ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

১৩ মার্চ ১৯৭১: সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল পূর্ব বাংলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৬, ১৩ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাবহুল মাস। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ এক হটকারী সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার আপামর জনতা। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ২৫ মার্চ পর্যন্ত নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে। 

১৯৭১ সালের ১৩ মার্চ সারা পূর্ব বাংলা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে ছিল উত্তাল। প্রতিদিনের মতো আজও ঢাকাসহ সর্বত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিছিল সমাবেশে ছিল মুখরিত। লাখো মুক্তিকামী বাঙালির উত্তাল আন্দোলন-সংগ্রাম ও সশস্ত্র প্রস্তুতিতে শঙ্কিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। বিরোধী দলের নেতারা পাকিস্তানের অনিবার্য ভাঙ্গন নিশ্চিত বুঝতে পেরে একাত্তরের এদিন জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা না করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম দমনে নিষ্ঠুর পরিকল্পনা নিতে থাকে হানাদাররা।

একাত্তরের মার্চ মাসে যত দিন গড়াচ্ছিল, স্বাধীনতাকামী বাঙালির ঐক্য ততই সুদৃঢ় হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে তখনকার চলমান অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ি ও দৃঢ় একাত্মতা ঘোষণা করছিল বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন। অসহযোগ আন্দোলনের এক সপ্তাহ পর দেশ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের অস্থিত্ব রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা বাংলার দামাল ছেলেদের এই আন্দোলন দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে। পাক স্বৈরাচাররা পূর্ব পাকিস্তানের বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করতে পারে। তারা চারদিকে সতর্কদৃষ্টি রাখতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের বাঘা বাঘা নেতাও শঙ্কিত হয়ে পড়েন। একই দিনে জমিয়াতুল ওলেমা ইসলামিয়া সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা মুফতি মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে তিনটি আহ্বান জানানো হয়। আহ্বানগুলো হলো: (১) পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার, (২) ২৫ মার্চের আগে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং (৩) সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।

একই সঙ্গে প্রতিটি গ্রাম, শহর, বন্দর, নগরে চলতে থাকে তীব্র অসহযোগ আন্দোলন। স্বাধীনতার এই একক একটিমাত্র কেন্দ্রীয় লক্ষ্য সামনে রেখে জাতি চূড়ান্ত পর্বের জন্য তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একাত্তরের উত্তাল সেই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। স্বাধীনতার সপক্ষে দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ। আন্দোলন পরিচালনার মহৎ কাজে তাঁরা নিজেদের একদিনের বেতন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাজপথে মিছিল করে।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি