ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

১৫ই আগস্ট ছিল পুনরায় পাকিস্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার নীলনকশা: পরশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩২, ৩০ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৮:৩৯, ৩০ আগস্ট ২০২১

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ভোরে আমি আমার স্বজনদেরকে হারিয়েছি। মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবা-মায়ের রক্তাক্ত দেহ অতিক্রম করে এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেদিন নিজের জীবন বাঁচাতে, সেই ভয়াল আগস্টে, বিভিন্ন বাসাতে পালাতে হয়েছিল।

সোমবার (৩০ আগস্ট) সকাল ১০টায় সাভার সরকারি কলেজ মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা জেলা যুবলীগ কর্তৃক আয়োজিত ১০০০ অসহায় ও গরীব মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন। 
  
অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান এমপি। প্রধান বক্তা-যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল, বিশেষ অতিথি-বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদ এমপি-সভাপতি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মাহবুবুর রহমান-চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা পরিষদ ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাবু সুব্রত পাল-যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, আবু মুনির মোঃ শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল-সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, হাজী আব্দুল গণি-মেয়র, সাভার পৌরসভা। সভাপতিত্ব করেন-মোঃ সালাহ্ উদ্দিন দরনী-সহ-সভাপতি, ঢাকা জেলা যুবলীগ, সঞ্চালনা করেন-মোঃ মিজানুর রহমান (জিএস মিজান)-সাধারণ সম্পাদক ঢাকা জেলা যুবলীগ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ভোরে সেদিন হারিয়েছিলাম আমার বাবা আপনাদের নেতা ১৯৬০-৬৪ তুখোড় ছাত্রনেতা আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন আন্দোলনের কর্ণধার, মুজিব বাহিনীর প্রধান, একাধারে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিক আপনাদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও আমার মা আরজু মণি সেরনিয়াবাতকে। হারিয়েছি আমার নানা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী পরিষদের সদস্য। সর্বোপরি আমরা সপরিবারে হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

তিনি আরও বলেন, শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকেই নয়, সেই সাথে সেদিন একটি আদর্শ ও মূল্যবোধ্যের সমাধি হতে দেখেছি। কবর দেওয়া হয়েছে দেশপ্রেম ও মেধাভিত্তিক রাজনীতির। এ সকল কারণে এই আগস্ট মাসটা আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হলো সেই নেতা যিনি জন্ম গ্রহণ না করলে প্রিয় মাতৃভূমিও পেতাম না, জাতীয় সঙ্গীতও হতো না। বাংলার শোষিত, নিপীড়িত, মেহনতী মানুষের হাহাকার, দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মধ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাই। তাই ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড না; ১৫ই আগস্ট ছিল পুনরায় পাকিস্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার নীলনকশা। ১৫ই আগস্ট ছিল একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, বাঙালির স্বাধীকারকে অস্বীকার করার প্রয়াস। ১৫ই আগস্ট ছিল আমাদের আত্মপরিচয়ের উপর আঘাত করা। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ করেছিল, ঠিক সেই ভাবে ’৭৫-এ ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্দোষ, নিরীহ, নিরস্ত্র পরিবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘাতকচক্ররা। যেমনটা ১৪ই ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, বাঙালির মুক্তির মহানায়ক যখন ক্ষত-বিক্ষত দেশটাকে পুর্নগঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন ঠিক তখনই ঘটানো হয়েছিল ইতিহাসের নির্মম, জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। জাতির পিতাকে হত্যা করা সহজ নয়, মুজিব অবিনশ্বর, মুজিব চিরন্তন। বঙ্গবন্ধু এদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আজকে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। সামনের বছর দেশবাসী এর সুফল পাবেন ইনশাআল্লাহ। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে নেত্রীর দেখানো পথে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা, আজ আগস্টের এই কর্মসূচি থেকে শক্তি সঞ্চার করে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি করে মানুষের সেবা করার শপথে আবদ্ধ হয়েছে।

জামাত-বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, অপর দিকে জামাত-বিএনপি ষড়যন্ত্র হিসেবে বার বার বেছে নিয়েছে এই আগস্ট মাসকেই। তারা ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। আমাদের রাজনৈতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করার জন্য জামাত-বিএনপি এককভাবে দায়ী। বিএনপি-জামাত প্রমাণ করেছে তারা কোন রাজনৈতিক দল নয়, তারা একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের আর একটি বৈশিষ্ট তারা মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছে; তার প্রমাণ জিয়াউর রহমানের মিথ্যা কবর যা জনগণের সাথে প্রতারণা। ঠিক তেমনি খালেদা জিয়ার ভূয়া জন্মদিনও জনগণের সাথে একটা প্রতারণা। ১৫ই আগস্টের পরে এদেশের নতুন প্রজন্মকে মিথ্যার ইতিহাস পড়ানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে ফেলা হয়েছিল, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যে জয় বাংলা বাঙালি জাতির মুক্তির জয়গান। সেই জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু আমরা বলতে পারি নাই।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান এমপি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সততাই শক্তি, মানবতাই মুক্তি স্লোগান নিয়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আজ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন-বিএনপি-জামাত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা ষড়যন্ত্র ও হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন করোনার মহামারির সময় থেকে আজ পর্যন্ত যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও মহানগরের প্রতিটি নেতা-কর্মী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা করোনার এই সময়ে ফ্রি মেডিসিন সেবা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফ্রি অক্সিজেন সেবা, করোনা আক্রান্ত রোগী ও অন্যান্য রোগীর সেবা, করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন/সৎকার করা, অসহায় কৃষকের জমির ধান কাটাসহ সকল ধরণের মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে যুবলীগ।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন এদেশে জামাত-বিএনপি নামে রাজনৈতিক দল রয়েছে। যাদের নেতা-কর্মীরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মা-বোনদের পাকিস্তানী সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেদিনকার জামাত, আলবদর, আল-শামস্ হচ্ছে আজকের বিএনপি। তারা মিলে-মিশে আমার মা-বোনদের পাকিস্তানীদের বাঙ্কারে তুলে দিয়েছিল। আমার মা-বোনেরা এখানে উপস্থিত আছেন, এই বিএনপি-জামাত এদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখে কি না, আপনাদের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন। 

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করেছে কে? জাতির পিতাকে হত্যা করেছে খুনি জিয়াউর রহমান। আজকে যুবসমাজ শুধু নয়, সারা বাংলাদেশে দাবি উঠেছে জিয়াউর রহমানকে মরোনোত্তর বিচারের দাবি। প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ কোথায় করেছেন? জিয়াউর রহমান যদি মুক্তিযুদ্ধ করতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারতেন না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জামাত-শিবিরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিতো না। গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিতো না, রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানাতেন না, রাজাকার আব্দুল আলীমকে কেন মন্ত্রী বানালো, এটাই শেষ নয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করেছিল খুনি জিয়াউর রহমান। সুতরাং তার কার্যকলাপই প্রমাণ করে জিয়া মুক্তিযোদ্ধা নয়, একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনি।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন-যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সোহেল পারভেজ, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শামছুল আলম অনিক, সহ-সম্পাদক মোঃ রাজু আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ মাতিন মুসাব্বির সাব্বির, সৈয়দ আলাউল ইসলাম সৈকত, নূর হোসেন সৈকত, মোবাশ্বার হোসেন স্বরাজ, ইঞ্জি. মোঃ মুক্তার হোসেন চৌধুরী কামাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অসিম দেওয়ান, জহিরুল আমিন, লিয়ন মোল্লা, আশিক আনাম শুভসহ কেন্দ্রীয়, ঢাকা জেলা ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দ।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি