ১৫:১৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৫:৫১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেতপণ্যের সঙ্গে কিশোরী উদ্যোক্তা তাহলীল।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেতপণ্যের সঙ্গে কিশোরী উদ্যোক্তা তাহলীল।

বয়স সবে মাত্র তের বছর। এই বয়সে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, ছোটাছুটি, আনন্দ-ফুর্তি করে দিন কাটানোর কথা। কিন্তু তা না করে পড়াশোনার পাশাপাশি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেতের পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। শুধু দেশেই নয়, সিলেটের ঐতিহ্যকে কাস্টমাইজ করে আধুনিক রূপ দিয়ে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরাই এই কিশোরীর মূল লক্ষ্য।

বলছিলাম- সিলেটের পশ্চিম জাফলং-এর গোয়াইনঘাটের রাজনগর গ্রামে জন্ম নেয়া বিস্ময়কর কিশোরী সৈয়দা তাসমিয়াহ তাহলীলের কথা। সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তাহলীলের বাবা আহমেদ মোস্তাকিন একজন ব্যবসায়ী। মা চৌধুরী ডালিয়া হাসনীন একজন শিক্ষক।

কিশোরী বয়সেই দারুণ বিকশিত তাহলীলের শখ বই পড়া, ছবি আঁকা এবং অ্যানিমেশন তৈরি করা। এই বয়সেই ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর উপরও ঝোঁক রয়েছে তার।

এই কিশোরী বয়সেই কেনও উদ্যোক্তা হতে চায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তাহলীলের বুদ্ধিদীপ্ত জবাব- ‘Don't judge a book by it's cover’। আমার প্রিয় উদ্ধৃতিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রতিটি মানুষই আলাদা এবং তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রগুলোও আলাদা। যদিও সফল হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাদের সকলেরই মাঝে আছে। আমার মাঝেও আছে।

তার কথায়- বর্তমানে ই-কমার্স যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা থেকে বোঝা যায়- ‘ভবিষ্যতে সবকিছুই ই-কমার্স নির্ভর হবে। তাই আমার মনে হয়- আমি একজন উদ্যোক্তা হতে পারলে আমার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারবো। তাই অনেক ভেবে চিন্তে আমি উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটি। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার সবচেয়ে বড় অবদান ফেসবুকের উই গ্রুপ ও রাজীব আহমেদ স্যার’।

তাসমিয়াহ তাহলীলের মতে, তার উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে যে দুটি উদ্দেশ্য কাজ করেছে, তা হলো-
১. নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা ও নিজের পরিচিতি এবং নিজের উদ্যোগকে সবার সামনে নিয়ে আসা।
২. আপন উদ্যোগে মানুষের রুচিশীলতা, শৌখিনতা এবং প্রজন্মের কাছে পরিবেশ বান্ধব ও স্থানীয় দেশীয়
পণ্যের প্রসার।

বিকশিত এই কিশোরী আরও বলে- উদ্যোগ আর ব্যবসা কিন্তু এক না। উদ্যোগে ব্যক্তি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সৃজনশীলতা থাকে, যা ব্যবসায় থাকেনা। মুনাফা লাভ উদ্যোগের মূল বিষয় না। তাই আমি উদ্যোক্তা হতে চাই। আমার উদ্যোগ আমার স্বপ্ন। আমি আমার স্বপ্নের হাত ধরে হাঁটতে চাই। দেশীপণ্যের প্রচারণা ও বিশ্বের বুকে সিলেটকে রিপ্রেজন্ট করতে চাই। পড়াশোনায় আমি যেন পর্যাপ্ত সময় পাই, সেজন্য আমার মা-বাবা আমাকে সর্বোচ্চ সার্পোট দিয়ে যাচ্ছেন।

উদ্যোক্তা জীবনে প্রবেশ করে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে তাহলীলের জবাব- পড়াশোনা আমার খুব পছন্দ, বিশেষত- বই পড়া। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গল্প, উপন্যাস নয়- যে কোনও ধরনের জ্ঞানমূলক বইকেই আমি জানতে ও শিখতে পছন্দ করি। ধাঁধা, সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস, সংস্কৃতি সব বিষয়ে পড়তে আমার ভালো লাগে। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে কল্পনা করি ও সে ক্ষেত্রে কিভাবে তারা সেই সিচুয়েশন গুলোকে সার্ভাইভ করে সেটাও বোঝার চেষ্টা করি। দৈনন্দিন ঘটনা, কল্পনা, থ্রীলার, কমেডি, রহস্যের প্রতিও রয়েছে আমার ব্যাপক আগ্রহ। 

একটা অদ্ভুত অভ্যাসের কথা উল্লেখ করে তাহলীল বলে- আমার একটা অদ্ভুত অভ্যাস রয়েছে। তা হলো- বিভিন্ন নতুন শব্দ, নতুন শব্দের অর্থ, সেগুলোর বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, বাক্য, প্রবাদ-প্রবচন, উদ্ধৃতি আমি লিখে রাখি। অনেকেই তো পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিছুই করে। যেমন- ছবি আঁকা, নাচ, গান বা আবৃত্তি চর্চা। আমি এগুলো না করে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটছি। 

পড়াশোনার পাশাপাশি এক্ষেত্রে কতটা সময় ব্যয় হয় এবং এতে পড়াশোনার কোনও ক্ষতি হয় কিনা- জানতে চাইলে জাফলংয়ের খরস্রোতার মতোই জবাব তাহলীলের, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি সারাদিনে মাত্র তিন ঘণ্টা সময় দেই আমার উদ্যোগে। তাই পড়াশোনার ক্ষতি হয় না। আর আমার মা-বাবাও নিশ্চিন্তে আমাকে এ কাজে যথেষ্ট হেল্প করে থাকে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে চিন্তা-চেতনায় আধুনিক ও প্রগতিশীল এই কিশোরী উদ্যোক্তা জানায়- ‘চিন্তা-চেতনায় আধুনিক ও প্রগতিশীল হলেও আমি নিজের ও নিজের দেশের সংস্কৃতি ও প্রথাকে প্রচণ্ড গুরুত্ব দেই। যার জন্যই সিলেটের হারানো লিপি, নাগরী লিপির প্রতি মমত্ববোধ থেকেই আমার উদ্যোগের নাম নাগরী হাট (Nagri Hut) নামকরণ করি। নাগরী হাট ফেসবুক পেজ-এর মাধ্যমে আমি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেত পণ্য নিয়ে কাজ করি। আমি এ পর্যন্ত নাগরীর হাট পেজের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেত পণ্য বিক্রি করেছি। 

এরইমধ্যে বেত পণ্যের জন্য বেশ প্রসংশিত তাসমিয়াহ তাহলীল বলেন- আমি মূলত অনলাইনেই সময় দেই। আর পণ্য সংগ্রহ ও ডেলিভেরিতে আমার বাবা-মা সহায়তা করেন। আমার ইচ্ছা- সিলেটের বেত পণ্যকে কাস্টমাইজ করে আধুনিক রূপ দিয়ে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরতে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি